মণিপুরের রাজ্যপাল অনুসুইয়া উইকে (ছবিতে বাঁ দিকে) এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মণিপুরে প্রায় তিন মাস ধরে চলা জাতিগত হিংসা থামাতে প্রয়োজনে সাহায্য করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মণিপুর সফররত তৃণমূলের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলকে এমনটাই জানিয়েছেন সে রাজ্যের রাজ্যপাল অনুসুইয়া উইকে। তৃণমূলের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের তরফেই এই খবর পাওয়া গিয়েছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার বিদায়ী সাংসদ সুস্মিতা দেব এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, মণিপুরের রাজ্যপাল তাঁদের বলেছেন যে, মণিপুরে শান্তি ফেরাতে সাহায্য করতে পারেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “মণিপুরের রাজ্যপাল আমাদের কথা মন দিয়ে শুনেছেন। উনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইলে মণিপুরের মানুষদের সাহায্য করতে পারেন।” সুস্মিতা এ-ও জানিয়েছেন যে, সে ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি রাজ্যপালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন অনুসুইয়া। তাঁদের সঙ্গে রাজ্যপালের দীর্ঘ সময় কথা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সুস্মিতা।
বুধবার সকালে মণিপুরের উদ্দেশে রওনা দেয় তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। দলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের নেতৃত্বাধীন দলে ছিলেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, দোলা সেন, কাকলি ঘোষদস্তিদার এবং রাজ্যসভার বিদায়ী সাংসদ সুস্মিতা। মণিপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। বুধবার দুপুরে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা কুকি জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাহাড়ি চূড়াচাঁদপুর জেলার পাশাপাশি, মেইতেই জনগোষ্ঠী প্রভাবিত ইম্ফল উপত্যকার কয়েকটি ত্রাণশিবিরও পরিদর্শন করেন। পরে তাঁরা মণিপুরের রাজ্যপালের সঙ্গেও দেখা করেন। মণিপুর সফরের অভিজ্ঞতা জানিয়ে প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা রিপোর্ট আকারে তুলে দেবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। এই প্রসঙ্গে প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য সুস্মিতা বলেন, ‘‘ত্রাণশিবিরগুলিতে বেশ কিছু অব্যবস্থা আমাদের নজরে এসেছে। বিশেষত, হিংসায় ঘরছাড়া পরিবারগুলির শিশুরা খুবই কষ্টে রয়েছে। আমরা সব পক্ষের সঙ্গেই কথা বলব। কোনও বিতর্ক চাইছি না।’’
গত মাসে মণিপুর সফরে গিয়ে চূড়াচাঁদপুর যাওয়ার সময় বাধার মুখে পড়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তবে বুধবার কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি তৃণমূলের প্রতিনিধি দলকে। সুস্মিতা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে আরও কিছু সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁরা দেখা করবেন। বিকেলে ফিরে আসবেন কলকাতায়। গত ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই বিজেপি শাসিত রাজ্যে। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই কুকি, জ়ো-সহ বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই হিংসার সূচনা হয় সেখানে। এখনও পর্যন্ত প্রায় দু’শো মানুষের মৃত্যু এবং ৫০ হাজারের বেশি গৃহহীন হয়েছেন। সুস্মিতা বলেন, ‘‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিনিধি দল পাঠানোয় মণিপুরের বাসিন্দারা খুশি। কিন্তু তাঁদের প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মণিপুরের হিংসা প্রসঙ্গে এখনও মুখ খোলেননি কেন।’’ যদিও বৃহস্পতিবার সকালে মণিপুর নিয়ে প্রথম বারের জন্য মুখ খুলে প্রধানমন্ত্রী মোদী দুই মহিলাকে নির্যাতনের ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মণিপুরের ঘটনা যে কোনও সভ্য সমাজের পক্ষে লজ্জার। ওই ঘটনার জন্য দেশের ১৪০ কোটি মানুষের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে।’’