হার্ট অ্যাটাক ধরতে পারবে যন্ত্র! ছবি: ফ্রিপিক।
হৃদ্রোগ হানা দেবে কি না, তা আগেভাগেই ধরতে পারবে যন্ত্র? অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রয়োগে এমন যন্ত্র তৈরি করেছেন, যা হার্টের অবস্থা নিরীক্ষণ করে বলতে পারবে যে, আগামী দশ বছরের মধ্যে সেই ব্যক্তির হৃদ্রোগের সম্ভাবনা রয়েছে কি না।
‘ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন’ তাদের একটি গবেষণাপত্রে দাবি করেছে, এআই পরিচালিত এই যন্ত্র হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর হার অনেক কমিয়ে দেবে। প্রায় সাড়ে তিন লাখ হার্টের রোগীর উপরে পরীক্ষা করে এই দাবি করেছেন গবেষকেরা। বুকে মাঝেমধ্যেই ব্যথা হয়, সিটি স্ক্যান করিয়েছেন, এমন রোগীদেরই বেছে নেওয়া হয়েছে যন্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য। তাতে ভাল ফল পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি।
কী ভাবে কাজ করবে এই যন্ত্র? অক্সফোর্ডের গবেষকেরা বলছেন, এআই পরিচালিত ওই যন্ত্র ‘স্ক্যান’ করে বলে দিতে পারবে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে হার্টের অবস্থা কেমন থাকবে। হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা আছে কি না। এই যন্ত্রের কার্যকারিতা এখনও পরীক্ষানিরীক্ষার স্তরেই আছে। বিভিন্ন রোগীর উপরে পরীক্ষা করে তাঁদের পর্যবেক্ষণে রেখেছেন গবেষকেরা।
হার্টের রোগ এখন ঘরে ঘরে। হাঁটতে-চলতে, জিম করতে গিয়ে, নাচতে গিয়ে কখন যে আচমকা হৃৎস্পন্দন থেমে যাচ্ছে, তা আগে থেকে ধরার উপায়ই নেই। দিব্যি সুস্থ মানুষ, কিন্তু হঠাৎ করেই বুকে ব্যথা, দরদর করে ঘাম, তার পরেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে সব শেষ। সাম্প্রতিক সময়ে এমন ঘটনা অসংখ্য ঘটেছে।
হার্টের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সময় থাকতে পরীক্ষা করান না বেশির ভাগ মানুষই। তাই হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, তা বোঝার সাধ্য কারও নেই। হার্ট অ্যাটাক যে কোনও বয়সে, যে কোনও সময়ে হতে পারে। ইদানীং কালে ‘সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক’-এর শিকারও হচ্ছেন অনেকে। এ ক্ষেত্রে আগে থেকে উপসর্গ ধরা পড়ে না, আচমকাই ঘটে যায়। রোগীকে বাঁচানোর সময়টুকুও পাওয়া যায় না।
চিকিৎসকদের মত, ব্যস্ত জীবনযাপনে অতিরিক্ত মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, শরীরচর্চা না করা, তার উপরে নেশার প্রকোপ হৃদ্রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন বা ডায়াবিটিসের রোগী কিংবা যাঁদের স্থূলতার সমস্যা রয়েছে, তাঁদের হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি। এর পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভাজাভুজি, বাইরের তেল-মশলাদার খাবার বেশি খাওয়ার অভ্যাসও কিন্তু হার্টের অসুখের দিকে আমাদের ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।
বেশির ভাগ হার্ট অ্যাটাকে বুকের মাঝখানে বা বাঁ দিকে অস্বস্তি হয়, যা কয়েক মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়। সেই সঙ্গেই দরদর করে ঘাম হতে পারে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে থাকলেও ঘাম হওয়া, শ্বাস নিতে সমস্যা বা দম বন্ধ হয়ে আসা এর লক্ষণ। যদি মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখেন, দরদর করে ঘামছেন, তা হলে উপেক্ষা করবেন না। এই লক্ষণ কিন্তু হৃদ্রোগের ইঙ্গিত দেয়। বুকে ব্যথা বা চাপ লাগার মতো অনুভূতি হলে অবশ্যই চিকিৎসককে জানান।