ঘড়ি ধরে মিলিয়ে নিন কখন কী খাবেন। ছবি: শাটারস্টক।
বয়স ষাটের গণ্ডি পেরিয়েছে মানেই সবকিছু খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিতে হবে এমনটা একেবারেই নয়। বরং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে রোজই এবং অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে। একটি বয়সের পরে সুষম খাদ্যতালিকা মেনে চলাই জরুরি। কী খাবেন আর কী বাদ দেবেন, কখন খাবেন এবং কতটা, তা-র সঠিক জ্ঞান থাকতেই হবে। সে জন্যই ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) বয়স্কদের জন্য বিশেষ ডায়েট চার্ট তৈরি করেছে। সকাল থেকে রাত অবধি, কখন কী খাবেন বিস্তারিত জেনে নিন জাতীয় সংস্থাটির মতানুযায়ী।
একজন ষাটোর্ধ্ব প্রবীণা সংসার সামলাতে গিয়ে, নিজের প্রতি দায়িত্ব নেন না। আবার বাড়ির সকলে যে যাঁর কাজে ব্যস্ত হওয়ায় অধিকাংশ দিনই হয়তো ঠিক মতো তিনি খাবার খান না। আবার ষাটোর্ধ্ব একজন পুরুষের বয়সকালে পৌঁছে ডায়েট মেনে চলার কথা মনে থাকে না। হয়তো বাড়ির সকলের আড়ালেই তিনি দেদার মিষ্টি খেয়ে ফেলেন অথবা বাইরে বেরিয়ে শিঙাড়া, কচুরি খেয়ে আসেন। ছোটদের মতো বয়স্করাও খাবার নিয়ে টালবাহানা করেন অনেক সময়েই। যদি কোনও জটিল রোগ না-ও থাকে, তা হলেও বয়স ষাটের গণ্ডি পেরিয়ে সত্তরের দিকে এগোতে না এগোতেই শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যা দেখা দেয়। এই বয়সে সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় ‘ইটিং ডিজ়অর্ডার’। অনেকের যেমন খাবারে অনীহা তৈরি হয়, তেমনই অনেকের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে নেওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়। ঘন ঘন বদহজম, পেটখারাপ, কোষ্ঠকাঠিন্য, গাঁটে গাঁটে ব্যথা— এগুলো বয়সকালের স্বাভাবিক সমস্যা। তাই এই সময় বয়স্কদের সুষম খাদ্যাভ্যাস খুব জরুরি।
কী কী খাবেন এবং কখন?
১) প্রথমত, মনে রাখতে হবে একবারে বেশি ভারী খাবার না খেয়ে, বারে বারে অল্প অল্প করে খেতে হবে।
২) বাইরের খাবারের বদলে বাড়িতে তৈরি কম তেলমশলাযুক্ত খাবার দেওয়া উচিত। যদি দাঁতের সমস্যা থাকে বা চিবিয়ে খেতে না পারেন, তা হলে গলা ভাত, সেদ্ধ সবজি বা তরল জাতীয় খাবারই বেশি খেতে হবে।
৩)প্রাতরাশ খেয়ে নিতে হবে সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে। প্রাতরাশে খেতে পারেন দুধ-কর্নফ্লেক্স, অথবা এক বাটি ডালিয়ার খিচুরি, না হলে সব্জি দিয়ে ওটস। দুধ হজম না হলে হাতে গড়া দু’টি গরম রুটি আর এক বাটি সব্জি খান। সঙ্গে যে কোনও একটি মরসুমি ফল। চিবিয়ে খেতে সমস্যা হলে ফলের রস করে খেতে পারেন।
৪) দুপুরের খাওয়া সারতে হবে বেলা ১টা থেকে ২টোর মধ্যে। এক থেকে দুই কাপ ভাত (শরীর বুঝে), এক বাটি ডাল, এক বাটি সব্জি অল্প তেলে রান্না করা, মাছ, মাংস অথবা ডিম। মাংস খেলে সব্জি দিয়ে স্ট্যু বানিয়ে খাওয়াই ভাল। তেল যতটা সম্ভব কম খাওয়া যায়, ততই ভাল। খাবার পাতে কাঁচা নুন একদমই চলবে না। রান্নায় চিনির মাত্রা কমাতে হবে। খাওয়ার পরে টক দই খেতে পারেন। বাড়িতে পাতা টক দই হলেই বেশি ভাল হয়। টক দই খুব ভাল প্রোবায়োটিক। দই অন্য খাবার হজম করায়।
৫) দুপুরের খাবারের এক ঘণ্টা পরে মুসাম্বি বা লেবু জাতীয় ফল খেলে ভাল হয়।
৫) বিকেল ৪টে থেকে ৫টার মধ্যে এক কাপ চা (দুধ, চিনি ছাড়া হলেই ভাল),সঙ্গে হালকা স্ন্যাকস খাওয়া যেতে পারে। চিঁড়েতে আয়রন আছে। মুড়ি মেখে খেতে পারেন। রোজকার খাদ্যতালিকায় ড্রাই ফ্রুটস রাখা যেতে পারে, একটা খেজুর, দু’টি করে আখরোট, কাঠবাদাম, চিনেবাদাম, কিশমিশ খাওয়া যেতে পারে।
৬) রাতের খাওয়া ৯টার মধ্যে সেরে নিলে ভাল। রাতে ভাত খাওয়ার অভ্যাস থাকলে এক কাপের বেশি নয়, না হলে দু’টি রুটি, এক বাটি সব্জি খেতে পারেন।
আর যা যা মনে রাখবেন
১) বয়স্কদের দিনে যে কোনও দু’রকম প্রাণিজ প্রোটিন দিন। ডিম খেয়ে হজম না হলে, ডিমের কেবল সাদা অংশটি দিন। হজমের জন্য এবং পুষ্টিগুণেও মাংসের থেকে মাছ খাওয়া ভাল।
২) সবরকম ডাল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেতে হবে। সবুজ শাকসব্জি বেশি খেতে হবে।
৩) ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রোজের খাদ্যতালিকায় থাকা জরুরি। চিয়া বীজ, আখরোট, সয়াবিনে এবং মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ আছে।
৪) ফাইবার-সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে আপেল, কলা, স্ট্রবেরি, বিট, গাজর, ব্রকোলি পড়বে।
৫) বয়সকালে হাড়ের সমস্যা, বাতের ব্যথা ভোগায়। তাই ক্যালসিয়ামও জরুরি। দুধ, ছানা, পনির, দই, পালং শাক থেকে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালশিয়াম পাওয়া যাবে। দুধ হজমে সমস্যা থাকলে ছানা খাওয়া যেতে পারে।
৬) বয়স হলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। দিনে একটা-দু’টি খেজুর খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
মনে রাখবেন, চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে বাজারচলতি ভিটামিন বা কোনও সাপ্লিমেন্ট খাবেন না।
এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। প্রবীণদের শারীরিক অবস্থা দেখে ডায়েট ঠিক করা উচিত। যদি কোনও রকম অসুস্থতা থাকে, ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অথবা জটিল অসুখ থাকলে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ মতোই ডায়েট মেনে চলতে হবে।