বিশ্ববাসীর কাছে এখনও মানসিক সমস্যা আছে মানেই সেই ব্যক্তি পাগল! প্রতীকী ছবি।
পেশাগত চাপ, সম্পর্কের টানাপোড়েন, অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়া, পারিবারিক ঝগড়ার মতো সমস্যা মানুষের মনকে দুর্বল করে তোলে। জীবনের সব সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান না পেয়ে চরম অস্বস্তি, উদ্বেগ ঘিরে ধরে মানুষের মনে। আধুনিক যুগে ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরলের মতোই অবসাদও ছেয়ে যাচ্ছে আরও বেশি মানুষের মধ্যে। শিশু থেকে প্রৌঢ়— যে কোনও বয়সেই মনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে মানুষ। তবে এই সমস্যায় ভুগলে বেশির ভাগ মানুষই তা প্রকাশ করতে চান না জনসমক্ষে।
সম্প্রতি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ল্যানসেটের একটি রিপোর্ট বেশ ভয়াবহ। ‘ল্যানসেট কমিশন অন এন্ডিং স্টিগমা অ্যান্ড ডিসক্রিমিনেশন ইন মেন্টাল হেলথ’ এর মতে বিশ্ব জুড়ে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। গড় করলে দাঁড়ায় বিশ্বে প্রতি আট জনের মধ্যে এক জন মানুষ এই সমস্যায় জর্জরিত। শুধু তা-ই নয়, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সিদের সাত জনের মধ্যে এক জন মানসিক উদ্বেগে ভুগছেন— এই চিত্রটিও বেশ চিন্তার বিষয়।
কোভিডের প্রথম বর্ষে মানসিক সমস্যায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্ববাসীর কাছে এখনও মানসিক সমস্যা আছে মানেই সেই ব্যক্তি পাগল! এই চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আশার জন্য কোভিডের সময়কাল জুড়ে নানা ধরনের প্রচার শুরু হয়, এখনও বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচার চলছে। তবে সব প্রচারের পরও মানুষের চিন্তাধারায় খুব বেশি যে পরিবর্তন এসেছে তা বলা যায় না।
মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে কিছু হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা ভীষণ জরুরি। হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলেই মুশকিল।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? কারও যদি মনঃসংযোগে সমস্যা হয়, অবসন্ন লাগে, কাজের ইচ্ছে চলে যায়, ধরে নেওয়া হয় মস্তিষ্কে ডোপামিনের মাত্রা কমে গিয়েছে। সেরোটোনিনের নেতিবাচক প্রভাব খুব বেশি। যেমন, হাল ছেড়ে দেওয়া, অপরাধবোধে ভোগা, আত্মহত্যার প্রবণতা— ইত্যাদি উপসর্গ বোঝায় সেরোটোনিনের মাত্রার হেরফের। এর প্রকাশও অনেক বেশি। ঘুমের চক্র বিঘ্নিত হওয়া, যৌনইচ্ছা কমে যাওয়াও এর অন্যতম উপসর্গ। নরএপিনেফ্রিনের ক্ষেত্রে শারীরিক উপসর্গ বেশি প্রকট। সারা শরীরে ব্যথা বা জ্বালা করা, চিনচিন করার মতো লক্ষণ দেখা যায়। এ রকম কোনও সমস্যা দেখা দিলেই মনোবিদের পরামর্শ নিতে হবে। সমাজের আর পাঁচ জন কী ভাববে সেটে ভেবে নিজের বড় ক্ষতি করে দেওয়াটা বোধ হয় বুদ্ধিমানের কাজ হবে না!