গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের পরিসর ছাড়িয়েছে আগেই। এ বার চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে পড়তে চলেছে ‘চন্দ্রযান-৩’। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-র তরফে জানানো হয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় চাঁদের আকর্ষণক্ষেত্রের মধ্যে ঢুকে পড়ার কথা তার। পরের ধাপে চাঁদের আকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে তার চারপাশে পাক খেতে খেতে ক্রমশ গতি কমিয়ে ‘চন্দ্রযান-৩’ চলে আসবে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে। ঘটনাচক্রে, শনিবারই চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখা আমেরিকার মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রংয়ের জন্মদিন।
ইসরোর তৃতীয় চন্দ্রাভিযানের সবচেয়ে কঠিন পর্ব তার পর। ২৩ অগস্ট সন্ধ্যা ৫টা ৪৭ মিনিট নাগাদ রোভার প্রজ্ঞানকে পেটের ভিতরে নিয়ে ‘পাখির পালকের মতো অবতরণ’ (সফট ল্যান্ডিং) করার কথা ল্যান্ডার বিক্রমের। চার বছর আগে ঠিক ওই পর্যায়ে এসে ব্যর্থ হয়েছিল ইসরোর ‘চন্দ্রযান-২’ অভিযান। গত ১৪ জুলাই দুপুর ২টো ৩৫ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের ‘লঞ্চিং প্যাড’ থেকে সফল উৎক্ষেপণ হয়েছিল ‘চন্দ্রযান-৩’-এর। ইতিমধ্যে মোট পাঁচ বার সফল ভাবে কক্ষপথ পরিবর্তন করেছে ইসরোর এই মহাকাশযান।
ইসরো সূত্রের খবর শনিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ কক্ষপথ বদলে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণের আওতায় পৌঁছে যাওয়ার কথা ‘চন্দ্রযান-৩’-এর। কিন্তু চূড়ান্ত সাফল্যের জন্য পাড়ি দিতে হবে আরও অনেকটা ‘পথ’। যদি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ‘চন্দ্রযান-৩’ থেকে ল্যান্ডার বিক্রম সফল ভাবে চাঁদের মাটি ছুঁতে পারে এবং তার পরে রোভার প্রজ্ঞানকে সঠিক ভাবে অবতরণ করাতে পারে, তবে ভারতীয় মহাকাশ অভিযানের ইতিহাস নতুন মাত্রা পাবে। সে ক্ষেত্রে গত এক দশকে চিনের পর আরও কোনও দেশের মহাকাশযান সফল ভাবে চাঁদে অবতরণের নজির গড়বে। আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের পরে চতুর্থ দেশ হিসাবে তালিকায় ঠাঁই পাবে ভারত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অঙ্কের ভুলে যদি ‘চন্দ্রযান-৩’ শেষ পর্যন্ত চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছতে না পারে, তবে তা আবার ঘুরে চলে আসবে পৃথিবীর কক্ষপথে। কিন্তু সেখান থেকে তাঁকে আবার চাঁদে পাঠানোর মতো জ্বালানি আর থাকবে না। সে ক্ষেত্রে ‘চন্দ্রযান-৩’-কে ‘লস্ট মিশন’ বা ব্যর্থ অভিযান বলেই ধরে নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে কি ‘চন্দ্রযান-৩’ পৃথিবীর কক্ষপথেই চিরকাল ঘুরে যাবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তখন ইসরোর প্রয়াস হবে, পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে ‘চন্দ্রযান-৩’-কে ভূপৃষ্ঠে ফেরানো।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৭ জুলাই চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে ‘সিমপেলিয়াস এন’ এবং ‘ম্যানজিনাস সি’ নামে দু’টি গহ্বরের মাঝখানে ‘চন্দ্রযান-২’ থেকে ল্যান্ডার বিক্রম অবতরণের চেষ্টা করেছিল (এ বারও অবতরণ হবে দক্ষিণ মেরু অঞ্চলেই)। কিন্তু তা সফল হয়নি। পেটের মধ্যে রোভার প্রজ্ঞানকে নিয়ে অবতরণের তিন মিনিট আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল বিক্রম। মাস তিনেক ধরে বিক্রমের ধ্বংসাবশেষের অনবরত খোঁজ চালিয়েছিল আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। কিন্তু কোনও ভাবেই তা চিহ্নিত করতে পারেনি তারা। শেষমেশ ‘লুনার রিকনাইস্যান্স অরবিটার’ (এলআরও)-এর তোলা একটি ছবি শেয়ার করে বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্য চায় নাসা। সেই ছবি দেখে চেন্নাইয়ের এক জন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বিক্রমের ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত করেন।