Ankita Bhandari

‘মেয়ের খুনিদের ফাঁসি চাই’, বলছেন অঙ্কিতার বাবা

সরকারি আধিকারিকদের উপস্থিতিতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাহগাদ শ্রীনগর শহরের অলকানন্দার তীরে অঙ্কিতার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। ওই সময় বিক্ষোভ তীব্র আকার নিয়েছিল।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
দেহরাদূন শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:০৪
অঙ্কিতা ভাণ্ডারী।

অঙ্কিতা ভাণ্ডারী।

ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট তাঁদের দিতে হবে এবং খুনের তদন্ত করতে হবে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে—না হলে মেয়ের অন্ত্যেষ্টির অনুমতি দেওয়া হবে না, এই দাবিতে দীর্ঘ ক্ষণ অনড় ছিল হৃষীকেশে ‘বনত্র’ রিসর্টের নিহত রিসেপশনিস্ট অঙ্কিতা ভাণ্ডারীর পরিবার। অবশেষে প্রশাসনের বারংবার আবেদনে মেয়ের অন্ত্যেষ্টিতে রাজি হয় তারা। উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী জানিয়েছেন, অঙ্কিতার পরিবারের দাবিগুলি প্রশাসন মেনে নিয়েছে। অন্ত্যেষ্টিতে রাজি হওয়ার আগে মৃতার বাবা বীরেন্দ্র সিংহ ভাণ্ডারীর দাবি, ‘‘মেয়ের খুনিদের ফাঁসি চাই।’’

একই দাবি উঠছে উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন প্রান্তেও। জাতীয় সড়ক-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পথ অবরোধ করেন ক্ষুব্ধ জনতা। এর মধ্যেই উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকারকে নিশানা করেছে বিরোধী কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিতে তদন্ত হচ্ছে ধীর গতিতে। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার দাবি, গুরুত্ব দিয়ে এই স্পর্শকাতর মামলার বিচার হোক ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে। আর প্রধানমন্ত্রী

Advertisement

নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর টুইট, ‘অপরাধ ও অহংকার এখন বিজেপির সমার্থক। বিব্রত বোধ করেন না, কথাও বলেন না, তিনি নীরব। প্রধানমন্ত্রীর বার্তা স্পষ্ট, ‘মহিলা আমার কাছ থেকে কিছু আশা করবেন না’’।

অভিযোগ, ১৯ বছরের অঙ্কিতাকে যৌনপেশায় যুক্ত হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন রিসর্টের মালিক তথা বিজেপি নেতার পুত্র পুলকিত। রাজি না হওয়ায় মাসুল গুনতে হয় প্রাণের বিনিময়ে। অঙ্কিতার পরিবারকে আজ ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট দেওয়া হয়। পরিবারের অভিযোগ, রিপোর্টে শুধু উল্লেখ ছিল জলে ডুবে মারা গিয়েছেন তাদের মেয়ে। বিস্তারিত কিছু না থাকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন অঙ্কিতার পরিজন। মৃতার বাবা বীরেন্দ্র জানিয়ে দেন, ময়নাতদন্তের বিস্তারিত রিপোর্ট চাই। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে তিনি বলেন, ‘‘আমার মেয়েকে যারা খুন করেছে তাদের ফাঁসি দিতে হবে।’’ তদন্তে বিলম্বের অভিযোগ তুলে তিনি কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন রাজ্যের এক রাজস্ব আধিকারিককে।

অঙ্কিতা ভাণ্ডারী খুনের প্রতিবাদে হৃষীকেশ-বদ্রীনাথ জাতীয় সড়কে অবরোধ। রবিবার। পিটিআই।

অঙ্কিতা ভাণ্ডারী খুনের প্রতিবাদে হৃষীকেশ-বদ্রীনাথ জাতীয় সড়কে অবরোধ। রবিবার। পিটিআই।

পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ময়দানে নামেন মুখ্যমন্ত্রী ধামী। তিনি বলেন, ‘‘নিহত তরুণীর পরিবার শেষকৃত্যে রাজি হয়েছে। দোষীদের সাজা যাতে দ্রুত নিশ্চিত করা যায়, সে জন্য ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গঠন করে বিচার হবে। প্রকাশ করা হবে নিহতের ময়নাতদন্তের রিপোর্টও।’’ প্রশাসনের আশ্বাসের পরে গঢ়ওয়াল জেলার শ্রীনগর শহরের হাসপাতালে পৌঁছন অঙ্কিতার বাবা ও দাদা। তখন হাসপাতালের বাইরে লোকারণ্য। গত পরশু খুনের বিষয়টি স্পষ্ট হতেই ক্ষোভের আগুন ছড়াতে থাকে রাজ্য জুড়ে। ‘জাস্টিস ফর অঙ্কিতা’ পোস্টার হাতে বহু মহিলা হৃষীকেশ-বদ্রীনাথ জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। তাঁদের দাবি, ঘটনার মূলচক্রী রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বিনোদ আর্যের ছেলে পুলকিতকে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। বার বার বোঝানো সত্ত্বেও অবরোধ তুলতে চাননি বিক্ষোভকারীরা। আট ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ-অবরোধ চলার পরে তা প্রত্যাহার করা হয়। সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসক জানিয়েছেন, চার সদস্যের একটি চিকিৎসক দল ময়নাতদন্ত করেছে। সূত্রের খবর, জলে ডুবে মৃত্যু ছাড়াও অঙ্কিতার শরীরে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে বলেও ময়নতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।

সরকারি আধিকারিকদের উপস্থিতিতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাহগাদ শ্রীনগর শহরের অলকানন্দার তীরে অঙ্কিতার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। ওই সময় বিক্ষোভ তীব্র আকার নিয়েছিল। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অল্পবয়সি মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। পুলিশ ও রাজ্য সরকার বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। কয়েক জন মহিলার বক্তব্য, ‘‘ওরা একটা মেয়েকে খুন করল, যে ভাল ভাবে, সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চেয়েছিল।’’

অঙ্কিতা হত্যা তদন্তে সরকার কী পদক্ষেপ করেছে তা রাজ্যপালকে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশের ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেল রেণুকা দেবীর নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) তদন্ত শুরু করেছে। অঙ্কিতা খুনের খবর প্রকাশ্যে আসতে পুলকিতের রিসর্টে ভাঙচুর করা হয়। অঙ্কিতার পরিবারের অভিযোগ, প্রমাণ লোপাটে ওই কাজ করা হয়েছে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা হরিশ রাওয়তের অভিযোগ, ‘‘এটা পরিকল্পিত হত্যা। আমজনতার সন্দেহ, প্রমাণ লোপাট করতেই ওই রিসর্টে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।’’ ওই অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশের ডিজি অশোক কুমার বলেন, ‘‘মৃতার বাবার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। তাঁকে আশ্বাস দিয়েছি, ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হবে। তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে বলেছি, সিট তদন্ত করছে। উপযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহ করে আদালতে পেশ করা হবে, যাতে দোষীদের ফাঁসির সাজা নিশ্চিত করা যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement