মেজাজ চাঙ্গা রাখতে শ্রমিকদের যোগাসন করার পরামর্শ মনোবিদের। ছবি: পিটিআই।
মঙ্গলবারই প্রথম সরু পাইপলাইনের মধ্যে দিয়ে এন্ডোস্কোপিক ক্যামেরা পাঠিয়ে উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটক শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তরফে ৪১ জন শ্রমিকের শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভেবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মনোবিদ অভিষেক শর্মাকে সুড়ঙ্গের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি শ্রমিকদের শারীরিক ভাবে চাঙ্গা থাকার জন্য বিভিন্ন রকম উপদেশ দিয়েছেন।
মনোবিদ অভিষেক শ্রমিকদের সারা দিনে অন্তত ২ কিলোমিটার পথ হাঁটাহাটি করার পরামর্শ দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, শ্রমিকদের নিয়ম করে যোগাসন অভ্যাস করার কথাও বলেছেন তিনি। নিজেদের ব্যস্ত রাখার জন্য একে অপরের সঙ্গে বেশি করে কথা বলার উপদেশ দিয়েছেন মনোবিদ। অভিষেক বলেন, ‘‘শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম ভীষণ ভাবে জরুরি, এখনও পর্যন্ত সুড়ঙ্গে তাঁদের ঘুমের কোনও অসুবিধার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ঘুমের সঙ্গে শ্রমিকরা যেন কোনও ভাবেই আপস না করে তা বার বার করে বোঝানো হয়েছে।’’ শ্রমিকদের যেন মানসিক অবসাদ গ্রাস না করে সে কারণে মনোবিদের পরামর্শ মেনে সুড়ঙ্গের ভিতরে পাঠানো হচ্ছে অ্যান্টি ডিপ্রেস্যান্ট ওষুধও।
শ্রমিকেরা যেন মানসিক দিক দিয়ে ভেঙে না পড়েন, তাই বেশ কয়েক জন শ্রমিকের পরিজনকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসা হয়েছে। নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গের নিকটবর্তী হোটেলে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) শ্রমিকদের মনের জোর বৃদ্ধির জন্যই এই উদ্যোগ নিয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে ৬ ইঞ্চির খাবার সরবরাহকারী একটি পাইপের মাধ্যমে সুড়ঙ্গের ভিতরে শ্রমিকদের জন্য পোলাও, মটর পনিরের পাশাপাশি ফলও পাঠানো হয়েছে। শ্রমিকদের জন্য খাবার বানিয়েছেন সঞ্জিত রানা নামে এক রাঁধুনি। সঞ্জিত বলেন, ‘‘চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানেই হজম করতে অসুবিধা হবে না এমন খাবারই শ্রমিকদের জন্য বানানো হয়েছে। কম তেলমশলা দিয়ে ভেজ পোলাও এবং মটর পনির রান্না করেছি। মাখন দিয়ে রুটিও বানিয়েছি।’’
মঙ্গলবার রাতে প্রায় দেড়শোটি প্যাকেট পাঠানো হয়েছে সুড়ঙ্গের ভিতর। প্রতিটি প্যাকেটে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে মুড়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ পোলাও, পনির এবং দু’টি করে রুটি পাঠানো হয়েছিল। খাবারের সঙ্গে ৫ থেকে ১০ কেজি ফল পাঠানো হয়েছে। ফলের মধ্যে আপেল, লেবু ও পাঁচ ডজন কলা ছিল।
১২ নভেম্বর উত্তর কাশী জেলার ব্রহ্মকাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কের উপর সিল্কিয়ারা এবং ডন্ডালহগাঁওের মধ্যে নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গের একাংশ ধসে পড়ে। সেই দিন থেকেই সাড়ে আট মিটার উঁচু এবং প্রায় দু’কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গে আটকে রয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যের প্রায় ৪১ জন শ্রমিক। শ্রমিকদের মধ্যে তিন জন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। জোরকদমে উদ্ধারকাজ শুরু হলেও এখনও অবধি এক জনকেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।