বাজির ধোঁয়া, দূষণ থেকে বাঁচতে কী করবেন? প্রতীকী ছবি।
আইনের কড়াকড়ি যতই থাক, কালীপুজোর রাতে বাজি পুড়বেই। আর বাজির ধোঁয়ায় বাতাসও দূষিত হবে। কিছু দিন আগেই ‘দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটরি হেলথ জার্নাল’-এ প্রকাশিত দূষণ সংক্রান্ত সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছিল, কলকাতা-সহ দেশের ১০ শহরে দূষণের মাত্রা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। শুধু ভাসমান ধূলিকণা (পিএম১০) ও অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণাই (পিএম ২.৫) নয়, যানবাহনের সংখ্যা বাড়ায় বাতাসে নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রাও বিপজ্জনক হারে বাড়ছে। কালীপুজোর রাত থেকে বাজির ধোঁয়ায় দূষণের মাত্রা আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করছেন পরিবেশবিদেরা।
তাপমাত্রার সঙ্গে বায়ুদূষণের সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। আনন্দবাজার অনলাইনকে এমনটাই বললেন, ‘সাউথ এশিয়ান ফোরাম অফ এনভায়রনমেন্ট’-এর চেয়ারম্যান দীপায়ন দে। তাঁর কথায়, “গরমের সময়ে বাতাস হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়, ওই সময়ে দূষণের প্রকোপ কিছুটা হলেও কম থাকে। আবার শীতের সময়ে দেখা যায়, দূষিত কণার পরিমাণ বাড়ছে। কালীপুজোর সময়ে তাপমাত্রা কেমন থাকবে, তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে। যদি তাপমাত্রা কমের দিকে থাকে, তা হলে দূষণের মাত্রা বাড়বে। তবে যদি বৃষ্টি হয়, তা হলে কিন্তু বাতাসে দূষিত কণার মাত্রা অনেকটাই কমে যাবে।”
যানবাহনের ধোঁয়া, বহু মানুষের ভিড়ে বাতাসে ‘সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেট ম্যাটার’ বা ‘এসপিএম’ বেড়ে যেতে পারে। এগুলি হল সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম দূষিত কণা, যা ধুলো-ধোঁয়া, দূষিত গ্যাসের সংমিশ্রণে তৈরি। বাতাসে মিশে এগুলিই বিষবাষ্প তৈরি করে। পরিবেশবিদের কথায়, রাতের দিকে বাতাসে এই সব দূষিত কণার মাত্রা বাড়তে পারে। বিশেষ করে, ভোরের দিকে ৩টে থেকে সাড়ে ৩টে নাগাদ দূষণের মাত্রা সর্বাধিক থাকতে পারে। ফলে যাঁদের ধুলো-ধোঁয়াতে অ্যালার্জি আছে, শ্বাসের সমস্যা, ফুসফুসের রোগ বা সিওপিডি আছে, তাঁরা বেশি ক্ষণ বাইরে থাকলে অবস্থা খারাপই হতে পারে। হাঁপানি রোগীদেরও কষ্ট বাড়বে।
দীপায়নবাবুর পরামর্শ, “কালীপুজোয় যদি বাইরে বেরিয়ে ঠাকুর দেখতেই হয়, তা হলে মাস্ক পরা ভীষণ ভাবে জরুরি। মহিলারা সুতির কাপড় দিয়েও শিশুদের নাক-মুখ জড়িয়ে রাখতে পারেন। যেখানে বাজি পোড়ানো হচ্ছে বা বেশি ধুলো-ধোঁয়া আছে বা প্রচুর জনসমাগম, সেই স্থান এড়িয়ে চলাই ভাল।” এই সময়ে ইনহেলার সঙ্গে রাখা ভাল। বিশেষ করে সিওপিডি বা হাঁপানির রোগীরা ইনহেলার ছাড়া বাইরে বেরোবেনই না।
দূষণ থেকে বাঁচার অন্য উপায়ও বললেন পরিবেশ-প্রযুক্তিবিদ সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ। তাঁর পরামর্শ, শ্বাসের সমস্যা থাকলে বা অ্যালার্জিক রাইনিটিস থাকলে, মাস্ক পরতেই হবে। তা ছাড়া খাওয়াদাওয়ায় নজর দেওয়াও জরুরি। এমন খাবার খেতে হবে, যা শরীরে পুষ্টির চাহিদা মেটায়। এই সময় ফাইবারে সমৃদ্ধ ফলমূল একটু বেশি খাওয়া ভাল।
বাইরের পরিবেশের দূষণ নিয়ে শুধু ভাবলে চলবে না। ঘরের ভিতরের বাতাসও বিশুদ্ধ রাখতে হবে। ধূপ-ধুনোর ধোঁয়ায় রাশ টানুন। কখনওই তা যেন মাত্রাতিরিক্ত না হয়। সুগন্ধি রুম ফ্রেশনারের পরিবর্তে টাটকা ফুল ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রত্যেকে বাড়িতে যদি কিছু গাছ লাগাতে পারেন, তাতেও কিছুটা বিশুদ্ধ অক্সিজেনের জোগান বাড়বে।