মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কতটা সত্যি, তা খতিয়ে দেখতে বলা হল লোকসভার এথিক্স কমিটিকে। মঙ্গলবার লোকসভা স্পিকার ওম বিড়লা এই নির্দেশ দিয়েছেন। কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়ার বিরুদ্ধে নিজের সাংসদ পদের বাড়তি সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ এনেছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। ঘটনাচক্রে, যে এথিক্স কমিটি এই বিষয়টি দেখবে, তার মাথায় রয়েছেন বিজেপিরই সাংসদ। ১২ সদস্যের ওই কমিটিতে নেই তৃণমূলের কোনও প্রতিনিধি।
নিশিকান্তের দাবি, লোকসভায় কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রশ্ন করার বিনিময়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উপহার এবং আর্থিক উপঢৌকন পাচ্ছেন মহুয়া। তদন্তে তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কমিটি বসানোর পাশাপাশি তাঁকে সাংসদ পদ থেকে সাসপেন্ড করারও প্রস্তাব দেন দুবে। রবিবার থেকে শুরু হওয়া ওই বিতর্কের পর মঙ্গলবার পদক্ষেপ করলেন লোকসভার স্পিকার।
রবিবারই এ বিষয়ে স্পিকারকে চিঠি লিখে অভিযোগ জানিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত। তাঁর অভিযোগ ছিল, দুবাই-কেন্দ্রিক ব্যবসায়ীর থেকে নেওয়া অর্থ এবং উপহারের বিনিময়েই লোকসভায় প্রশ্ন করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া। অন্য দিকে, আইনজীবী অনন্ত দেহাদরিও মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সিবিআই প্রধানকে চিঠি দেন। দু’জনেরই দাবি ছিল এক। তাঁদের বক্তব্য, ব্যবসায়ী দর্শন হিরনানদানির থেকে অর্থ, উপহার নিয়ে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন মহুয়া। নাম জড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহেরও। যার পাল্টা জবাবও দিয়েছিলেন মহুয়া।
রবিবার সন্ধ্যায় ওই চিঠির খবর ছড়িয়ে পড়তেই এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে মহুয়া পর পর তিনটি পোস্ট করেছিলেন। প্রথম পোস্টে তিনি লেখেন, ‘‘আদানি গোষ্ঠী যদি আমাকে চুপ করানোর জন্য বা আমাকে টেনে নীচে নামানোর জন্য সঙ্ঘবাদী আর ভুয়ো ডিগ্রিওয়ালাদের মিথ্যা দলিলে বিশ্বাস করবে বলে ঠিক করে থাকে, তবে আমি বলব, আপনাদের সময় নষ্ট করবেন না, বরং আপনাদের আইনজীবীদের ভাল কাজে ব্যবহার করুন।’’ পরে সাসপেনশনের প্রস্তাব নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করে মহুয়া লেখেন, ‘‘এই সব ভুয়ো ডিগ্রিওয়ালা এবং বিজেপির তথাকথিত প্রাজ্ঞদের বিরুদ্ধে বহু সুবিধা লঙ্ঘনের অভিযোগের বিচার হওয়া এখনও বাকি আছে। আমার বিরুদ্ধে যে কোনও প্রস্তাব আপনারা সংসদে আনতেই পারেন। তবে আশা করব, তার আগে মাননীয় স্পিকার আগে ওই বাকি থাকা বিষয়গুলির বিচার করবেন।’’
শেষে তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ দায়ের করার প্রসঙ্গে মহুয়া লেখেন, ‘‘আমি সিবিআইকেও স্বাগত জানাচ্ছি। তারা আমার বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপের অনুসন্ধান করতে পারে। কিন্তু তার আগে আদানির সমস্ত অর্থ কোন পথে সমুদ্রের ওপারে পৌঁছচ্ছে চালান আর বেনামি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে, সেটাও তাদের খুঁজে বার করতে হবে।’’
প্রসঙ্গত মহুয়ার বিরুদ্ধে লোকসভার স্পিকারকে লেখা চিঠিতে দুবে অভিযোগ করেছিলেন, লোকসভায় সাম্প্রতিক কালে যে ৬১টি প্রশ্ন মহুয়া করেছেন, তার মধ্যে ৫০টিই আদানি গোষ্ঠী সংক্রান্ত। যদিও আদানির বিরুদ্ধে একা মহুয়া নন, কংগ্রেস-তৃণমূল-সহ বহু রাজনৈতিক দলই প্রশ্ন তুলেছে। দুবের দাবি, মহুয়া ওই প্রশ্ন করেছেন উপহারের নামে পাওয়া ‘ঘুষ’-এর বিনিময়ে। এই মর্মেই মহুয়ার বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১২০এ ধারায় ফৌজদারি অপরাধ, সংসদের কক্ষের অবমাননা, সুবিধা লঙ্ঘনের মতো অভিযোগ এনেছিলেন তিনি।