Smoke Inhalation

আলোর বাজিতেও ঠাসা রাসায়নিক, কী ক্ষতি হয় হাঁপানি রোগীদের? ফুসফুস বাঁচানোর উপায় কী?

কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকাগুলির বাতাস এমনিতেই দূষিত। তার উপরে বাজির ধোঁয়ায় দূষণের ঘনত্ব কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। ধোঁয়া ও বাজির রাসায়নিক মিলে এমন জগাখিচুড়ি ধোঁয়াশা তৈরি করবে, যা শ্বাসের সঙ্গে টানলেই বিপদ।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৪ ১৩:০২
Effect of Diwali fumes on COPD, Asthma patient and tips to get rid of it

বাজির ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট থেকে বাঁচতে কী করতে হবে, পরামর্শ চিকিৎসকদের? প্রতীকী ছবি।

আলোর উৎসব আর রোশনাইয়ে সীমাবদ্ধ রইল কই! কলকাতা-সহ বাংলার নানা জায়গায় বাজির রমরমা বাজার। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শব্দবাজি বিক্রি কম হলেও আলোর বাজির তো আর কমতি নেই। আলোর বাজি জ্বলিয়ে তার শোভা দেখে মুগ্ধ হচ্ছি ঠিকই, তার মধ্যে এমন সব রাসায়ানিক উপাদান ঠাসা আছে শুনলে আঁতকে উঠতে হয়। কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকাগুলির বাতাস এমনিতেই দূষিত। তার উপরে বাজির ধোঁয়ায় দূষণের ঘনত্ব কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। ধোঁয়া ও বাজির রাসায়নিক মিলে এমন জগাখিচুড়ি ধোঁয়াশা তৈরি করবে যা শ্বাসের সঙ্গে টানলেই বিপদ। সাধারণ মানুষের কষ্ট তো হবেই, সিওপিডি, হাঁপানি বা অ্যালার্জির রোগীদের শ্বাসের সমস্যা আরও বেড়ে যাবে। যখন-তখন শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গুরুতর অসুস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কাও থাকবে। তাই দীপাবলিতে আনন্দ করার পাশাপাশি কী ভাবে সুস্থ ও নিরাপদ থাকবেন, সে উপায় বলে দিলেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement

সিওপিডি, হাঁপানির রোগীদের জন্য কতটা বিপজ্জনক বাজির ধোঁয়া?

বাজি পোড়ানোর ফলে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে, সেই তুলনায় সূক্ষ্ম ধূলিকণা এবং রাসায়নিকের পরিমাণ বাড়ে। কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ পালমোকেয়ার অ্যান্ড রিসার্চের চিকিৎসক পার্থসারথি ভট্টাচার্য আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “শীতের আগে এই মরসুমে সাধারণত শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়ে সিওপিডি বা হাঁপানির রোগীদের। তার উপর বাজির ধোঁয়া নাকে গেলে হাঁপানির টান উঠতে পারে। সিওপিডি এবং হাঁপানির পিছনে যে দূষকগুলি প্রধানত দায়ী, তাদের মধ্যে অন্যতম কার্বন মোনো-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড এবং ওজ়োন। এদের মধ্যে ওজ়োন বাদে বাকি দু’টি দূষকের পরিমাণই কালীপুজো, দীপাবলির পরে বাতাসে অসম্ভব বেড়ে যায়।”

বিপদের আশঙ্কা থাকে বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম ২.৫) থেকেও। কারণ, এই পিএম ২.৫ শুধুমাত্র ফুসফুসেই সীমাবদ্ধ থাকে না। তা কোনও ভাবে মস্তিষ্ক বা হৃদ্‌যন্ত্রে প্রবেশ করে স্ট্রোক এবং হৃদ্‌রোগের কারণ হতে পারে। তাই বাজি যেখানে ফাটছে তার ধারেকাছে না যাওয়াই ভাল সিওপিডি বা হাঁপানির রোগীদের। যদি কোনও কারণে সংক্রমণ বেড়ে যায়, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

