প্রতীকী ছবি।
‘‘বাবা ক্ষমা করে দিও, আমি পারলাম না...’’, নিথর ছাত্রের দেহের পাশে পড়ে থাকা চিরকুটে লেখা এই লাইন। আবারও রাজস্থানের কোটায় পড়ুয়া আত্মহত্যার ঘটনা ঘটল। শুক্রবার কোটার এক বাড়ি থেকে উদ্ধার হল বিহারের জেইই পরীক্ষার্থীর দেহ। এই নিয়ে চলতি বছরে কোটায় ছ’জন পড়ুয়া আত্মহত্যার ঘটনা ঘটল।
জানা গিয়েছে, বিহারের ভাগলপুর জেলার বাসিন্দা অভিষেক কুমার কোটায় এসেছিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে। শহরের বিজ্ঞাননগর এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকত সে। পুলিশ সূ্ত্রে খবর, শুক্রবার সকালে ওই ঘরের মধ্যে থেকেই পুলিশ অভিষেকের দেহ উদ্ধার করে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, বিষক্রিয়ার কারণেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। কিন্তু কী ভাবে সে বিষ পেল তা নিয়ে এখনও অন্ধকারে পুলিশ।
পুলিশ সূ্ত্রে খবর, মৃতদেহের পাশ থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। তাতে লেখা, ‘‘বাবা আমি দুঃখিত। আমাকে ক্ষমা করো। আমি জেইই করতে পারব না।’’ পুলিশ দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তার পরই দেহ বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে।
পুলিশ মৃত ছাত্রের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে, মাস খানেক ধরেই অন্যমনষ্ক এবং মনমরা থাকত অভিষেক। বন্ধুদের সঙ্গেও খুব একটা মেলামেশা করত না। ২৯ জানুয়ারি এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি— কোচিংয়ে দু’দিন পরীক্ষা ছিল। কিন্তু অভিষেক সেই পরীক্ষা দিতে আসেনি। পুলিশের অনুমান, পড়াশোনা নিয়ে মানসিক চাপের কারণেই চরম পদক্ষেপ করেছে অভিষেক।
উল্লেখ্য, রাজস্থানের কোটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশিক্ষণের কেন্দ্র হিসাবে বিখ্যাত। আইআইটিতে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ারিং, চিকিৎসক হওয়ার প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষারও কোচিং হাব বলা হয় কোটাকে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছাত্র-ছাত্রীরা কোটায় এসে সেখানে থেকে পড়াশোনা করেন। কিন্তু সেই সব ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ ‘অমানুষিক’ প্রতিযোগিতার চাপ নিতে পারে না। কী ভাবে কোটার সফল ছাত্র গড়ার কারখানায় একের পর এক ছাত্র প্রবেশ করেন এবং কী ভাবে সেই প্রক্রিয়ার বলি হন অনেকে, তা নিয়ে বহু বার বহু আলোচনা হলেও পরিস্থিতি বদলায়নি।
চলতি বছরে কোটায় এই নিয়ে এটি ষষ্ঠ আত্মহত্যার ঘটনা। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালেও ২৯ জন ছাত্র আত্মহত্যা করেছিলেন কোটায়। ২০২২ সালে সেই সংখ্যাটা ছিল ১৫। রাজস্থান সরকারের তরফে পড়ুয়াদের উপর মানসিক চাপ কমানোর জন্য কোচিং সেন্টারগুলিকে বিভিন্ন পদক্ষেপ করার কথা বলা হলেও তাতে যে বিশেষ লাভ হয়েছে, তেমনটা নয়।