কী ভাবে করবেন চক্রাসন? চিত্রাঙ্কন: শৌভিক দেবনাথ।
থাইরয়েড গ্রন্থির অতিসক্রিয়তা কিংবা নিষ্ক্রিয়তার কারণেই যত সমস্যা! তবে এই সমস্যা নতুন নয়। সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, এই হরমোনের হেরফেরে পৃথিবীর অন্তত ১৫ শতাংশ মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত। মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগতে দেখা যায় অনেককে। থাইরয়েডের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে না রাখলে ওজন বেড়ে যেতে পারে। শারীরবৃত্তীয় অনেক কাজেই ব্যাঘাত ঘটে যায় এই হরমোনের হেরফেরে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ার পাশাপাশি জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে পারলে সমস্যা অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যোগ প্রশিক্ষকেরা অবশ্য বলছেন, তার সঙ্গে নিয়মিত চক্রাসন অভ্যাস করলেও কাজ হয়।
‘চক্রাসন’ কিন্তু খুব সহজ আসন নয়। সংস্কৃতে ‘চক্র’ কথাটির অর্থ হল চাকা। অর্থাৎ শরীরের ভঙ্গি এমন হবে, যেন বাইরের থেকে দেখলে তা চাকার মতো লাগে। প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে থেকে এই আসন অভ্যাস করা উচিত।
কী ভাবে করবেন?
· প্রথমে ম্যাটের উপর টান টান হয়ে শুয়ে পড়ুন। শ্বাস-প্রশ্বাস যেন স্বাভাবিক থাকে। এ বার ধীরে ধীরে হাঁটু ভাঁজ করুন। পায়ের পাতা যেন মাটি স্পর্শ করে থাকে।
· এ বার দুই হাত ধীরে ধীরে উপরের দিকে প্রসারিত করুন। কনুই উল্টো দিকে ভাঁজ করে নিয়ে যান মাথার দু’পাশে। দু’হাতের তালু দু’কাঁধের তলায় রাখুন।
· এ বার পা এবং হাতের পাতার উপর ভর দিয়ে পুরো শরীরটাকে মাটি থেকে শূন্যে তুলে নিন। মাথা যেন মাটি স্পর্শ করে থাকে।
· মাটি থেকে মাথা তুলে নেওয়ার পর গোটা দেহের ভার থাকবে হাত এবং পায়ের পাতায়। শরীরের ভার বহন করা এবং ভারসাম্য রাখার প্রক্রিয়াটি আগে সঠিক ভাবে বুঝে নেওয়া প্রয়োজন।
· সেই আত্মবিশ্বাস থাকলে ধীরে ধীরে মাটি থেকে মাথা সরিয়ে নিন। ভাঁজ করা কনুই টান টান করুন। দু’পায়ের পাতায় চাপ দিয়ে গোটা শরীর উপর দিকে ধীরে ধীরে ঠেলুন। ঘাড় ঘুরিয়ে মাথা এমন ভাবে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখুন, যেন চোখ থাকে মাটির দিকে।
· হাঁটু সামান্য ভাঁজ করে পায়ের পাতা টেনে নিয়ে যান হাতের তালুর কাছাকাছি। শরীরের ভঙ্গি যতটা সম্ভব বৃত্তাকার বা চাকার মতো যেন হয়।
· এ বার ধীরে ধীরে গোড়ালিও মাটি থেকে তুলে দিন। শুধু পায়ের আঙুলের উপর শরীরের ভার রাখার চেষ্টা করুন। (চাইলে এই পর্যায়টি বাদ দিতে পারেন)
· এই অবস্থানে থাকুন ১৫ থেকে ৩০ সেকেন্ড।
· আবার হাঁটু, কনুই ভাঁজ করে ধীরে ধীরে আগের অবস্থানে ফিরে আসুন। মাথা রাখুন মাটিতে। কোমর, পিঠ মাটি স্পর্শ করলে পা সোজা করে ছড়িয়ে দিন। দুই হাত রাখুন দেহের দু’পাশে।
কেন করবেন?
থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি হার্টের স্বাস্থ্যও ভাল রাখে চক্রাসন। ফুসফুসের বাতাস ধারণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। হাত, কাঁধ, পা ও মেরুদণ্ডের জন্য এই আসন উপকারী। নিয়মিত চক্রাসন অভ্যাস করলে তা সন্তানধারণের পক্ষে সহায়ক হয়।
সতর্কতা:
কব্জিতে ব্যথা, ‘কার্পেল টানেল সিনড্রোম’-এর মতো সমস্যা থাকলে এই আসন করা যাবে না। কোমরে আগে থেকে ব্যথা থাকলে এই আসন না করাই ভাল। আসন অভ্যাস করতে গিয়ে যদি দেহের কোনও পেশিতে টান লাগে, তা হলে এই আসন অভ্যাস করা যাবে না। উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও এই আসন অভ্যাস করা নিষিদ্ধ।