শিশু, বয়স্করা সাবধান

শীতের মুখোমুখি এই সময়তে বাতাসের বিষাক্ত কণা নীচের স্তরে এসে জমা হয়। যাঁদের হাঁপানি বা সিওপিডি আছে কিংবা অ্যালার্জিক রাইনাইটিস (লাগাতার হাঁচি) হয়, তাঁদের এই সময়টাতেই কষ্ট বেশি। কলকাতার বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালের পালমোনোলজিস্ট দেবোপম চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “বাজির ধোঁয়ায় সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন মোনোঅক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, পার্টিকুলেট ম্যাটার বা বাতাসে ভাসমান কণা, অ্যালুমিনিয়াম ক্যাডমিয়াম-সহ ভারী ধাতু থাকে, যা শ্বাসযন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। তাই বাজির ধোঁয়া এড়িয়ে চলুন। সন্ধ্যার সময়ে বাড়িতেই থাকুন। শিশু ও বয়স্কদের বাইরে যেতে দেবেন না। যদি আলোর বাজি ফাটাতেই হয় তা হলে প্যাঁকাঠির আগায় ফুলঝুরি, রংমশাল লাগিয়ে তবে জ্বালান। বাইরে গেলে দু’টি সার্জিক্যাল মাস্ক পরে নিন।” দেবোপমের পরামর্শ, আলোর উৎসব রঙিন আলো জ্বালিয়েই উদ্‌যাপন করুন। বাজি পোড়ানো বন্ধ করলেই সবচেয়ে ভাল হয়। শুধু মানুষ নয়, পশুপাখিদের জন্যও বাজির ধোঁয়া বিপজ্জনক।

শ্বাসের সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় কী?

বাজি পোড়ানো বন্ধ করার উপায় নেই। আইনের ফাঁক গলেও বাজি বিক্রি ও বাজি পোড়ানো দুই-ই চলবে। তাই সাবধান থাকতে কয়েকটি নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিলেন চিকিৎসকেরা।

১) মেডিসিনের চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের পরামর্শ, নাক-মুখ সুতির কাপড় দিয়ে বেঁধে নিলে ভাল হয়। অল্প ভিজে কাপড় দিয়ে নাক বেঁধে নিলে দূষণের হাত এড়ানো যায়। তুবড়ি-চড়কির ধোঁয়া থেকে সাবধানে থাকুন।

২) অ্যালার্জি বা সর্দি-হাঁচির প্রবণতা আছে, তাঁরা অবশ্যই বাজি পোড়ানোর আগে ইনহেলার নিয়ে নেবেন। পার্থসারথিবাবুর পরামর্শ, সমস্যা না হলে অকারণে নেবুলাইজ়ার নেওয়ার দরকার নেই। তবে সিওপিডি বা হাঁপানির রোগীরা দীপাবলির রাতে ইনহেলারের কয়েকটি টান বেশিই নেবেন।

৩) সিওপিডি বা হাঁপানি থাকলে প্রতিরোধমূলক ওষুধ ও ইনহেলার সঙ্গে রাখবেন। দেবোপম জানাচ্ছেন, ধোঁয়ায় কষ্ট হলে পাখা চালিয়ে রাখতে পারেন, সম্ভব হলে শীতাতপ যন্ত্র চালিয়ে রাখা দরকার। তাও পরিস্থিতি ভাল না বুঝলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে ফোন করুন।

৪) বয়স্ক ও শিশু থাকলে বাজির ধোঁয়া আটকাতে দরজা জানলা বন্ধ রাখাই ভাল।

৫) বাজির ধোঁয়ায় থাকা সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড থেকে শ্বাসনালির প্রদাহ যেমন হয়, তেমনই ত্বকের অ্যালার্জিও হতে পারে। তাই শরীর ঢাকা সুতির পোশাক পরাই ভাল।

সবুজ বাজি কি সুরক্ষিত?

সবুজ বাজি অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। এই বাজি জ্বালালে কম রাসায়নিক নির্গত হয়। তবে সিওপিডি বা হাঁপানির রোগীদের কিন্তু সাবধানে থাকতেই হবে। চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের পরামর্শ, যে কোনও বাজির ধোঁয়াই শ্বাসের সমস্যা তৈরি করতে পারে। সবুজ বাজিতে রাসায়নিকের মাত্রা যেহেতু কম, তাই এতে বিপদ কম। তবে বাজার থেকে যে সবুজ বাজি কিনছেন তা আসল না ভুয়ো তা যাচাই করে নিতে হবে। ‘কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ’ (সিএসআইআর) এই ধরনের বাজিকে অনুমোদন দিয়েছে। তাই তাদের শংসাপত্র দেখে হবেই বাজি কিনতে হবে।

Advertisement
আরও পড়ুন