প্রোটিন সমৃদ্ধ প্রাতরাশ কেমন হবে? কী বলছেন চিকিৎসক? ছবি: ফ্রিপিক।
শরীর সুস্থ রাখতে পুষ্টিবিদেরা রোজের খাদ্যতালিকায় নির্দিষ্ট মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট— সবই রাখতে বলেন। দ্রুত ওজন কমানোর আশায় অনেকেই পুষ্টিবিদদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করে ‘প্রোটিন ডায়েট’ করতে শুরু করেন। কার্বোহাইড্রেট কমিয়ে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি প্রোটিন খেয়ে ফেলেন। প্রাতরাশে ঠিক কতটা প্রোটিন দরকার, সে বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই অনেকেরই। যেমন ধরা যাক, বেকড ফিশ, সিদ্ধ মাংস বা ডিম একইসঙ্গে খেলেন। আবার নিরামিষের মধ্যে পনির, সয়াবিন বা দই-ছানা একই সঙ্গে রাখলেন। ভারী কিছু খেয়ে পেট অনেক ক্ষণ ভরিয়ে রাখতে গিয়ে শেষে হিতে বিপরীতই হবে। শরীরের জন্য যতটা জরুরি, তার তুলনায় বেশি মাত্রায় প্রোটিন শরীরে গেলে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
এই বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর প্রাক্তন বিজ্ঞানী দীপিকা শূর বলছেন, “এক জন প্রাপ্তবয়স্কের শরীরের প্রতি কেজি ওজন পিছু ০.৮ গ্রাম প্রোটিনের দরকার হয়। যাঁরা ভারী শরীরচর্চা করেন, তাঁরা প্রতি কেজি ওজন পিছু ১.৩ গ্রাম থেকে ১.৬ গ্রাম প্রোটিন খেতে পারেন। বয়স, উচ্চতা, ওজন, কী ধরনের কাজ করেন, কতটা পরিশ্রম করেন, এই সব কিছুর উপরেই নির্ভর করবে দিনে ঠিক কতটা প্রোটিন জরুরি।”
দীপিকার কথায়, প্রাতরাশে প্রোটিন অবশ্যই খেতে হবে, তবে মেপে। যেমন, যাঁরা রুটি খান, তাঁরা হাতে গড়া দুটো রুটি, একটা সিদ্ধ ডিম বা অমলেট, এক কাপ দই, আর স্যালাড রাখতে পারেন প্রাতরাশে। তা হলেই প্রোটিনের চাহিদা ঠিকঠাক পুষিয়ে যাবে। আর যদি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারই খেতে চান, তা হলে মুগ ডালের ইডলি বা দোসা, পনিরের পুর ভরা দোসা খাওয়া যেতে পারে। ভারী শরীরচর্চা করলে প্রাতরাশে দু'টি ডিম খাওয়া যেতে পারেই। বাদামও রাখতে পারেন পরিমিত। অনেকেই সিদ্ধ চিকেন বা বেকড ফিশ খান, তা-ও খারাপ নয়। তবে একই সঙ্গে ডিম, মাংস বা মাছ অথবা পনির, সয়াবিন রাখা যাবে না। যে কোনও একটি বা দু'টিই রাখা যেতে পারে। প্রোটিনের পরিমাণ ৩০ গ্রাম ছাড়িয়ে গেলেই তখন নানাবিধ শারীরিক সমস্যা শুরু হবে।
৩০ গ্রামের বেশি প্রোটিন মানে কতটা? চিকিৎসকের কথায়, ৫টি ডিমে ৩০ গ্রাম প্রোটিন থাকে। দেড় কাপ ইয়োগার্ট মানে ৩০ গ্রামের মতো প্রোটিন, আবার এক কাপ চিজ় মানেও ভরপুর প্রোটিন। একটি বড় পিস চিকেন বা মাছের একটি বড় টুকরো মানেও তাতে ৩০ গ্রাম প্রোটিন ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যাঁরা ব্যায়াম করেন, তাঁরা শরীরচর্চার আগে আগে অতি অবশ্যই খানিকটা প্রোটিন খাবেন, তা ছাতু, ডিম, চিকেন, ছানা, যা হোক কিছু হতে পারে। ব্যায়াম করার এক-দেড় ঘণ্টা আগে প্রোটিন খেলে তা পেশি গঠনে সাহায্য করে। ব্যায়াম শেষ হওয়ার পর ফের অল্প মাত্রায় প্রোটিন আর কার্বোহাইড্রেট খেতে পারেন। একগাদা মাছ, মাংস, ডিম খেয়ে ফেললেই যে প্রচুর পুষ্টি হবে, তা নয়।
বেশি প্রোটিন হজম করার জন্য প্রচুর পরিমাণে জল দরকার হবে। মাত্রাতিরিক্ত প্রোটিন খেলে রক্তে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে যায়। কিডনির উপর চাপ পড়ে। তা ছাড়া হজমের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। শরীরে ফাইবারের পরিমাণ কমে গিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। মাথা ঘোরাও অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়ার লক্ষণ। উচ্চমাত্রার প্রোটিন ডায়েট সাময়িক ভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করলেও, পরে ওজন এতটাই বেড়ে যাবে যে, কমানো মুশকিল হয়ে যাবে।