Same Sex Marriage

‘শুধু জননাঙ্গে নির্ভর করে না নারী-পুরুষের সংজ্ঞা’

প্রধান বিচারপতি বলেন, স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে পুরুষ ও মহিলার কথা বলা হয়েছে ঠিকই। তবে এক জন পুরুষ বা এক জন মহিলা বলতে কী বোঝায়, সেই ধারণা পুরোপুরি ভাবে জননাঙ্গের উপর নির্ভর করে না।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৫৮
Supreme Court of India

সমলিঙ্গ বিবাহ নিয়ে মামলার শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টে। প্রতীকী ছবি।

এক জন পুরুষ কিংবা এক জন মহিলা বলতে ঠিক কী বোঝায়, তার পরিপূর্ণ কোনও ধারণা আমাদের কাছে নেই। কারণ, গোটা বিষয়টি শুধুমাত্র তাঁদের জননাঙ্গের উপর নির্ভর করে না। ব্যাপারটা আরও অনেক জটিল— সমলিঙ্গ বিবাহ নিয়ে মামলার শুনানির সময়ে আজ এই মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।

সমলিঙ্গ বিবাহ নিয়ে আপত্তির কথা গতকালই শীর্ষ আদালতে জানিয়ে দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজ সাংবিধানিক বেঞ্চে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টের উদ্দেশ্য হল, শারীরিক ভাবে এক জন পুরুষ এবং শারীরিক ভাবে এক জন মহিলার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা। এর জবাব দিতে গিয়েই প্রধান বিচারপতি বলেন, স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে পুরুষ ও মহিলার কথা বলা হয়েছে ঠিকই। তবে এক জন পুরুষ বা এক জন মহিলা বলতে কী বোঝায়, সেই ধারণা পুরোপুরি ভাবে জননাঙ্গের উপর নির্ভর করে না।

Advertisement

পাল্টা যুক্তি দিয়ে সলিসিটর জেনারেল বলেছেন, পুরুষ কিংবা মহিলাকে শুধুমাত্র শারীরিক ভাবেই নির্দিষ্ট করা যেতে পারে। কারণ, ধারণা দিয়ে ব্যাপারটা চিহ্নিত করতে গেলে অনেক জটিলতা আসবে। উদাহরণ তুলে তিনি বলেন, ‘‘যে ভাবে বলা হচ্ছে, তাতে পুরুষ জননাঙ্গ থাকা সত্ত্বেও আমি যদি মহিলা হই, তা হলে ভারতীয় দণ্ডবিধিতে আমাকে পুরুষ নাকি মহিলা হিসেবে দেখা হবে?’’ তাঁর মতে, অনেক বিষয় এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। ভাল হয়, সংসদ যদি গোটা বিষয়টা বিবেচনা করে দেখে।

গতকালই কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তি দিয়েছিল, সমলিঙ্গ বিবাহের বিষয়টি নিয়ে বিচার বিভাগ নয়, আইনসভায় আলোচনা করা যেতে পারে। আজও প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে মামলা উঠতেই মেহতা বলেন, শীর্ষ আদালতের উচিত বিষয়টি তাদের এক্তিয়ারের মধ্যে রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা। কারণ, নতুন সামাজিক সম্পর্ক তৈরির বিষয়টি সংসদই বিচার করে দেখতে পারে। প্রধান বিচারপতি অবশ্য জানিয়ে দেন, কোন বিষয়ে কী ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তা আদালতকে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। আদালত সমলিঙ্গ বিবাহ নিয়ে আর্জি শুনতে আগ্রহী। স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টের পরিধির মধ্যেই এই বিষয়টি বিচার বিবেচনা করতে চাইছেন তাঁরা।

সমলিঙ্গ বিবাহের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে আজ আইনজীবী মুকুল রোহতগি শীর্ষ আদালতের সেই পুরনো রায়কে তুলে ধরেছেন, যেখানে সমকামকে অপরাধের আওতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি তাঁদের দাবিগুলির কথা জানতে চাইলে রোহতগি বলেন, স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টে পুরুষ বা মহিলার কথা উল্লেখ না রেখে স্পাউস (স্বামী বা স্ত্রী) রাখা যেতে পারে। তাঁর যুক্তি, বিবাহ সম্পর্কে ধারণা অনেক বদলে গিয়েছে। গৃহ হিংসা আইনে শুধু স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের কথাই বলা হয়নি, লিভ-ইন সম্পর্ককেও এর আওতায় আনা হয়েছে। রোহতগি বলেন, ‘‘আমরা চাই, সমলিঙ্গ বিবাহকে স্বীকৃতি দিক আদালত, স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্টের আওতায় রাষ্ট্রও একে স্বীকার করে নিক।’’ আইনজীবী মীনাক্ষী গুরুস্বামী সমলিঙ্গ বিবাহকে ‘ব্যক্তির অধিকার’ হিসেবে তুলে ধরেন।

আইনজীবী কপিল সিব্বল সমকামী সম্পর্কের অধিকারের কথা বললেও প্রশ্ন তোলেন, দত্তক সন্তান গ্রহণ করার পর এই ধরনের সম্পর্কে বিবাহ বিচ্ছেদ হলে কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে? বাবা হিসেবে কাকে দেখানো হবে? এই ধরনের বিবাহে আইন মেনে মহিলা হিসেবে কাকে চিহ্নিত করা হবে? খোরপোষেরই বা কী হবে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement