Paralysis due to Fat Burn

কম সময়ে বেশি মেদ ঝরাতে গিয়ে বাড়ছে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা! বিপদ এড়াতে কী করবেন?

সাত দিনে বা এক মাসের মধ্যে ওজন কমানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছে। ইন্টারনেটেও এই নিয়ে বিস্তর চর্চা চলছে। কিন্তু এতে কী বিপদ যে ঘটছে, সে খেয়াল আছে কি?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:০২
What is Slimmer’s Paralysis, how rapid weight loss linked to this health condition

ঝটপট ওজন কমাতে গিয়ে কী বিপদ হচ্ছে? প্রতীকী ছবি।

১০ দিনের মধ্যে ৫ কেজি কমাতেই হবে। অথবা দু’মাসের মধ্যে ২০ কেজির বেশি ঝরিয়ে একদম তারকাদের মতো চেহারা পেতে হবে। দ্রুত ওজন কমানোর নানা প্রক্রিয়া নিয়ে যেন রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কে কত তাড়াতাড়ি ওজন কমাচ্ছেন এবং কী উপায়ে— তা জানার জন্য ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি হচ্ছে বিস্তর। আজ একজন তারকা লিখছেন তিনি কী ভাবে গোলগাল, মোটাসোটা চেহারা থেকে একেবারে নির্মেদ চেহারা বানিয়েছেন, তো কাল অন্য জন রোগা হওয়ার সহজ পদ্ধতি নিয়ে মতামত দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ফিটনেস প্রশিক্ষকেরাও। রোগা হওয়াই যেন সৌন্দর্যের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে, আর এই ফাঁদে পা দিয়েই দুই পায়ের চরম ক্ষতি করে ফেলছে কমবয়সিরা। কম দিনে মেদ কমানোর প্রভাব পড়ছে দুই পায়ের উপরেই। আর তা সাময়িক ভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্তও হয়ে পড়ছে।

Advertisement

এখন মনে হতেই পারে, ওজন কমানোর সঙ্গে পক্ষাঘাতের কী সম্পর্ক? বিষয়টা নতুন লাগলেও, তা কিন্তু আগেও হত। কেবল সংখ্যায় কম ছিল বলে এত চর্চায় আসেনি। আগে অসুখবিসুখের কারণে বা অপুষ্টিজনিত কারণে লোকজনের ওজন হঠাৎ কমে যেত, তখন এই সমস্যা দেখা দিত। কিন্তু এখন, জেনেবুঝেই কঠিন ডায়েট করে ও অবৈজ্ঞানিক এবং অস্বাস্থ্যকর উপায়ে দ্রুত ওজন কমাতে গিয়ে এই বিপদের মুখোমুখি হচ্ছেন অনেকে। রোগটির নাম ‘স্লিমার্স প্যারালাইসিস’। অর্থাৎ, কম দিনে ওজন কমাতে গিয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়া।

ওজন কমাতে গিয়ে পক্ষাঘাত, ব্যাপারটা কী?

ওজন কিন্তু শুধু পেট, তলপেট বা কোমরের কমে না। সারা শরীর থেকেই মেদ ঝরে। এই মেদ কমারও কিন্তু একটা নিয়ম আছে। এক সপ্তাহে ৫০০-৯০০ গ্রাম ওজন ঝরা স্বাভাবিক। কিন্তু যদি এক সপ্তাহে কেউ ৫ কেজির বেশি ওজন কমানোর চেষ্টা করেন ও সেইমতো ডায়েটও শুরু করেন, তা হলেই কিন্তু বিপদ ঘনাবে। কেমন বিপদ? নিউরোলজিস্ট অনিমেষ করের কথায়, “দুই হাঁটুতেও মেদের পরত আছে। যাকে বলে ‘ফ্যাট প্যাড’। এই মেদটুকু কিন্তু হাঁটুর জন্য জরুরি। খুব তাড়াতাড়ি ওজন কমতে শুরু করলে, এই মেদের পরতও কমতে থাকে। তখন পায়ের পেশির তো বটেই, স্নায়ুরও ক্ষতি হয়। ফলে দুই পা অসাড় হয়ে যেতে থাকে।”

এই সমস্যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি’ বা স্নায়ুর দুর্বলতা। মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর কোষের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম নষ্ট হয়ে যায়, ফলে মস্তিষ্ক থেকে সঙ্কেত আর স্নায়ুতে আসতে পারে না। তখন স্নায়ুর কাজ করার ক্ষমতা চলে যেতে থাকে। দুই পায়ে এমন হলে, পায়ের শিরায় টান ধরে, ব্যথা-যন্ত্রণা শুরু হয়। পায়ের সাড় চলে যেতে থাকে। এই সমস্যার আরও একটি নাম আছে— ‘ড্রপ ফুট’। পায়ের পেরোনিয়াল স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই সমস্যা দেখা দেয়। মাটি থেকে পায়ের পাতা তুলতে সাহায্য করে এই স্নায়ু। পায়ে জমা মেদ দ্রুত কমতে থাকলে, পেরোনিয়াল স্নায়ু দুর্বল হয়ে যায়। তখন আর পা নাড়াচাড়া করা যায় না।

অপুষ্টিই যত নষ্টের গোড়া

কেবল মেদ কমছে বলেই যে পায়ে পক্ষাঘাত হয়ে যাবে, তা নয়। এর সঙ্গে অপুষ্টিরও যোগ রয়েছে। মেদ ঠিক কী ভাবে কমছে, সেটাই হল আসল ব্যাপার। কম খেয়ে বা দীর্ঘ ক্ষণ না খেয়ে থেকে, পুষ্টিকর খাবার কম খেয়ে মেদ ঝরানোর চেষ্টা করলে ড্রপ ফুটের সমস্যা বেশি হবে। শরীরে ভিটামিন বি১ (থিয়ামিন), বি৬ ও বি১২-এর অভাব হলে পেশি ও স্নায়ুর উপরে তার প্রভাব পড়বে। অর্থাৎ, অপুষ্টিও পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির অন্যতম বড় কারণ। এই ব্যাপারে বুঝিয়ে বললেন অস্থি চিকিৎসক সুব্রত গড়াই। তাঁর কথায়, “হাইপোক্যালেমিক প্যারালাইসিস বলে একটি রোগ আছে। শরীরে পটাশিয়ামের খুব বেশি অভাব হলে এই রোগ হতে পারে। এতে পেশির শক্তি একেবারে তলানিতে চলে যায়। প্রচণ্ড রকম পেশির দুর্বলতার কারণে হাঁটাচলা করতে সমস্যা হয়। হাত ও পায়ের পেশি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছু ক্ষেত্রে সাময়িক ভাবে পক্ষাঘাতের ঘটনাও ঘটে।”

‘স্লিমার্স প্যারালাইসিস’ কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এই পক্ষাঘাত সাময়িক ভাবে হয় আবার সেরেও যায়। নিয়মিত শরীরচর্চা, ফিজিয়োথেরাপির মাধ্যমে স্নায়ু সচল রাখতে পারলে সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়। সুব্রতবাবু পরামর্শ দিলেন, স্নায়ুর উপর চাপ পড়ে, এমন কোনও ভঙ্গিতে বেশি ক্ষণ ধরে বসবেন না। তা ছাড়া, ফিজিয়োথেরাপি করালে তা অভিজ্ঞ কারও কাছেই করাতে হবে।

খাওয়াদাওয়াও করতে হবে নিয়ম মেনে। না খেয়ে বা কম খেয়ে ডায়েট করে রোগা হওয়া বিপজ্জনক। ওজন কমাতে হবে সুষম খাবার খেয়েই। ভিটামিন বি১২ ও ভিটামিন ডি আছে এমন খাবার খেতে হবে। পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীর পরামর্শ, পায়ের ব্যথা বা স্নায়বিক কোনও সমস্যা হলে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবারই খেতে হবে। ডায়েটে রাখতে হবে প্রোবায়োটিক দই, দুধ, পনির, মাশরুম। প্রোটিনের পাশাপাশি ফাইবার আছে এমন খাবারও খেতে হবে। নানা রকম মরসুমি ফল, তিসির বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, বাদাম, বিভিন্ন রকম দানাশস্য খেতে হবে। মাছ ও ডিমও ভিটামিন বি-এর ভাল উৎস। নিয়ম করে সব খাবারই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে রোজ খেতে হবে।

Advertisement
আরও পড়ুন