পুজোর আগে ওজন কমানোর জন্য কোন ডায়েট চার্ট অনুসরণ করবেন? ছবি: সংগৃহীত।
পুজোর আগে বাঙালির রোগা হওয়ার হিড়িক বাড়ে। আলিয়া ভট্টের মতো ছিপছিপে হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অনেকেই মারাত্মক সব ডায়েট করে বসেন। এই ফ্যাড ডায়েটগুলি করলে যেহেতু দ্রুত ওজন ঝরে, তাই ইদানীং ইনটার্নেটে এগুলির দারুণ রমরমা। যাঁরা দ্রুত কয়েক কিলো ওজন কমাতে চান তাঁরা উৎসবের মরসুম শুরু হওয়ার আগে এগুলির দিকে ঝোঁকেন।
কিন্তু আপনি কি জানেন এ সব ফাঁদে পা না দিয়ে, সঠিক পুষ্টি যুক্ত একটি ব্যালেন্সড ডায়েট চার্ট অনুসরণ করলেও আপনি অতিরিক্ত মেদ কমাতে পারেন। এমনকি, আপনি দীর্ঘ দিন সেই ওজন কমিয়ে সেটা ধরেও রাখতে পারবেন। কোনও রকম খাবার বাদ না দিয়েই।
ফ্যাড ডায়েট আদপে খুব জনপ্রিয় ডায়েটারি প্যাটার্ন। অনেকে ভবিষ্যৎ পরিণতির কথা না ভেবেই স্থূলতার এবং দ্রুত ওজন কমানোর সমাধান হিসাবে বেছে নেয়।
কিন্তু এই ধরনের ডায়েটের ক্ষতিকর দিকগুলি আগে জেনে নেওয়া যায়
●এটি আপনার বিপাক হার কমিয়ে দেয়
● এতে পেশি মা মাস্ল মাসের ক্ষয় হয়। পেশির দুর্বল হয়ে পড়ে
●আপনার ত্বকে সময়ের আগেই বয়সের ছাপ পড়ে ও বলি রেখা (ৠঙ্কেল্শ) দেখা দেয়
●এতে আপনার শরীরে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হয়
●এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে তোলে এবং ভবিষ্যতে নানা শারীরিক সমস্যা তৈরি হওয়ার প্রবণতা বাড়ে
●এটি ভবিষ্যতে আপনার মেদ বা ওজন কমানো কঠিন করে তোলে
●আপনার শারীরিক শক্তি এবং কর্মক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। ফলে আপনি দুর্বল হয়ে পড়বেন। এমনকি, আপনার আয়ুও কমে যেতে পারে।
বুঝতেই পারছেন কেন এই ডায়েটগুলি একবারেই উপযুক্ত নয়। এগুলি শরীরের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর এবং এক বার বন্ধ করলে বেশির ভাগ মানুষের ওজন ফের বেড়ে একই জায়গায় চলে আসে। এমনকি, কিছু ক্ষেত্রে ওজন তার দ্বিগুন বেড়ে যায়।
ফ্যাড ডায়েটে নানা রকম ‘সুপার ফুড বা ম্যাজিক ফুড’-এর কথা বলা হয়। তাই অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন খাবার বাদ পড়ে রোজকার খাবার থেকে। এতে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হয় এবং নানা রকম ইটিং ডিজঅর্ডারও দেখা দিতে পারে।
তাই কয়েক কেজি ওজন ঝড়ানোর জন্য, দ্রুত ওজন কমানোর ডায়েট প্ল্যান কখনওই অনুসরণ করা উচিত নয়। কারণ, বেশির ভাগ সময় ওজন আবার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শরীরে নানা রকম রোগও বাসা বাঁধতে পারে।
তাই দ্রুত সমাধানের জন্য চেষ্টা করতে যাবেন না। বরং একটি সহজ এবং স্থায়ী সমাধানের রাস্তা অনুসরণ করুন। যেখানে আপনি কোনও রকম খাবার বাদ না দিয়েই সঠিক পুষ্টি যুক্ত একটি ব্যালেন্স়ড ডায়েট খাওয়ার সুযোগ পাবেন। যা আপনার বিপাক হার ঠিক করবে এবং সহজেই এক মাসে ৩ কেজি থেকে ৫ কেজি ওজন কমাতে সাহায্য করবে। কোনও রকম স্বাস্থ্যের ঝুঁকি ছাড়াই। আর তাই অবশ্যই এক জন বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া উচিত।
নীচে আপনাদের জন্য একটি ডায়েট চার্ট দেওয়া হল যা অতিরিক্ত ক্যালোরি রেস্ট্রিকটেড নয়। সেই সঙ্গে আপনাকে কিছু জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন সঠিক সময়ে ভাল ঘুম (৭ থেকে ৮ ঘণ্টা), সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা শরীরচর্চা করা (যেমন হাঁটা, সাইকেল চালানো, ইত্যাদি)। এ ছাড়াও ডিহাইড্রেশন এড়াতে পর্যাপ্ত জল পান করুন (নূন্যতম ৩ থেকে ৪ লিটার) এবং মানসিকা চাপ কমাতে কিছু সহজ নিশ্বাসের ব্যায়াম বা ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধ্যান করুন।
১৫০০ ক্যালোরির ডায়েট প্ল্যান:
মিল ১ (০ ক্যালোরি): ১ গ্লাস জল + ১ গ্লাস জলের মিশ্রণ (এক চিমটি হলুদ, লেবুর রস এবং ১ চা চামচ চিয়া বীজ)
মিল ২ (৫০ ক্যালোরি): (১ টি ছোট আপেল/কলা) অথবা (৬ টি কাঠবাদাম ও ২ টি খেজুর) অথবা (৮টি কালো কিশমিশ ও ২টি কেশরের সুতো একসঙ্গে জলে ভেজানো)
মিল ৩ (৩৫০ ক্যালোরি): (১ বাটি সেদ্ধ করা ডাল এবং কিছু সব্জির চাট) অথবা (১+১/২ টেবিল চামচ পিনাট বাটার দিয়ে ২ টি হোল হুইট পাউরুটি) অথবা (২ টি ওটস ও সব্জির চিলা) অথবা (২ টি ইডলি সম্বর ও চাটনি সহযোগে)
মিল ৪ (১০০ ক্যালোরি): ১ গ্লাস বাটারমিল্ক/ডাবের জল + (১ প্লেট কাঁচা সব্জির স্যালাড) অথবা (১ কাপ লম্বা করে কাটা শশা ও গাজর)
মিল ৫ (৫০০ ক্যালোরি): (ঘি লাগানো ২ টি রুটি এবং ডাল ও সবজি) অথবা (১ টি- আলু ও চীজ সহযোগে হোল হুইট ভেজ স্যান্ডউইচ বাটার) অথবা (ঘি লাগানো ২ টি রুটি এবং লো ফ্যাট পনিরের সব্জি) অথবা (বাটার ছাড়া ২ টি হোল হুইট পাউরুটি এবং ৩ টি ডিমের সাদা অংশ ও সব্জি দিয়ে অমলেট বা ভুর্জি)
মিল ৬ (৫০ ক্যালোরি): (১/২ কাপ ফ্রুট স্যালাড/ফ্রুট ইয়োগার্ট) অথবা (১ মুঠো ছোলা ভাজা/২০ থেকে ২৫টা বাদাম ভাজা)
মিল ৭ (৪০০ ক্যালোরি): (১ বাটি ব্রাউন রাইস এবং সব্জি দিয়ে ডাল/চিকেন কারি) অথবা (সব্জি ও কাবুলি চানা দিয়ে কিনোয়ার পোলাও)
মিল ৮ (৫০ ক্যালোরি): ১ কাপ লো ফ্যাট দুধ চিনি ছাড়া
(লেখক ইউকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন এবং পেশায় পুষ্টিবিদ।)