কী এই পোকা, কোন কোন লক্ষণ দেখলেই চিকিৎসকের কাছে যাবেন। —ফাইল চিত্র।
বর্ষা এলেই পোকায় কাটা জ্বরের আতঙ্ক বাড়ে। গত বছর উত্তরবঙ্গে এমন ছোট ছোট পোকার কামড়ে আসা জ্বর সংক্রমণের আকার নিয়েছিল। আক্রান্ত হয়েছিল শিশুরাও। এই বিষয়ে চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলছেন, এঁটুলি পোকার মতো দেখতে ট্রম্বিকিউলিড মাইটস বা টিক-এর মতো পরজীবী পোকার কামড় থেকে এই রোগের জীবাণু মানবদেহে ছড়ায়। এই পোকাগুলির আকার ০.২ মিলিমিটার থেকে ০.৪ মিলিমিটার পর্যন্ত হয়। এদের কামড়ে জ্বর, খিঁচুনির মতো উপসর্গ দেখা দেয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এই অসুখকে 'স্ক্রাব টাইফাস' বলা হয়।
এই পোকার শরীরে বাসা বাঁধে ব্যাক্টেরিয়া। পোকার কামড়ে লালার মাধ্যমে সেই ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে মানুষের শরীরে। সেই পোকার কামড়ের দাগ এই রোগ চেনার একটি উপায় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। দাগ খানিকটা সিগারেটের ছেঁকার মতো হয়। চিকিৎসক বলছেন, পোকা যেখানে কামড়াবে, সেখানে দাগের চারপাশে ছোট ছোট ফুসকুরির মতো বেরোবে। যা দেখেই সাধারণত রোগ শনাক্ত করা হয়ে থাকে। পোকা কামড়ানোর পাঁচ থেকে সাত দিন পরে জ্বর আসে। সঙ্গে বমি, পেটখারাপের লক্ষণ দেখা দেয়। চোখ লাল হয়ে যায়। শরীরের লসিকা গ্রন্থিগুলি ফুলতে শুরু করে। শিশুদের পোকা কামড়ালে গায়ে ব্যথা, পেশির খিঁচুনি দেখা দিতে পারে। শ্বাসের সমস্যাও দেখা দেয় অনেক ক্ষেত্রেই।
সাধারণত গ্রামবাংলার কৃষিজমিতে এই ধরনের পোকা দেখা যায়। শহুরে এলাকায় বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের লন বা বাগান, ঝোপঝাড়, গাছপালা কিংবা পোষ্যের গায়ে এই ধরনের পোকা হয়। অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিন এই রোগের অন্যতম ওষুধ। এই পরিস্থিতিতে জ্বর হলেই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়াই শ্রেয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে ফুসফুস, লিভার, পাকস্থলীতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। শরীরের একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
স্ক্রাব টাইফাস থেকে বাঁচতে বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। ঝোপঝাড়, আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। ঘরে যদি পোকামাকড়ের উপদ্রব থাকে, তা হলে পেস্ট কন্ট্রোল করিয়ে নেওয়া জরুরি। এই বর্ষায় ঘন জঙ্গল বা প্রচুর গাছপালা আছে, এমন কোথাও ঘুরতে গেলে শরীর ঢাকা জামাকাপড় পড়ুন। পোকামাকড় প্রতিরোধক স্প্রে সঙ্গে রাখা জরুরি। খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটবেন না বা বসবেন না। মাটিতেও শোবেন না। মশারি ব্যবহার করলে নিরাপদ থাকবেন।