(বাঁ দিকে) হেমন্তের স্ত্রী দুর্গাবতী। হেমন্ত শর্মা (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
স্ত্রীর হাতখরচ দিনে দিনে বেড়েই চলেছিল। আর তাতেই অতিষ্ঠ হয়ে স্ত্রীকে খুন করার পরিকল্পনা করলেন স্বামী। শুধু তা-ই নয়, পরিকল্পনামাফিক দুই বন্ধুকে আড়াই লক্ষ টাকা দিয়ে সেই কাজ করানোর দায়িত্বও দিয়েছিলেন। তবে খুন এমন ভাবে করার পরিকল্পনা করেছিলেন, যাতে সেই ঘটনাটিকে যেন দুর্ঘটনা বলেই মনে হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হল কি?
গত ১৩ অগস্ট মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রের ঘটনা। অতিরিক্ত হাতখরচের জন্য স্ত্রী দুর্গাবতীকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে হেমন্ত শর্মা নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই ঘটনার দশ দিন পর তদন্তে আসল ঘটনাটি প্রকাশ্যে এসেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, দুর্গাবতী হেমন্তের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। দুর্গাবতীর সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই হেমন্তের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ২০২১ সালে অন্যত্র বিয়ে হয় দুর্গাবতীর। অন্য দিকে, হেমন্তও ২০২২ সালে বিয়ে করেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক চলছিলই।
কিন্তু ২০২৩ সালে স্বামীকে ছেড়ে তাঁর পুরনো প্রেমের টানে চলে আসেন দুর্গাবতী। হেমন্তকে বিয়েও করেন। কিন্তু বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যেই দুর্গাবতী আর হেমন্তের সম্পর্ক তিক্ত হতে শুরু করে। জেরায় হেমন্ত পুলিশকে জানিয়েছেন, বিয়ের পর থেকেই দুর্গাবতীর হাতখরচ বেড়ে চলেছিল। সেই টাকা দিতে তিনি হিমশিম খাচ্ছিলেন। হতাশা এবং ক্ষোভে দুর্গাবতীকে খুন করার পরিকল্পনা করেন হেমন্ত। স্ত্রীকে খুন করার জন্য দুই বন্ধুকে দায়িত্ব দেন। ১৩ অগস্ট দুর্গাবতী এবং তাঁর ভাই সন্দেশকে নিয়ে মন্দিরে পুজো দিতে যান হেমন্ত। দুর্গাবতী এবং সন্দেশ একটি বাইকে করে গিয়েছিলেন। আর হেমন্ত অন্য একটি বাইকে। মন্দির থেকে ফেরার পথে একটি এসইউভি দুর্গাবতীদের বাইকে পিছন থেকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। ঘটনাচক্রে, ওই এসইউভি চালাচ্ছিলেন হেমন্তেরই এক বন্ধু। সেই দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন দুর্গাবতী। চিকিৎসা চলাকালীন হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় একটি অজ্ঞাতপরিচয় গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন হেমন্ত। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই গাড়ির খোঁজ শুরু করে। হেমন্তের দেওয়া বর্ণনা মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দেখা যায়, হেমন্ত যে গাড়ির কথা বলেছেন, তেমন কোনও গাড়িই ওই পথ দিয়ে যায়নি। ফলে হেমন্তের প্রতি সন্দেহ বাড়ে পুলিশের। হেমন্তের পারিবারিক জীবন কেমন ছিল তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করা হয়। সেথান থেকেই কয়েকটি সূত্র পায় পুলিশ। আর সেই সূত্র ধরে হেমন্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই আসল ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ জানতে পারে, স্ত্রীর হাতখরচে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁকে খুন করিয়েছেন হেমন্ত। তিনি নিজেও সে কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন বলে এক তদন্তকারী আধিকারিকের দাবি। তার পর সেই ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা বলে চালানোর পরিকল্পনাও করেন। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। হেমন্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু তাঁর দুই বন্ধু এখনও পলাতক।