অভিনেত্রী রান্যা রাও। —ফাইল চিত্র।
জামিন পেলেন না কন্নড় অভিনেত্রী রান্যা রাও। সোনা পাচার মামলায় এখনও তাঁকে থাকতে হবে বেঙ্গালুরুর রাজস্ব গোয়েন্দা দফতরের (ডিআরআই) হেফাজতেই। অন্য দিকে, এই মামলায় অপর অভিযুক্ত তরুণ রাজুকে ১৫ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালত।
গত ৩ মার্চ বেঙ্গালুরুর বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার হন রান্যা। অভিযোগ, তিনি নাকি দুবাই থেকে ভারতে সোনা পাচার করছিলেন। বিমানবন্দর থেকে বার হওয়ার আগে অভিনেত্রীর তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ১৪ কেজির সোনার বিস্কুট উদ্ধার করেন গোয়েন্দারা। যার বাজারমূল্য সাড়ে ১২ কোটি টাকা। পরে রান্যার বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়। সেখান থেকে দু’কোটি টাকার সোনার গয়না এবং আড়াই কোটির বেশি নগদ পাওয়া যায়। কোথা থেকে এত টাকার উৎস বা সোনার বৈধ রসিদ কিছুই দেখাতে পারেননি অভিনেত্রী।
সোনা পাচার মামলায় ডিআরআই-এর আবেদনের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে সিবিআই। পরে এই একই মামলায় তদন্ত শুরু করে ইডিও। বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরের ঘটনার দিন তিনেক পর মুম্বই বিমানবন্দর থেকেও প্রচুর সোনা উদ্ধার হয়। সেই সোনাও দুবাই থেকে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে আনা হচ্ছিল বলে মনে করেন তদন্তকারীরা। তাঁদের অনুমান, দুবাই থেকে কোনও এক চক্র এই সোনা পাচারের নেপথ্যে রয়েছে। যদিও সেই ব্যাপারে কোনও সূত্র মেলেনি বলেই খবর।
সোনা পাচার মামলায় বার বার নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলে দাবি করে আসছেন রান্যা। তাঁর আরও দাবি, তাঁকে ‘ফাঁসানো’ হয়েছে। এই প্রথম বারই তিনি দুবাই থেকে সোনা এনেছেন। ডিআরআই-কে দেওয়া বয়ানে অভিনেত্রী জানিয়েছেন, গত ১ মার্চ অচেনা এক বিদেশি নম্বর থেকে ফোন পান তিনি। জেরায় রান্যা বলেছেন, তাঁর এ বারের দুবাই ভ্রমণ আদৌ পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। বরং যাত্রার ঠিক আগে উড়ো নম্বর থেকে ফোন করে নির্দেশ দিয়েছিল অপরিচিত ‘পুরুষ কণ্ঠ’! তাঁর দাবি, অজ্ঞাতপরিচয় ওই পুরুষের উচ্চারণ অনেকটা আফ্রিকান-আমেরিকানদের মতো ছিল। ওই ব্যক্তি তাঁকে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে সাদা পোশাক পরা এক ‘লম্বা, সুগঠিত চেহারার ব্যক্তির’ সঙ্গে দেখা করার নির্দেশ দেন। দুবাই বিমানবন্দরের ৩ নম্বর টার্মিনাল গেটের সামনে অভিনেত্রীকে অপেক্ষা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। ভয়ে পুলিশকে কিছু জানাননি তিনি। নির্দেশ মেনে গত ৩ মার্চ নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে যান রান্যা। ফোনে জানানো বর্ণনা মতো এক ব্যক্তি তাঁকে ত্রিপলে মোড়ানো দু’টি প্যাকেট দেন। এর পর বিমানবন্দরের শৌচাগারে ঢুকে রান্যা দেখেন, প্যাকেটগুলির মধ্যে রয়েছে ১২টি সোনার বার! তার পর ইউটিউব ভিডিয়ো অনুসরণ করে, আঠালো টেপ এবং টিস্যু পেপারের সাহায্যে কোমরের চারপাশে বেঁধে ফেলেন সোনার বারগুলি। আরও কিছু বার নিজের জুতোর তলার নীচে এবং জিন্সের পকেটে লুকিয়ে রাখেন।
যদিও গোয়েন্দাদের দাবি, অতীতেও রান্যা দুবাই থেকে সোনা এনেছেন ভারতে। অন্তত দু’বার একই কাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি। শুধু দুবাই নয়, অভিনেত্রীর পাসপোর্ট খতিয়ে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ৪৫টির বেশি দেশে রান্যা ভ্রমণ করেছেন। তাঁর এই ঘন ঘন বিদেশযাত্রাও ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের।