মণিপুরের প্রতিবাদ মিছিলের একটি ছবি। ছবি: পিটিআই।
গোষ্ঠীহিংসায় দীর্ণ মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানো এবং নির্যাতন করার ভিডিয়ো (আনন্দবাজার অনলাইন এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি) নিয়ে ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে দেশে। এ বার ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সে রাজ্যের চূড়াচাঁদপুরে মিছিল বার করলেন জনজাতি গোষ্ঠীভুক্ত মহিলারা। বৃহস্পতিবারের মিছিল থেকে ওই ঘটনার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানানো হয় এবং উপযুক্ত বিচার চাওয়া হয়। মণিপুর প্রশাসনের আশঙ্কা, এই মিছিলের জেরে নতুন করে অশান্ত হতে পারে রাজ্য।
বুধবারেই মণিপুরের একটি সংগঠন মিছিলের ডাক দিয়েছিল। ইম্ফল বাজারের মহিলা ব্যবসায়ীদের নিয়ে তৈরি ওই সংগঠন রাজ্যে এনআরসির দাবি তুলেছে। মিছিল থেকে নতুন করে অশান্তি ছড়িয়ে পড়তে পারে, এমনটা আশঙ্কা করেই মূলত কুকি এবং মেইতেই অধ্যুষিত জেলাগুলিতে ইতিমধ্যেই কার্ফু আবারও আঁটসাঁট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে রাজ্যের সরকার। তার পর বৃহস্পতিবারের এই মিছিল এবং ওই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সাবধানতায় কোনও ফাঁক রাখতে চাইছে না সে রাজ্যের প্রশাসন।
বুধবার সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়োয় দেখা যায়, দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানো হচ্ছে। পরে তাঁদের শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ছবিটি গত ৪ মে তোলা বলে দাবি মণিপুর পুলিশের। থৌবল জেলায় নংপোক সেকমাই থানার অদূরে ওই দুই মহিলার উপর হামলা হয় বলে অভিযোগ। যদিও একটি সংগঠনের দাবি, ঘটনাটি কঙ্গপকপি জেলার। বিরোধীদের দাবি, ঘটনার কয়েক দিন পরেই এ নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হলেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
দুই নির্যাতিতার এক জন ইতিমধ্যেই গত ৪ মের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, খুনের ভয় দেখিয়ে দুষ্কৃতীরা সে দিন তাঁদের জনসমক্ষে পোশাক খুলতে বাধ্য করেছিল। সেই ঘটনা নিয়ে গত ১৮ মে কঙ্গপকপি জেলার বি ফাইনম গ্রামের প্রধানের সাহায্যে ওই জেলারই সাইকুল থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন নির্যাতিতা।
বুধবার ওই ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরেই ‘সক্রিয়’ হয়েছে বিজেপি শাসিত মণিপুরের পুলিশ। সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন ঘটনার মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে। অপরাধীদের যাতে মৃত্যুদণ্ডের সাজা হয়, তা নিশ্চিত করব আমরা।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত ব্যক্তি থৌবল জেলার বাসিন্দা। গত আড়াই মাস ধরে মণিপুরের ধারাবাহিক হিংসা নিয়ে মুখ না খুললেও বৃহস্পতিবার দুই মহিলাকে নির্যাতনের ঘটনার নিন্দা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাদল অধিবেশনে যোগ দিতে সংসদ ভবন চত্বরে পৌঁছে তিনি বলেন, ‘‘মণিপুরের ঘটনা যে কোনও সভ্য সমাজের পক্ষে লজ্জার। ওই ঘটনার জন্য দেশের ১৪০ কোটি মানুষের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে।’’ দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ঘটনায় তিনি ব্যথিত এবং ক্রুদ্ধ বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।