জ্ঞানবাপী মসজিদ। ফাইল চিত্র ।
জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে তথাকথিত ‘শিবলিঙ্গের’ পূজার্চনা চালু এবং নমাজ বন্ধের জন্য হিন্দু পক্ষের আবেদনের রায় ঘোষণা করল না বারাণসী ফাস্ট ট্র্যাক আদালত। দেওয়ানি বিচারক মহেন্দ্র পান্ডে আগামী বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) পর্যন্ত রায় ঘোষণা স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেছেন সোমবার।
জ্ঞানবাপী মসজিদের ওজুখানায় থাকা ‘শিবলিঙ্গ’-এর পুজো করার অনুমতি চেয়ে বারাণসী জেলা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল হিন্দু পক্ষ। আর হিন্দু পক্ষের করা সেই আবেদন নিয়েই সোমবার রায় দেওয়ার কথা ছিল আদালতের। প্রসঙ্গত, বিশ্ব বৈদিক সনাতন সঙ্ঘের সভাপতি জিতেন্দ্র সিংহ বিসেনের স্ত্রী কিরণ সিংহ বারাণসী আদালতে এই আবেদনটি করেছিলেন। মামলার সরকারি কৌঁসুলি সুলভ প্রকাশ সোমবার বলেন, ‘‘গত ২৭ অক্টোবর মামলার শুননি শেষ হয়ে গিয়েছিল। ৮ নভেম্বর রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছিল আদালত। আজ আবার সেই সময়সীমা তিন দিন বাড়ানো হয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, ২০২১-এর অগস্টে জ্ঞানবাপীর ‘মা শৃঙ্গার গৌরী’ (ওজুখানা ও তহখানা-সহ) এবং মসজিদের অন্দরের পশ্চিমের দেওয়ালে দেবদেবীর মূর্তির অস্তিত্বের দাবি করে এবং পূজার্চনার অনুমতি চেয়ে বারাণসী আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল পাঁচ হিন্দু মহিলা। কিরণ তাঁদেরই অন্যতম। তাঁর আবেদনে, ‘শিবলিঙ্গ’ পুজোর অনুমতির পাশাপাশি পুরো জ্ঞানবাপী মসজিদ হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়ার এবং সেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে।
পুজোর আবেদনের পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্টে বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদের মধ্যে থাকা ‘শিবলিঙ্গের’ নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদনও করেছিল হিন্দু পক্ষ। গত ১১ নভেম্বর সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী নির্দেশের সময়সীমা আবারও বাড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। গত ১৭ মে, বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিয়েছিল, নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নির্দেশ দিতে পারে বারাণসীর আদালত। কিন্তু কোনও ভাবেই বন্ধ করা যাবে না মসজিদে নমাজ পড়া। সেই অন্তর্বর্তী নির্দেশের সময়সীমা গত শনিবার শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তী নির্দেশ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট তা বহাল রাখার কথা জানায় গত শুক্রবার। পাশাপাশি, গত শুক্রবার শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, তথাকথিত ‘শিবলিঙ্গের’ সুরক্ষার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আর্জি জানিয়ে হিন্দু পক্ষ বারাণসী জেলা আদালতে আবেদন করতে পারবে।
প্রসঙ্গত, ২০২১-এর অগস্টে পাঁচ হিন্দু মহিলার আবেদনের প্রেক্ষিতে বারাণসী দায়রা আদালতের বিচারক রবিকুমার দিবাকর মসজিদের অন্দরে সমীক্ষা ও ভিডিয়োগ্রাফির নির্দেশ দিয়ে পর্যবেক্ষক দল গঠন করেছিলেন। ১৭ মে দিবাকরের এজলাসে আদালত নিযুক্ত কোর্ট কমিশনার এবং ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া বা এএসআই)-এর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত পর্যবেক্ষক দলের সমীক্ষা এবং ভিডিয়োগ্রাফি সংক্রান্ত প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল।
এর পর বিচারক দিবাকর মসজিদের অন্দরের ওজুখানা ও তহ্খানা সিল করার নির্দেশ দেন। নির্দেশে বলা হয়, বারাণসীর জেলাশাসক, পুলিশ কমিশনারের পাশাপাশি সিআরপিএফের এক জন কমান্ড্যান্ট (সুপার) স্তরের আধিকারিককে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু শীর্ষ আদালত নমাজ বন্ধের নির্দেশ নাকচ করে দেয়। পাশাপাশি, মামলাটি বারাণসী জেলা আদালতে স্থানান্তর করে।
জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরে পাওয়া তথাকথিত ‘শিবলিঙ্গে’র বয়স নির্ধারণের জন্য পরীক্ষার জন্যও আর্জি জানিয়েছিল হিন্দু পক্ষ। জেলা আদালত সেই আবেদন নাকচ করায় তারা ইলাহাবাদ হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়। তার প্রেক্ষিতে চলতি মাসে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া বা এএসআই)-এর মহানির্দেশককে এ বিষয়ে লিখিত ভাবে মতামত জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।