লিপোডেমায় ভুগছেন বেশির ভাগ ভারতীয় মহিলা। ছবি: ফ্রিপিক।
শরীরের নিম্নাঙ্গে জমছে মেদ। পা, ঊরু, তলপেট, কোমর, নিতম্বে পরতে পরতে মেদ জমছে। এবং তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এমন সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে ভারতীয় মহিলাদেরই। ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন’-এর তথ্য বলছে, দেশের নানা রাজ্যে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, ১১ শতাংশের বেশি মহিলা এমন শারীরিক সমস্যার শিকার।
কী এই সমস্যা?
ওবেসিটি বা স্থূলতা একে ঠিক বলা যাবে না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘লিপেডেমা’। এ ক্ষেত্রে শরীরের নিম্নাংশেই ত্বকের নীচে চর্বির স্তর জমতে শুরু করে। কারও কোমর, নিতম্ব ও তলপেটে বেশি মেদ জমে যায়, ঊরুতে তেমন ভাবে জমে না। আবার কারও নিতম্ব ও ঊরুতে যতটা বেশি চর্বির স্তর জমে ততটা পেট বা দুই বাহুতে জমে না। পুরোটাই সামঞ্জস্যহীন ভাবে হয়। আর এই মেদ কমানোও খুব কষ্টকর। শরীরের গঠনই নষ্ট হয়ে যায়।
সামঞ্জস্যহীন ভাবে মেদ জমে শরীরের নিম্নভাগে। ছবি: সংগৃহীত।
লিপেডেমায় কেবল যে মেদ জমে, তা নয়। শরীরের যেখানে মেদ জমে, সেখানকার পেশিতে যন্ত্রণাও হয়। সেই অঞ্চলের চামড়া কুঁচকে যায় ও ঝুলে পড়ে। ত্বকের মেলানিন নষ্ট হয়ে ‘পিগমেন্টেশন’ বা দাগছোপ দেখা দিতে থাকে। ত্বক খুব স্পর্শকাতরও হয়ে পড়ে।
কাদের হয় এই সমস্যা?
লিপেডেমা বংশগত ভাবে হতে পারে। এটি অনেক ক্ষেত্রেই জিনবাহিত। চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডল জানাচ্ছেন, হরমোনের তারতম্যেও লিপেডেমার সমস্যা দেখা দিতে পারে।যে মহিলাদের পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) থাকে, অথবা থাইরয়েডের সমস্যা থাকে, তাঁদের ক্ষেত্রে হরমোনের তারতম্য বেশি হয়। তখন শরীরের নিম্নভাগে মেদ জমতে শুরু করে।অত্যধিক জাঙ্ক ফুড খাওয়া, প্যাকেটজাত খাবার বেশি খাওয়ার কারণে কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়েও এমন হতে পারে।
কম বয়স থেকে হজমের সমস্যা বা ‘মেটাবলিক ডিজ়অর্ডার’-এ ভুগছেন যাঁরা বা যাঁদের লিভারের রোগ রয়েছে, তাঁদেরও হতে পারে।
রজোনিবৃত্তির পরে যদি শরীরে কোলেস্টেরল বেশি জমে, তার থেকেও এমন হতে পারে। পঞ্চাশের ঊর্ধ্বে অনেক মহিলাই লিপেডেমায় ভোগেন।
সুষম ডায়েট, নিয়মিত শরীরচর্চায় এই সমস্যা দূর হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে লাইপোসাকশন করলেও লাভ হয়। তবে মেদ কতটা জমেছে তার উপর নির্ভর করে লাইপোসাকশন ঠিকমতো করা যাবে কি না। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, বয়স ত্রিশ পার হলেই তাই কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিতে হয়। শরীরে কোলেস্টেরলের আধিক্য হচ্ছে কি না বা হরমোনের তারতম্য হচ্ছে কি না, তা ধরা পড়লে আগে থেকেই সাবধান হওয়া সম্ভব।