আকাশপথে বায়ুসেনার প্রদর্শন। ছবি: রয়টার্স।
গোটা দেশ পালন করছে ৭৬তম সাধারণতন্ত্র দিবস। দিল্লির কর্তব্যপথ থেকে কলকাতার রেড রোড— কুচকাওয়াজের বিশেষ প্রদর্শন মুগ্ধ করেছে দেশবাসীকে। ভারতীয় সেনার তিন বাহিনীর নানা কলাকৌশল নজর কেড়েছে। দিল্লির কর্তব্যপথে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ-সহ বহু অতিথি। তেমনই রেড রোডেও সাধারণতন্ত্র দিবস পালন করলেন বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দিল্লির রাইসিনা হিলসের উপরে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত যে রাস্তা, তার নামই কর্তব্যপথ। দিল্লিতে সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ হল সেই পথে। রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে কর্তব্য পথে পালিত হল ৭৬তম সাধারণতন্ত্র দিবসের কর্মসূচি।
প্রতি বছর সাধারণতন্ত্র দিবসে, বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রধান অতিথি হিসাবে ভারত কুচকাওয়াজে আমন্ত্রণ জানায়। এই বছরও তার অন্যথা হয়নি। এ বছর ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি প্রবোও সুবিয়ান্তোকে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও, এ বারের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রায় ১০ হাজার অতিথি হাজির ছিলেন কর্তব্য পথের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে।
আকাশে রাফালের গর্জন, মাটিতে বাইকে সেনার কারসাজি— সব মিলিয়ে সাধারণতন্ত্র দিবসে জমজমাট অনুষ্ঠান হল কর্তব্য পথে। ২০২৫ সালের সাধারণতন্ত্র দিবসের থিম ‘স্বর্ণিম ভারত, ঐতিহ্য ও উন্নয়ন’। ৩১টি ট্যাবলো প্রদর্শিত হল কর্তব্য পথে। তার মধ্যে ১৬টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ট্যাবলো সাংস্কৃতিক বৈচিত্র প্রদর্শন করল। এ ছাড়াও, কেন্দ্রের ১০টি মন্ত্রক নিজেদের ট্যাবলো নিয়ে হাজির ছিল কর্তব্য পথে।
কর্তব্য পথে এ বার বাংলা তুলে ধরেছিল ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’কে। হরিয়ানার প্রদর্শনে জায়গা পেয়েছিল ভগবদ্গীতা। সকলের নজর কেড়েছে উত্তরপ্রদেশের ট্যাবলো। এ বার তাদের ট্যাবলো তুলে এনেছে মহাকুম্ভকে। এ ছাড়াও গুজরাত, পঞ্জাব, বিহার, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, গোয়া, হরিয়ানার মতো রাজ্যগুলিও নিজেদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে তুলে ধরেছে তাদের ট্যাবলোতে।
এ বারের সাধারণতন্ত্র দিবসে সামরিক শক্তি প্রদর্শন করল ‘ব্রহ্মস’, ‘পিনাক’ মিসাইল। ডিআরডিও-র তৈরি ভূমি থেকে ভূমি ক্ষেপণাস্ত্র ‘প্রলয়’ এই প্রথম বার কুচকাওয়াজে প্রদর্শিত হল দিল্লিতে। এ বার সাধারণতন্ত্র দিবসে অন্যতম আকর্ষণ ছিল পাঁচ হাজার শিল্পীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গোটা কর্তব্য পথ জুড়ে শিল্পীরা একসঙ্গে অনুষ্ঠান করলেন। ৩০০ জন শিল্পী গলা মেলালেন ‘সারে জহাঁ সে অচ্ছা...’ গানে।
দিল্লির পাশাপাশি কলকাতার রেড রোডেও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হল। রেড রোডের কুচকাওয়াজে ছিল ‘রোবট কুকুর’। রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
এ বারের রেড রোডের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা, বিশেষত জঙ্গলমহলের ছেলেমেয়েরা। মহড়ায় আদিবাসী নৃত্য পরিবেশন করেন জঙ্গল মহলের পড়ুয়ারা। একই ভাবে আলিপুরদুয়ারের চা-বাগানের শিল্পীরা নৃত্যানুষ্ঠান করেন। লোকশিল্পীরা এসেছিলেন রেড রোডে। সুন্দরবন থেকেও দল এসেছিল। সব মিলিয়ে সাধারণতন্ত্র দিবস উদ্যাপনে মাতল দেশের বিভিন্ন প্রান্ত।