গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে দেশের শীর্ষস্তরের রাজনীতিক থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সাংবাদিক, সমাজকর্মীদের ফোনে আড়ি পাতা নিয়ে সরগরম জাতীয় রাজনীতি। গত সপ্তাহে এই কারণে কার্যত অচল ছিল সংসদের অধিবেশন। এ বার পেগাসাস-কাণ্ড সংক্রান্ত আরও একটি রিপোর্টে প্রকাশ্যে গেল। যা বলছে, ২০১৮ সাল নাগাদ ওই স্পাইওয়্যার কাজে লাগিয়ে বিএসএফ (বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স)-এর প্রাক্তন প্রধান কে কে শর্মার ফোনও হ্যাক করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, দেশে যাঁদের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল, সেই তালিকায় উঠে এসেছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং)-এর আধিকারিক জিতেন্দ্র কুমার ওঝার নামও। নয়া রিপোর্ট সামনে আসতেই ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বিঁধলেন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। এই রিপোর্টে প্রকাশ্যে আসতেই টুইটারে ডেরেক লেখেন, ‘সাংবাদিক, বিরোধী নেতা, বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য... এখন দেখা যাচ্ছে, সেনাদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি। এটা অপরাধ। জানা দরকার, কারা দায়ী। এর জন্য বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা হোক আজ। প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জবাব দিতে হবে।’
Journalists, political opponents, members of the judiciary, cabinet colleagues... now, not even the ARMY spared. There is no ambiguity here.
— Derek O'Brien | ডেরেক ও'ব্রায়েন (@derekobrienmp) July 26, 2021
This is a CRIME. Who is responsible ? #Pegasus
Discus this in #Parliament today. PM-HM must answer. https://t.co/tExe7EMi4e
বিএসএফ প্রধান থাকাকালীন শর্মার ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল বলে দাবি করা হচ্ছে নতুন রিপোর্টে। যদিও তাঁর ফোনের কোনও ফরেন্সিক পরীক্ষা হয়নি। তবে ফাঁস হওয়া নম্বরের তালিকায় তাঁর যে তিনটে নম্বর উঠে এসেছে, তার মধ্যে দু’টি নম্বর এখনও তিনি ব্যবহার করেন বলে জানানো হয়েছে। গত লোকসভা ভোটের আগে আলোকবৃত্তে উঠে এসেছিলেন প্রাক্তন সেনা কর্তা।
সেনাকর্তার পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর পরই ভোটের সময়ে তাঁকে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পর্যবেক্ষক পদে নিয়োগ করেছিল নির্বাচন কমিশন। তার পরই কলকাতা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্গের একটি অনুষ্ঠানে উর্দি পোশাকে তাঁর উপস্থিতি এবং রন্তিদেব সেনগুপ্তের মতো বিজেপি নেতার সঙ্গে তাঁর আলাপচারিতা রাজনীতির কারবারিদের ভুরু কুঞ্চিত করেছিল। সেই সময় এর তীব্র বিরোধিতাও করেছিল তৃণমূল। তার পরই অবশ্য তাঁকে ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
দ্য ওয়্যারের রিপেোর্ট বলছে, ফাঁস হওয়া নম্বরের তালিকায় নাম রয়েছে বিএসএফের ইনস্পেক্টর জেনারেল জগদিশ মৈথানি। মূলত ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তাঁর ফোনে আড়ি পাতা হয়েছিল। ‘উত্তম সেবা প্রমাণ পাত্র’ প্রাপক প্রাক্তন গোয়েন্দা আধিকারিক জিতেন্দ্র কুমার ওঝা ও তাঁর স্ত্রীয়ের ফোনও হ্যাক করা হয়েছিল ওই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে। তালিকায় নম্বর রয়েছে কর্নেল মুকুল দেবের। সেনাদের জন্য বিনামূল্য রেশনের সুবিধা বন্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সচিবকে আইনি নোটিস ধরিয়েছিলেন তিনি।
গত সপ্তাহে সংসদের অধিবেশনে পেগাসাস নিয়ে বিজেপিকে কড়া প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করেছে তৃণমূল। চলতি সপ্তাহেও যে সেই ধারা বজায় থাকবে, তা সপ্তাহের শুরুতে ডেরেকের টুইটে এক প্রকার স্পষ্ট।