দিল্লিতে বিক্ষোভ চিকিৎসকদের। ছবি: পিটিআই।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদের ঢেউ এ বার দেশ জুড়ে। চিকিৎসকদের বিক্ষোভ এবং কর্মসূচির কারণে বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা। সোমবার দিল্লিরমস-সহ বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে শুরু করে কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশেও চিকিৎসকদের একাংশ প্রতিবাদ-বিক্ষোভে শামিল হন। কোথাও কোথাও করা হয় মোমবাতি মিছিলও। ‘বিচার চাই’, পোস্টার হাতে হাসপাতালগুলির চত্বরে বিক্ষোভে শামিল হন চিকিৎসকদের একাংশ। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় সুরক্ষা আইন কার্যকরের দাবিও শোনা যাচ্ছে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের মুখে।
আরজি করের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে উত্তাল গোটা দেশ। কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে তো বটেই, সোমবার থেকে দিল্লি, মুম্বই, লখনউ, কর্নাটক সহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। রবিবারই ফেডারেশন অফ রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছিল, সোমবার দেশের হাসপাতাগুলিতে একাধিক পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। আন্দোলনরত চিকিৎসকদের দাবি, শুধু ২৪ ঘণ্টা নয়, অনির্দিষ্ট কালের জন্য তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসক খুনের ঘটনায় উত্তাল রাজ্য। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ প্রকাশ্যে আসছে। পুলিশি তদন্তে উঠে আসা তথ্যপ্রমাণ জুড়লে মিলছে নৃশংসতার ছবি। উঠছে একাধিক প্রশ্ন। হাসপাতালে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিতে শনিবার থেকেই পথে নেমেছে চিকিৎসকদের একাংশ। দোষীর শাস্তির দাবিতে কোথাও বিক্ষোভ মিছিল, কোথাও আবার কর্মবিরতি পালন করেছেন চিকিৎসকেরা। জাতীয় স্তরেও চিকিৎসক সংগঠনগুলি আরজি কর-কাণ্ডের নিন্দা করেছে। শামিল হয়েছে বিক্ষোভে।
দিল্লির এমস চত্বরে সোমবার সকাল থেকেই ডাক্তারি পড়ুয়াদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। হাতে পোস্টার, মুখে স্লোগান। দোষীর কঠোর শাস্তির দাবিতে অনড় আন্দোলনকারীরা। শুধু এমস নয়, দিল্লির অন্তত ১০টি সরকারি হাসপাতালে বাইরে বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন চিকিৎসকেরা। রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালের জরুরি পরিষেবায় কোনও প্রভাব পড়বে না। রবিবার এমস থেকে একটি মোমবাতি মিছিলও বার করেন চিকিৎসকেরা। অনেকে আবার সিবিআই তদন্তের দাবিও তুলছেন। পাশাপাশি, মুম্বই, কর্নাটক, লখনউয়ের বিভিন্ন হাসপাতালেও একই ছবি দেখা গিয়েছে সোমবার সকাল থেকে।
ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। তাদের বক্তব্য, কলকাতার হাসপাতালে যা ঘটেছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। দোষীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবিও তোলা হচ্ছে চিকিৎসক সংগঠনগুলির তরফে। ফেডারেশন অফ রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট চিকিৎসক অভিরাল মাথুর বলেন, ‘‘এই ঘটনায় সকলের নিন্দা করা উচিত। আমাদের বেশ কিছু দাবি রয়েছে। সেই দাবি মানা না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। তবে রোগীদের স্বার্থে জরুরি পরিষেবা চালু থাকছে। আমাদের সংস্থা প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্য মন্ত্রালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে।’’
চিকিৎসকদের কর্মবিরতির জেরে সমস্যায় পড়েছেন রোগী এবং রোগীর পরিবারেরা। চিকিৎসা করতে আসা রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বন্ধ হাসপাতালের বহির্বিভাগ। দিল্লির এমসে আসা এক রোগীর কথায়, ‘‘আমি সকাল ৭টায় হাসপাতালে এসেছি। চার-পাঁচ ঘণ্টা হয়ে গেল, কোনও চিকিৎসকের দেখা নেই। কলকাতায় যে ঘটনা ঘটেছে তা সত্যিই লজ্জাজনক। আমিও চাই দোষীর শাস্তি হোক। কিন্তু আমাদের মতো রোগীদের কী হবে? কত দিন এমন চলবে জানা নেই।’’