Antibiotic Resistance

সুপারবাগ নির্মূল করবে ‘ন্যাফিথ্রোমাইসিন’, অনুমোদনের অপেক্ষায় দেশের তৈরি অ্যান্টিবায়োটিক

কেন্দ্রের বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধীনে মুম্বইয়ের একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যান্টিবায়োটিকটি তৈরি করেছে বলে খবর। ওষুধটির তিন পর্যায়ের ট্রায়াল সফল হওয়ার পরেই সেটি দেশের বাজারে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:৪৭
India’s first indigenously developed antibiotic Nafithromycin to combat Drug Resistance

অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী জীবাণুদের বধ করতে নতুন ওষুধ বানালেন বিজ্ঞানীরা। প্রতীকী ছবি।

অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েও মরবে না, এমন সব সংক্রামক জীবাণু নাশ করতে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি হল দেশে। নাম ‘ন্যাফিথ্রোমাইসিন’। কেন্দ্রের বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধীনে মুম্বইয়ের একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যান্টিবায়োটিকটি তৈরি করেছে বলে খবর। ওষুধটির তিন পর্যায়ের ট্রায়াল সফল হওয়ার পরেই সেটি দেশের বাজারে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে।

Advertisement

অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী জীবাণুদের নির্মূল করতে এই প্রথম দেশজ প্রযুক্তিতে অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করল মুম্বইয়ের সংস্থা ওকহার্ট ফার্মাসিউটিক্যালস। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ সাংবাদিক বৈঠক করে খবরটি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ওষুধটি কেন্দ্রীয় ড্রাগ নিয়ামক সংস্থার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন পেলেই সেটি দেশের বাজারে নিয়ে আসা হবে।

কী কাজ করবে এই অ্যান্টিবায়োটিক?

সহজ করে বললে, অ্যান্টিবায়োটিকেও মরে না এমন সব ব্যাক্টেরিয়াদেরই মারবে এই ওষুধ। ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজ়িস্ট্যান্স’ বা ‘অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল রেজ়িস্ট্যান্স’ (এএমআর) নিয়ে এখন বিশ্ব জুড়েই হইচই হচ্ছে। রোগ হল কি হল না, যখন-তখন অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলার প্রবণতা থেকেই জন্ম হয়েছে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজ়িস্ট্যান্স’-এর। যার ফলে এমন সব সংক্রামক ব্যাক্টেরিয়ার জন্ম হয়েছে, যারা ওষুধেও মরবে না। এদের বলা হচ্ছে ‘সুপারবাগস্’।

যেমন ধরা যাক, জ্বর হল, আর চিকিৎসককে না দেখিয়েই কোনও অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেললেন। আবার পেটের অসুখ হলেই মেট্রোনিডাজ়োল গোত্রের ওষুধ চালান করলেন পেটে। শুধু নিজেই খেলেন না, শিশু ও বয়স্কদেরও খাওয়ালেন। আবার রোগ যখন সারার মুখে, তখন নিজে থেকেই ওষুধটি খাওয়া বন্ধ করে দিলেন। ফলে অ্যান্টিবায়োটিকের নির্ধারিত কোর্স শেষই হল না। এতে জ্বর সারল ঠিকই, কিন্তু অন্য বিপত্তিও বাধল। জ্বরের জীবাণুরা ঝিমিয়ে গেল, কিন্তু মরল না। উল্টে অ্যান্টিবায়োটিককে চিনে নিয়ে তার প্রতিরোধী সুরক্ষাকবচ বানিয়ে ফেলল। তার পর শরীরের ভিতরেই তারা বংশবিস্তার শুরু করল। নতুন জীবাণুরা কিন্তু সেই অ্যান্টিবায়োটিককে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা নিয়েই জন্মাবে। তাদের কোষের বাইরে লাইপোপলিস্যাকারাইড বা এলপিএস নামে এক ধরনের আবরণ তৈরি হবে, যা ভেদ করে অ্যান্টিবায়োটিকও প্রভাব খাটাতে পারবে না। ফলে যখন আবার জ্বর হবে ও সেই নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিকই খাবেন, তখন তা আর শরীরে কাজই করবে না।

দিন দিন বিশ্ব জুড়ে এই সুপারবাগস্‌-ই বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, সাবধান না হলে এমন একটা সময় আসতে পারে, যখন অধিকাংশ সুপারবাগ-এর সঙ্গে লড়ার মতো কোনও ওষুধই পাওয়া যাবে না। ফলে বহু রোগের চিকিৎসা করাই সম্ভব হবে না।

সম্প্রতি ‘দ্য ল্যানসেট’-এর গবেষণাতেও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণের কথা উঠে এসেছে। গবেষকেরা বিশ্বের ২০৪টি দেশে সমীক্ষা চালিয়ে দাবি করেছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণের কারণেই প্রায় ৩ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে শিশু ও বয়স্কদের ঝুঁকি বেশি।

ঠিক যেমন ‘ড্রাগ রেজ়িস্ট্যান্ট নিউমোনিয়া’। ছোটদের শরীরে বেশি ধরা পড়ছে। নিউমোনিয়ার জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে, ফলে এত দিনের যে ওষুধে নিউমোনিয়া সারত তা আর ঠিকমতো কাজই করছে না। মূত্রনালির সংক্রমণ, টাইফয়েড, রক্তের কয়েক রকম সংক্রমণজনিত রোগ সারাতে আর চেনা ওষুধগুলি কাজেই লাগছে না। তাই নতুন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির ভাবনাচিন্তা শুরু করেন চিকিৎসকেরা।

কেন্দ্রের বায়োটেকনোলজি বিভাগ বা ডিবিটি-র উদ্যোগে বায়োটেকনোলজি ইন্ডাস্ট্রি রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্স কাউন্সিল (বিআইআরএসি) দেশীয় প্রযুক্তিতেই অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই অনুযায়ী গবেষণাও শুরু হয়। ওষুধ তৈরির বরাত দেওয়া হয় মুম্বইয়ের ওকহার্টকে। জানা গিয়েছে, তিন দিনের কোর্সে ওষুধটি দেওয়া হবে রোগীদের। এখনও পর্যন্ত ওষুধটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি। কেন্দ্রের অনুমোদন পেলে বছরে কয়েক লাখ ওষুধের ডোজ় তৈরি হবে এ দেশেই।

আরও পড়ুন
Advertisement