এক ভাবে দীর্ঘ ক্ষণ ডিজিটাল যন্ত্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত।
ঘুম থেকে উঠেই চোখ খুলে ফোনের দিকে তাকানো অভ্যাস। তার পর সারা দিন নানা কাজের জন্য হয় ল্যাপটপে, নয়তো ফোনের পর্দায় চোখ রাখতেই হয়। এক ভাবে দীর্ঘ ক্ষণ ডিজিটাল যন্ত্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অনেকেরই চোখ থেকে জল পড়ে। চোখে চাপ পড়লে মাথা যন্ত্রণাও হয়। চোখ ভাল রাখতে চিকিৎসকেরা ২০ মিনিট অন্তর ২০ ফুট দূরত্বের কোনও একটি বস্তুর দিকে ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকার পরামর্শ দিলেও সকলের পক্ষে তা মেনে চলা সম্ভব হয় না। কাজ করতে করতে চোখের ব্যায়াম করাও অসম্ভব। তবে সাধারণ বেশ কয়েকটি ব্যায়াম রয়েছে, যেগুলি নিয়মিত অভ্যাস করলে, চোখের পেশির উপর বাড়তি চাপ লাঘব হতে পারে।
১) তাড়াসন
সোজা হয়ে দাঁড়ান। পায়ের পাতার মধ্যে দুই ইঞ্চি দূরত্ব রাখুন। শ্বাস নিন। হাত দুটোকে উপরে তুলে কাঁধের সমান সমান নিয়ে যান। এ বার আঙুল দিয়ে হাত দুটোকে জড়ান। হাতের তালু রাখুন বাইরের দিকে। এ বার শ্বাস নিতে নিতে মাথার উপর হাত দুটো নিয়ে যান। পায়ের গোড়ালিগুলো মাটি থেকে উপরে তুলুন। পায়ের পাতার উপর শরীরের ভারসাম্য রাখুন। এই অবস্থায় ৩ থেকে ১০ বার শ্বাস নিন। এ বার গোড়ালি নীচে নিয়ে আসুন। শ্বাস ছেড়ে আগের অবস্থায় ফিরে আসুন।
২) পদহস্তাসন
দুই পা আরামদায়ক দূরত্বে রেখে শরীর শিথিল করে দাঁড়ান। হাত থাকুক পাশে। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। শরীর টান টান করে ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে থাকুন এবং কানের পাশ দিয়ে দুই হাত সোজা করে মাথার উপরে তুলুন। এ বার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে মেরুদণ্ড দীর্ঘায়িত করে সামনের দিকে ঝুঁকতে থাকুন। আঙুল থাকবে মাটির দিকে। হাঁটু যেন বেঁকে না যায় খেয়াল রাখুন। নিচু হয়ে হাত দিয়ে পায়ের গোড়ালি জড়িয়ে ধরতে পারলে ভাল। না হলে হাত দিয়ে পায়ের পাতা ছুঁয়ে থাকুন। যতটুকু ঝুঁকতে পারবেন ততটুকু করুন। তার বেশি নিচু হওয়ার দরকার নেই। খেয়াল রাখুন, ঘাড় আর মাথা যেন আরামদায়ক অবস্থায় থাকে। পা থাকুক টান টান ও সোজা। এই অবস্থানে কয়েক সেকেন্ড থাকুন। এ বার শ্বাস নিতে নিতে মাথার উপর হাত তুলে সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং শুরুর অবস্থানে ফিরে আসুন।
৩) হলাসন
প্রথমে চিত হয়ে টানটান করে শুয়ে পড়ুন। পা দুটি একসঙ্গে জোড়া করে উপরে তুলে ধরে হাত দুটি দিয়ে কোমর ধরে রাখুন। এ বার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে দুই পা কোমর থেকে ভাঁজ করে হাঁটু পা ভেঙে পায়ের আঙুল মাটি স্পর্শ করান। এই ভঙ্গিতে শ্বাস-প্রশ্বাস অল্প অল্প করে নিন এবং ছাড়ুন। স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার সময় পা দু’টি টানটান করে উপরের দিকে রাখুন। হাত কোমর থেকে সরিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন ও ছাড়ুন। কোমর থেকে হাত সরিয়ে নিতম্ব মাটিতে ছোঁয়ান। শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পা মাটিতে রাখুন। এই আসনটি দিনে ২ থেকে ৩ মিনিট করুন। তবে কারও যদি ঘাড়ে ও কোমরে ব্যথা থাকে তা হলে এই আসন এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।
৪) চক্রাসন
দুই পায়ের মাঝখানে কাঁধের থেকে দূরত্ব রেখে শুয়ে পড়ুন। পায়ের ভাঁজ করে এমন অবস্থানে রাখুন যাতে নিতম্বের সঙ্গে গোড়ালির স্পর্শ লাগে। দুই হাত উপরে তুলে মাথার দু’পাশে হাতের তালু দুটি মাটিতে রাখুন। দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে প্রথমে নিতম্ব ও কোমর উপরে তুলুন। হাতে ভর রেখে পিঠ ও মাথা উপরে তুলে ফেলুন। আসন থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার সময়ে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পিঠ ও তার পরে কোমর নামিয়ে নিন। দৈনিক ২ থেকে ৫ বার এটি করুন। তবে যাঁরা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন তাঁদের এই আসনটি না করাই ভাল।
৫) ধনুরাসন
উপুড় করে শুয়ে পড়ুন। তার পর হাঁটু ভাঁজ করে পায়ের পাতা যতটা সম্ভব পিঠের উপর নিয়ে আসুন। এ বার হাত দুটো পিছনে নিয়ে গিয়ে গোড়ালির উপর শক্ত করে চেপে ধরুন। চেষ্টা করুন পা দুটো মাথার কাছাকাছি নিয়ে আসতে। এই ভঙ্গিতে মেঝে থেকে বুক, হাঁটু ও উরু উঠে আসবে। তলপেট ও পেট মেঝেতে রেখে উপরের দিকে তাকান। এই ভঙ্গিতে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড থাকুন। তার পর পূর্বের ভঙ্গিতে ফিরে যান। এই আসন বার তিনেক করতে পারেন।