মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। মঙ্গলবার সকালে দেশের প্রধান বিচারপতি এনভি রমনার কাছে এই মামলাটি উত্থাপন করেছেন আইনজীবী অপর্ণা ভট্ট। বুধবার জরুরি ভিত্তিতে মামলাটি তালিকাভুক্ত করার আর্জি জানানো হয়েছে। বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
মহুয়ার আবেদনপত্রে বলা হয়েছে— ১১ অপরাধীকে মুক্তির ব্যাপারে গুজরাত সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা পূর্ণাঙ্গ ভাবে খতিয়ে দেখুক আদালত। অপরাধীকে ক্ষমা করতে রাজ্যের হাতে যে ক্ষমতা রয়েছে, তার যেন অপপ্রয়োগ না হয়। আনন্দবাজার অনলাইনকে মহুয়া বলেন, “আমরা চাই এ ধরনের মুক্তির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট একটি গাইডলাইন (নির্দেশিকা) তৈরি করে দিক সুপ্রিম কোর্ট।” ১১ জন দোষী সাব্যস্ত অপরাধীকে কিসের ভিত্তিতে মুক্তি দেওয়া হল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সাংসদ। তাঁর কথায়, “অসুস্থতা বা বয়সের কারণে কারও ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। কিন্তু একসঙ্গে ১১ জনকেই কী যুক্তিতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল গুজরাত সরকার, তা বোধগম্য নয়। তা স্পষ্টও করেনি গুজরাত সরকার।” মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মহুয়া। তিনি বলেন, “যাবজ্জীবন সাজার রায় দিয়েছিল বিশেষ সিবিআই আদালত। সিবিআই এই ঘটনাকে বিরল থেকে বিরলতম অপরাধ বলে মনে করেছিল। অথচ গুজরাত সরকার ১১ জনকে মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তদন্তকারী সংস্থার সঙ্গে কোনও আলোচনাই করল না।”
গত সোমবার, দেশের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবসে বিলকিস বানো-কাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাত সরকার। তার আগে, মুক্তির জন্য শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন এক অপরাধী। সেই আবেদনের ভিত্তিতে রাজ্য সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছিল আদালত। এর পরই গোধরা জেল থেকে ১১ জনকে মুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়। আক্ষেপের সুরে বিলকিস বলেছেন, ‘‘১৫ অগস্ট বিগত ২০ বছরের আতঙ্ক আবার আমাকে গ্রাস করল, যখন আমি শুনলাম আমার জীবন, আমার পরিবারকে ধ্বংস করে দেওয়া ১১টা লোক মুক্তি পেয়ে গেল, আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। এখনও বোবা হয়ে আছি।’’
বিলকিসের দোষীদের মুক্তির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুক সুপ্রিম কোর্ট— এই আর্জি জানিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ সই সংগ্রহ করেন।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে গোধরা-কাণ্ডের পর গুজরাতে সাম্প্রদায়িক হিংসা চলাকালীন ৩ মে দাহোড় জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামে ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। গ্রামের বাসিন্দা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিস বানোকে গণধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের চোখের সামনেই তাঁর তিন বছরের মেয়েকে পাথরে আছড়ে মারে হামলাকারীরা। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। তাঁর পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এই অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়ে মুম্বইয়ের সিবিআই আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে সওয়াল করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিল ওই বিশেষ আদালত। মামলা চলাকালীন এক জনের মৃত্যু হয়।