প্রস্রাবের সংক্রমণ বেশি হচ্ছে শিশুদের। ছবি: সংগৃহীত।
মূত্রনালীতে সংক্রমণ বা ‘ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই)’ যে কোনও বয়সেই হতে পারে। এখনকার স্কুলপড়ুয়া শিশুদের মধ্যে প্রস্রাবের সংক্রমণ খুবই বেড়ে গিয়েছে। স্কুলে যদি অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার থাকে বা শিশু জল কম খায়, প্রস্রাব চেপে রাখে, তা হলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। এমনকি এ-ও দেখা গিয়েছে, সদ্যোজাত শিশুও ভুগছে প্রস্রাবের সংক্রমণে। তারও কিছু সুর্নিদিষ্ট কারণ আছে, যা বাবা-মায়েরা বুঝতে পারেন না বেশির ভাগ সময়েই। কী ভাবে বুঝবেন সন্তানের প্রস্রাবের সংক্রমণ হচ্ছে? এর প্রতিকারে বাবা-মায়েদের কী করণীয়? চলুন, জেনে নেওয়া যাক।
বাবা-মায়েরা কী বলছেন?
আইটি কর্মী মোনালিসা গুপ্ত। তাঁর মেয়ে সবে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। নার্সারিতে পড়ে। মোনালিসা বলছেন, তাঁর মেয়ের না হলেও, স্কুলের অন্য শিশুদের মায়েরা প্রায়ই বলেন মেয়ে বাড়ি ফিরে কান্নাকাটি করে, প্রস্রাব করতে গিয়ে ব্যথা হচ্ছে বলে। জ্বরও এসে যায় মাঝেমাঝে। মোনালিসার কথায়, “স্কুলগুলি সব সময়ে পরিচ্ছন্ন থাকে না। বিশেষ করে শিশুরা যে শৌচাগারে যায়, তা অনেক সময়েই পরিচ্ছন্ন থাকে না। তা ছাড়া, শিশুরা সব সময় জল খায় না ঠিক করে। বকুনির ভয়ে প্রস্রাব চেপে রাখে। আমার মেয়েকে বোতলভর্তি জল দিলেও, বেশির ভাগ সময়েই ফিরিয়ে আনে। শিক্ষক বা শিক্ষিকাদেরও উচিত খুদে পড়ুয়াদের বার বার জল খেতে বলা বা বোতল ধরে জল খাইয়ে দেওয়া।”
সৃজিতা মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। এর মধ্যেই দু’বার প্রস্রাবের সংক্রমণ হয়ে গিয়েছে। সৃজিতা মেয়েকে শিখিয়ে দিয়েছেন, শৌচাগারে গেলে সব সময়ে কমোডে বসার জায়গাটা ভাল করে ধুয়ে এক বার ফ্লাশ করে নিতে। মেয়ের স্কুলের ব্যাগে ন্যাপকিনও দিয়ে দেন।
সন্তানের প্রস্রাবের জায়গায় সংক্রমণ হচ্ছে কি না বুঝবেন কী ভাবে বাবা-মায়েরা?
এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের পেডিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক প্রিয়ঙ্কর পাল বলছেন, “শিশুরা অনেক সময়েই বলতে পারে না, তাদের প্রস্রাবের জায়গায় জ্বালা বা যন্ত্রণা হচ্ছে কিনা। কিন্তু দেখবেন, তারা প্রস্রাব করতে যেতে ভয় পাচ্ছে। প্রস্রাব করার সময় কাঁদছে বা বলছে তলপেটে খুব ব্যথা হচ্ছে। তখন বুঝতে হবে সমস্যাটা গুরুতর। দেরি না করে কোনও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে নিতে হবে।”
আরও কিছু লক্ষণ আছে। চিকিৎসকের বক্তব্য, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে। প্রস্রাবের সংক্রমণ-জনিত জ্বর হলে সে ক্ষেত্রে সর্দিকাশি বা গলা ব্যথা থাকে না। বাবা-মাকে তখন বুঝে নিতে হবে এই জ্বর কোনও সংক্রমণজনিত কারণে হচ্ছে।
বার বার প্রস্রাবের বেগ আসবে, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ হবে, প্রস্রাব ঘোলাটে বা লালচে হতে পারে।
শরীর দুর্বল লাগবে, বমিভাব থাকবে, খিদে কমে যাবে।, তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা হবে।
চিকিৎসা কী?
সদ্যোজাত শিশু হলে বার বার ডায়াপার বদলাতে হবে। শিশু যেন ভেজা অন্তর্বাস না পরে থাকে সেটা বার বার খেয়াল করতে হবে। দীর্ঘ সময় ভেজা অন্তর্বাস পরে থাকলে বা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডায়াপার না বদলালে তার থেকেও ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে।
নাইলন বা সিন্থেটিকের বদলে সুতির ঢিলেঢালা অন্তর্বাস পরাতে হবে।
প্রতি বার প্রস্রাবের পরে শিশুর প্রস্রাবের জায়গা পরিষ্কার রাখুন। বাড়িতে শৌচাগার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
পর্যাপ্ত জল খাওয়াতে হবে। প্রস্রাবে হলুদ ভাব দেখা গেলেই দেরি না করে দিনে অন্তত আড়াই লিটার জল খাওয়ানো শুরু করা উচিত।
শিশুর প্রস্রাব বা মলের বেগ যেন চেপে না রাখে খেয়াল রাখতে হবে। কোনও ভাবেই কোষ্ঠকাঠিন্য হতে দেওয়া যাবে না।
শিশুদের মূত্রনালীর গঠনগত সমস্যা থাকলে জন্মের পর পরই প্রস্রাবের সংক্রমণ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ছোট থেকেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে সঠিক চিকিৎসা শুরু করা উচিত।
‘ইউরিনারি রিফ্লাক্স’-এর কারণেও ছোটদের মূত্রনালীতে সংক্রমণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে মূত্রনালী দিয়ে বাহিত হয়ে প্রস্রাব নীচে না নেমে উপরে উঠতে থাকে। এই সমস্যা চিহ্নিত করে চিকিৎসা না হলে পরবর্তী সময়ে আরও কঠিন অসুখের আশঙ্কা থেকে যায়।
খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সি জাতীয় ফল যেমন মুসাম্বি, কমলালেবু, কিউয়ি, ব্রকোলি, পেঁপে, স্ট্রবেরি রাখতে পারেন। তবে শিশুর ডায়েট ঠিক করার আগে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেবেন।
কী টেস্ট জরুরি: প্রস্রাবের জায়গায় সংক্রমণ হচ্ছে কি না জানতে ইউএসজি, এমসিইউজি টেস্ট করিয়ে নেওয়া খুব জরুরি।