Heart

উপসর্গহীন হৃদ্‌রোগও হয়, তার কারণ কী? ঝুঁকি কমানোর উপায়ই বা কী?

বাড়ছে হৃদ্‌রোগ। শরীরে কোলেস্টরেলের উচ্চমাত্রা হয়ে উঠছে বিপজ্জনক। কী ভাবে এড়াবেন ঝুঁকি, বলছেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৪ ২০:০৮
বাড়ছে হৃদ্‌রোগ। সতর্কতা কীভাবে?

বাড়ছে হৃদ্‌রোগ। সতর্কতা কীভাবে? ছবি: সংগৃহীত।

ক্রমশই বাড়ছে হৃদ্‌রোগের সম্ভবনা। বয়স হলে এই প্রবণতা বা়ড়ে ঠিকই, তা বলে এটা ভাবার কারণ নেই যে, তরুণ প্রজন্ম এ ক্ষেত্রে নিরাপদ।

Advertisement

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কোনও ক্ষেত্রে উপসর্গ যেমন থাকে, তেমনই উপসর্গহীন রোগীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। আর অনেক সময়েই বিষয়টা এমন পর্যায় পৌঁছয়, যখন আর চিকিৎসার সময়টুকুও রোগীর হাতে থাকে না। তাই ডাক্তারেরা বলছেন, ১৮ বছর হলেই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত।

তথ্য ও পরিসংখ্যাণ বলছে, গত দু’দশকে মহিলাদের হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বেড়েছে ৩০০ শতাংশ। এর পিছনে রয়েছে এএসসিভিডি বা অ্যাথেরোস্কেলোরেটিক কার্ডিয়ো ভাস্কুলার ডিজিজ।

এএসসিভিডি কী?

হার্টের চিকিৎসক রাজা নাগ জানালেন, হার্টের এই অসুখের কারণ হল অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, রক্তবাহী নালীতে ‘প্লাক’ জমা হয়, মানে ব্লকেজ তৈরি হয় নানা কারণে। সেগুলি যখন জমতে থাকে বিভিন্ন ধমনীতে, যে রক্তবাহী নালী অক্সিজেন সরবরাহ করে, সেখানে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস হয়। সেগুলি যখন ধমনীতে ব্লকেজ তৈরি করে, তখন তাকে বলে অ্যাথেরোস্কেলোরেটিক কার্ডিয়ো ভাস্কুলার ডিজিজ।

কার্ডিয়ো ভাস্কুলার ডিজিজ বলার কারণ, এটা হৃদ্‌যন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে। পাশপাশি, অন্য রক্তবাহী নালীগুলিতেও ব্লকেজের প্রভাব পড়ে। হৃদ্‌যন্ত্রের ধমনীতে ব্লকেজ হলে হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা তৈরি হয়। ঝুঁকি বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের। আবার মস্তিষ্কের ধমনীতে ‘প্লাক’ বা ব্লকেজ হলে ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। সাধারণত দেখা যায়, যাঁদের হার্টের অসুখ হয় বা ব্লকেজ থাকে, তাঁদের ব্রেন স্ট্রোক বা কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এএসসিভিডি-র কারণ কী?

ধমনীতে ‘প্লাক’ বা ব্লকেজের একাধিক কারণ রয়েছে। তার মধ্যে অবশ্যই একটা কারণ কোলেস্টেরলের মাত্রার তারতম্য বলছেন চিকিৎসকরা। খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। শরীরে দু’ধরনের কোলেস্টেরল তৈরি হয়। একটি লঘু ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন যাকে বলা হয় এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল। আর একটি উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন বা এইচডিএল যা ভাল কোলেস্টেরল নামে পরিচিত।

কোলেস্টেরল ধমনীতে জমার ফলে ‘প্লাক’ তৈরি হয়, ধমনী সরু হয়ে অক্সিজেন সরবরাহে সমস্যা তৈরি হয়। যার ফলে এএসসিভিডি হয়।

চিকিৎসক পিকে হাজরা কলকাতার এএমআরআই মনিপাল হাসপাতালের ডিরেক্টর-এর কথায়, এলডিএল বাড়ার জন্য এএসসিভিডির ঝুঁকি বাড়ে। সে কারণে কোলেস্টেরলের মাত্রা-সহ হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এমন সমস্ত কিছুরই পরীক্ষা করা উচিত। সেটা শুরু হওয়া উচিত ১৮ বছরের পর থেকেই।

মহিলাদের ক্ষেত্রে কোন বয়সে ঝুঁকি বেশি?

মেনোপজের পর মহিলাদের ইস্ট্রোজেন-সহ বেশ কিছু হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়ায় এএসসিভিডি-র ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ মাত্রার কোলেস্টরল, মধুমেহ রোগ, ধূমপানের প্রবণতাও এর পিছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে।

উপসর্গ কী?

হদ্‌রোগ বিশে়ষজ্ঞ রাজা নাগ বলছেন, উপসর্গ যেমন থাকে, তেমন অনেকের ক্ষেত্রে থাকেও না। ক্লান্তিভাব, বুক ধড়ফড় করা, বুকে চাপ অনুভব হলে সতর্ক হওয়া দরকার।

সতর্কতায় কী করা উচিত?

দুই চিকিৎসকেরই পরামর্শ এ ক্ষেত্রে ১৮ বছরের পর থেকেই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা দরকার। ইদানীং যেহেতু কম বয়সীদের মধ্যেও হৃদ্‌রোগের প্রবণতা বাড়ছে তাই কোনও সমস্যা না থাকলেও বছরে অন্তত একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা খুবই জরুরি।

আর পরিবারে হৃদ্‌রোগের ইতিহাস থাকলে, বা কারও উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস থাকলে তাঁদের ক্ষেত্রে অবশ্যই এ বিষয়ে বা়ড়তি সতর্কতা দরকার।

আরও পড়ুন
Advertisement