Cancer Prevention

ক্যানসারের যম করোনা? ভাইরাস দিয়ে মারণরোগ সারানোর দাবি বিজ্ঞানীদের, কী ভাবে তা সম্ভব?

কাঁটা দিয়েই কাঁটা তোলার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। মারণরোগ নির্মূল করতে মারণ ভাইরাসকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। তাই বলে ক্যানসার সারাতে পারবে করোনা ভাইরাস?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:০৭
New research has revealed a connection between covid-19 and cancer regression

ক্যানসার নির্মূল করতে পারবে করোনা ভাইরাস? প্রতীকী ছবি।

ক্যানসার বশে আনতে পারবে করোনা ভাইরাস? এ কেমন দাবি করলেন বিজ্ঞানীরা? ‘ক্লিনিকাল ইনভেস্টিগেশন’ নামক একটি বিজ্ঞান পত্রিকায় নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি-র কয়েক জন বিজ্ঞানী দাবি করে বসেছেন যে, মারণরোগ নির্মূল করতে মারণ ভাইরাসকেই কাজে লাগানো যেতে পারে। কারণ, করোনা নাকি ক্যানসারের যম। প্রাথমিক গবেষণায় পশুদের শরীরে পরীক্ষা করে করোনা ভাইরাসকে ক্যানসার কোষ নষ্ট করতে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। তার থেকেই এমন দাবি।

Advertisement

কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা

কথায় বলে বিষে বিষে বিষক্ষয়। ক্যানসার সারাতে এখন করোনা ভাইরাসকেই হাতিয়ার করার চেষ্টা করছেন নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা। মুখ্য গবেষক অঙ্কিত ভরত ও তাঁর সতীর্থরা এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছেন। অঙ্কিত জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে পশুর শরীরে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করে দেখা গিয়েছে, করোনা বা সার্স-কভ-২ ভাইরাসের ‘আরএনএ’ ক্যানসার কোষ নষ্ট করতে সক্ষম। এই ‘আরএনএ’ হল জীবকোষের মধ্যে থাকা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উপাদান যার হাতেই রয়েছে জিনের কাজ নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি। বিজ্ঞানীদের দাবি, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধী কোষগুলি বেশি রকম সক্রিয় হয়ে ওঠে। তখন তারা ক্যানসার কোষগুলিকে ছড়িয়ে পড়তে বাধা দেয়।

কী ভাবে তা সম্ভব?

শরীরে জীবাণু সংক্রমণ হলে শ্বেত রক্তকণিকায় থাকা রোগ প্রতিরোধী কোষ (ইমিউন কোষ) মোনোসাইট সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই মোনোসাইট ধীরে ধীরে রক্তনালি দিয়ে সারা শরীরে বাহিত হতে থাকে। কিন্তু মোনোসাইটের ক্ষমতা সীমিত। তারা জীবাণু মারতে পারলেও ক্যানসার কোষ অবধি পৌঁছতে পারে না। তার জন্য বিশেষ এক রকম ‘রিসেপ্টর’ লাগে যা মানুষের শরীরে তৈরি হয় না। কিন্তু বিজ্ঞানীরা দেখলেন, করোনা শরীরে ঢোকার পরেই সাধারণ মোনোসাইট কোষই বদলে গিয়ে ‘ননক্লাসিকাল মনোসাইট’ নামে আরও এক ধরনের কোষ তৈরি করছে। নতুন কোষটিতে আবার ‘সিসিআর২’ নামে এক ধরনের ‘রিসেপ্টর’ তৈরি হচ্ছে যার সাহায্যে ক্যানসার কোষ অবধি পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। আর এক বার ক্যানসার কোষের নাগাল পেলেই তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে নষ্ট করে দেওয়াও সম্ভব। আর সেটিই করছে করোনা ভাইরাস।

কতটা ভরসার যোগ্য নতুন গবেষণা?

এই বিষয়ে বিশিষ্ট ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের মত, “কোভিডের জন্য অনেক ক্ষতি হতে দেখেছি আমরা। ক্যানসার রোগী করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে তার শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকেই গিয়েছে। করোনার কারণে চিকিৎসাও দেরি হয়েছে। কিন্তু এখন গবেষণায় দাবি করা হচ্ছে, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ছে। ক্যানসারের মতো মারণরোগ করোনা ভাইরাস দিয়ে নির্মূল করা সম্ভব কি না, তা জানতে হলে অনেক দূর অবধি গবেষণাটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কেবলমাত্র একটি গবেষণাপত্র দিয়ে তা প্রমাণ করা সম্ভবই নয়।” গৌতমবাবুর বক্তব্য, গবেষণাটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ক্যানসার সারছে কি না, তা জানতে হলে দীর্ঘমেয়াদে গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন। তবে যদি তা আশার আলো দেখাতে পারে তা হলে খুব বড় লাভ হবে। বহু মানুষের প্রাণ বাঁচবে।

করোনা ভাইরাস দিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে আদতে ইমিউনোথেরাপিরই চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। এমনটাই বললেন ক্যানসার চিকিৎসক শুভদীপ চক্রবর্তী। তাঁর মতে, “করোনা দিয়ে ক্যানসার সারানোর পদ্ধতি কতটা সফল হবে, তা জানতে কম করেও পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে। গবেষণাটি সবে পশুর উপর ট্রায়াল করা হয়েছে। মানুষের শরীরে পরীক্ষা না করা নিশ্চিত হওয়া সম্ভবই নয়। সকলের শরীর সমান নয়। করোনা এক জনের শরীরে ঢুকে ক্যানসার প্রতিহত করতে পারলেও, অন্য জনের শরীরে তার কী প্রভাব পড়বে, তা-ও অজানা। তাই গবেষণাটি যত ক্ষণ না শেষ হচ্ছে, কোনও কিছুই বলা সম্ভব নয়।”

শুভদীপবাবু আরও জানালেন, আমেরিকায় গবেষণাটি সাফল্য পেলেও তার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সর্বস্তরেই হওয়া উচিত। কারণ প্রতিটি দেশের আবহাওয়া, জলবায়ুগত বৈচিত্র্য, সেখানকার বাসিন্দাদের শরীরের গঠন, রোগ প্রতিরোধশক্তি ভিন্ন। কাজেই মারণ ভাইরাস শরীরে ঢোকালে তা মারণরোগ সারাবে নাকি ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবে, তা জানতে এখনও বহুদূর যেতে হবে।

আরও পড়ুন
Advertisement