মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবালের সঙ্গে দেখা করলেন না লেফটেন্যান্ট গভর্নর সাক্সেনা। ফাইল চিত্র।
মেয়র নির্বাচন ঘিরে দিল্লি পুরসভায় আম আদমি পার্টি (আপ) এবং বিজেপি কাউন্সিলরদের সংঘাত নেমে এসেছে রাজপথে। তার জেরে সোমবার থেকে কার্যত অচালবস্থা তৈরি হয়েছে দেশের রাজধানীতে। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল মঙ্গলবার লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনার সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন বলে সরকারি সূত্রের খবর। এই পরিস্থিতিতে দেশের রাজধানী অঞ্চলে নতুন করে রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা।
কেজরীওয়াল সম্প্রতি সাক্সেনার কাছে তার সাম্প্রতিক চিঠিতে, দিল্লির মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের (এমসিডি) প্রিসাইডিং অফিসার এবং অল্ডারম্যানদের পাশাপাশি, হজ কমিটির সদস্যদের মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কেজরীর অভিযোগ, লেফটেন্যান্ট গভর্নর সাক্সেনা দিল্লির নির্বাচিত সরকারকে উপেক্ষা করে একতরফা ভাবে বিভিন্ন পদাধিকারি নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
ডিসেম্বরের গোড়ায় পুরভোটে ২৫০ আসনের দিল্লি পুরনিগমে ১৩৪টি ওয়ার্ডে জিতেছিল কেজরীওয়ালের আপ। ক্ষমতাসীন বিজেপি নেমে আসে ১০৪-এ। ৯টি ওয়ার্ডে জেতেন কংগ্রেস প্রার্থীরা। তবে দিল্লির মেয়র নির্বাচনে সেখানকার রাজ্যসভার ৩ জন ও লোকসভার ৭ জন সাংসদ এবং ১৪ জন বিধায়কেরও ভোটাধিকার রয়েছে। যার অর্থ, মোট ২৭৪টি ভোটের মধ্যে যে দল ১৩৮টি ভোট পাবে, সেই দলের প্রার্থীই মেয়র পদে জয়ী হবেন। অঙ্কের হিসাবে ১৩৪ জন কাউন্সিলর, রাজ্যসভার ৩ জন সাংসদ এবং ১৩ জন বিধায়কের ভোট আপের পক্ষে রয়েছে। অর্থাৎ, সকলে ভোট দিলে ১৫০টি ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচনে আপের প্রার্থীরই জেতা উচিত।
অন্য দিকে, বিজেপি পুরভোটে জেতে ১০৪টি আসনে। পরে এক জন নির্দল কাউন্সিলর বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া লোকসভার ৭ সাংসদ ও এক জন বিধায়কের ভোট পাচ্ছে বিজেপি। সে ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে পুরসভায় এই মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদীর দলের শক্তি ১১৩। কিন্তু অঙ্কের হিসাবে জয় অসম্ভব হলেও পদ্ম-শিবির মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ায় নতুন করে অশান্তি তৈরি হয়েছে দিল্লিতে।
শুক্রবার অধিবেশনের সূচনায় বিতর্ক তৈরি হয় দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভিকে সাক্সেনা মনোনীত তদারকি স্পিকার সত্য শর্মার ভূমিকায়। বিজেপি নেতা সত্য মেয়র ভোটের আগে মনোনীত পুর সদস্যদের (অল্ডারম্যান) নাম শপথগ্রহণ করাতে গেলে বাধা দেন আপ সদস্যেরা। দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর আগেই ১০ জনকে মনোনীত সদস্য হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই এ কাজ করছেন বলে অভিযোগ তুলেছিল আপ।
ভোটে জয়ী আপ সদস্যদের শপথের আগেই শুক্রবার সত্য, এক মনোনীত সদস্যকে শপথ নিতে ডাকলে সভায় তৈরি হয় প্রবল উত্তেজনা। সোমবার আপ নেতৃত্ব প্রশ্ন তোলেন দিল্লি সরকারকে এড়িয়ে কী ভাবে লেফটেন্যান্ট গভর্নর ১০ জন অল্ডারম্যান নিয়োগ করে তাঁদের মেয়র নির্বাচনের ভোটাধিকার দিতে পারেন।
গত শুক্রবার যুযুধান দু’তরফের কাউন্সিলরদের হাতাহাতির জেরে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল দিল্লি পুরসভায় মেয়র নির্বাচন। প্রতিবাদে সোমবার বিজেপির সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছিল আপ। তার ‘জবাবে’ আপ প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের বাড়ির সামনে বিক্ষোভের ডাক দেয় বিজেপি। প্রায় ২,০০০ বিজেপি নেতা-কর্মী কেজরীওয়ালের বাড়ির দিকে মিছিল করে যেতে চাইলে তাদের পথ আটকায় পুলিশ। তৈরি হয় উত্তেজনা। উত্তেজিত বিজেপি কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ।