ত্বকের সাস্থ্য ভাল রাখে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। ছবি: ফ্রিপিক।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব হলে ত্বকে প্রদাহজনিত সমস্যা বাড়ে? ত্বকে যে নাছোড় ব্রণ, ফুসকুড়ি বা র্যাশের সমস্যা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন, তার নেপথ্যেও নাকি আছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডই। এমনই দাবি করা হয়েছে এক গবেষণায়। ‘কসমেটিক ডার্মাটোলজি’ নামে একটি বিদেশী গবেষণাপত্রে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, যেখানে গবেষকেরা দাবি করেছেন শরীরে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব হলে, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা বেড়ে যায়। এমনকি ত্বকে সংক্রমণজনিত রোগের ঝুঁকিও বাড়ে।
অসুখবিসুখের সঙ্গে লড়াই হোক, বা চোখ, হাড়ের যত্ন— ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ছাড়া সবই অসম্পূর্ণ। গাঁটে গাঁটে ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন বা চোখের দৃষ্টি কমছে? এ সবই কিন্তু এই ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাবজনিত লক্ষণ। শরীরের পুষ্টির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতেও ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের বিশেষ ভূমিকা আছে। চিকিৎসকেরা তাই রোজের খাবার এমন ভাবে ঠিক করতে বলেন, যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে ঢোকে। এর অভাব হলে যে ত্বকেরও বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে, তা এত দিন সেই ভাবে জানা ছিল না।
ত্বক বিশেষজ্ঞেরা ১০০ জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারীর উপর পরীক্ষা করে দেখেছেন,যাঁদের শরীরে এই ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি রয়েছে, তাঁরাই মূলত ত্বকের সমস্যায় ভুগছেন।কেন এমন হয়? এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, ‘শরীরের ভিতরে নানা কাজকর্ম চালাতে যে সব ‘পলিস্যাচুরেটে়ড ফ্যাটি অ্যাসিড’-এর প্রয়োজন হয়, তার মধ্যে অন্যতম এই ওমেগা ৩’। যে হেতু অন্যান্য ফ্যাটের মতো শরীর ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আলাদা করে তৈরি করতে পারে না, তাই খাবারদাবার থেকেই এটি সংগ্রহ করতে হয়। ‘রোজের ডায়েটে এমন খাবার রাখতে হয় যাতে এই ফ্যাটি অ্যাসিডের চাহিদা মিটে যায়। অথবা ওমেগা ৩ সাপ্লিমেন্টনিতে হবে’।
শম্পার কথায়, ওমেগা ৩-এর অভাব হলে শরীরে বিভিন্ন প্রদাহজনিত সমস্যা হতে পারে। তার মধ্যে ত্বকও আছে। তাই এর অভাব হলেই ব্রণ, ফুসকুড়ির সমস্যা বেড়ে যায়। ত্বকের প্রসাধনী ব্যবহার না করে বরং খাওয়াদাওয়ায় নজর দিলে এই সমস্যা দ্রুত মিটবে যাবে। সাপ্লিমেন্ট নয়, রোজের খাবার থেকেই ওমেগা ৩ফ্যাটি অ্যাসিডের চাহিদা মেটানোর পরামর্শই দিচ্ছেন পুষ্টিবিদ।
কী কী খেতে হবে?
সামুদ্রিক মাছই এর প্রধান উৎস হলেও ‘আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড’ গোত্রের ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যাবে সবুজ শাকসব্জি ও সয়াবিনে। স্যামন,টুনা-সহ নানা সামুদ্রিক মাছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রচুর পরিমাণে থাকে। তবে বাঙালি বাড়িতে এই ধরনের মাছ আসে না। সে ক্ষেত্রে রুই, কাতলা,ইলিশ, ম্যাকারেল খেলে ওমেগা ৩ পাওয়া যেতে পারে। রুই মাছে ওমেগা ৩ ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাসিয়ামও থাকে।
ক্যানোলা তেল সর্ষের তেলেরই এক প্রকার পরিশুদ্ধ রূপ। এই তেলে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। পাশাপাশি তিসি ও সয়াবিনের তেলেও ওমেগা ৩ থাকে।
আখরোট ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের খুব ভাল উৎস। নিয়ম করে প্রতি দিন একমুঠো (৫ -৬টি) আখরোট খেলে খুব উপকার হবে।
ওমেগা ৩-এর খুব ভাল উৎস হল তিসি বীজ। আপনি যদি নিরামিষাশী হন, তা হলে আপনার ডায়েটে রাখতেই পারেন তিসি বা ‘ফ্লেক্স সিড’। অল্প তেলে ভেজে স্বাদ মতো নুন ছড়িয়ে দিলেই খেতে সুস্বাদু হয় এই বীজ। আপনি চাইলে ওট্সের সঙ্গেও খেতে পারেন।
চিয়া বীজও ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। দু’চা চামচ চিয়া বীজ রোজ খেলে৫ গ্রামের মতো ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যাবে।
ছোট বাঁধাকপির মতো এক ধরনের সব্জি হল ‘ব্রাসেলস স্প্রাউট’। এখন ভারতের বাজারেও পাওয়া যায়। ‘ব্রাসেলস স্প্রাউট’-এর অঙ্কুরে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। আধ কাপ ব্রাসেলস স্প্রাউট’-এর অঙ্কুরে প্রায় ৪৪ মিলিগ্রামের মতো ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে ওমেগা ৩। কোষের ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করে। নষ্ট হয়ে যাওয়া কোষগুলিকে সরিয়ে সেখানে নতুন কোষ তৈরি ও তা বিভাজনে বিশেষ সহযোগিতা করে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড।