বিষ খেয়ে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী কৃষক। প্রতীকী ছবি।
পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। কিন্তু আশানুরূপ দাম না পেয়ে আত্মঘাতী হলেন মহারাষ্ট্রের পুণের এক কৃষক। বিষ খেয়ে পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। যাওয়ার আগে শেষ চিঠিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন পেঁয়াজকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) আওতায় আনতে এবং সেই দাম যাতে কৃষকরা পান, তা নিশ্চিত করতে। একেবারে শেষে মোদীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানিয়ে গিয়েছেন দশরথ কেদারি নামে ওই কৃষক।
গত শনিবার, পুণের জুন্নার তহসিলের ওয়াডগাঁও আনন্দ গ্রামের বাসিন্দা দশরথ প্রথমে বিষ খেয়ে তার পর পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ। রেখে যান একটি চিঠি। স্থানীয় থানার এক আধিকারিক প্রমোদ ক্ষীরসাগর জানিয়েছেন, দশরথ পেঁয়াজের চাষ করেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে ফসল মার খায়। এর আগে সয়াবিন এবং টমেটো চাষ করেও লাভের মুখ দেখতে পাননি দশরথ।
ক্ষীরসাগর বলেন, ‘‘দশরথ একটি সমবায় থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। সুইসাইড নোটে ওই কৃষক প্রধানমন্ত্রী মোদীকে পেঁয়াজের এমএসপি দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, এখন চাষ করার অর্থ জুয়া খেলা।’’
ওই পুলিশ আধিকারিক জানান, দশরথ নিজের সুইসাইড নোটে লিখেছেন, ‘আজ আমি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছি তার কারণ আপনার নিষ্ক্রিয়তা। দয়া করে আমাদের প্রাপ্য দামের নিশ্চয়তার ব্যবস্থা করুন।’ চিঠির শেষে নিজের নাম সই করার পর প্রধানমন্ত্রী মোদীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন দশরথ। তার পর বিষ খেয়ে পুকুরে ঝাঁপ দেন তিনি। পুকুরে নামার আগে নিজের জামাকাপড়ের ভাঁজে চিঠিটি রেখে গিয়েছিলেন দশরথ। ঘটনার পর দশরথের এক আত্মীয় চিঠিটি পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ চিঠিটিকে হস্তরেখা বিশারদের কাছে পাঠাচ্ছে।
চিঠিতে ওই কৃষক ঋণপ্রদানকারী সমবায়ের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করে গিয়েছেন। পাশাপাশি, দাবি করেছেন, আজকের বাজারে কৃষকের চেয়ে বড় জুয়াড়ি আর কেউ নেই।
শিবসেনার কৃষক সংগঠনের নেতা চিঠিটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন। মৃত কৃষক দশরথের বাড়িতেও গিয়েছিলেন তিনি। মহারাষ্ট্রে প্রতি বছর যে ভাবে অন্নদাতা কৃষকরা আত্মহত্যা করেন, তা বন্ধ করতে ফসলের উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
প্রতি বছরই মহারাষ্ট্র-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফসলের মূল্য না পেয়ে আত্মহত্যা করেন কৃষকরা। প্রতিটি এমন ঘটনার পরই ফসলের দাম নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেয় সরকার। কিন্তু কৃষকের অবস্থা বদলায় না। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে আত্মঘাতী হওয়া পুণের কৃষক দশরথ, তা-ই আরও এক বার বুঝিয়ে গেলেন।