Seeds

শরীর সুস্থ রাখতে, মেদ ঝরাতে বীজ খাবেন, তবে কোনটি খেলে ভাল, বুঝবেন কী করে?

শরীর ভাল রাখতে এখন বিভিন্ন ধরনের বীজ খাওয়ার চল। তিসি, চিয়া, কুমড়ো বীজ প্রত্যেকটি পুষ্টিগুণে ভরপুর। এ ছাড়াও রয়েছে সূর্যমুখী, হেম্প। কিন্তু কোন বীজটি আপনার জন্য ভাল?

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:২৮
স্বাস্থ্য ভাল রাখতে নানা ধরনের বীজ খাওয়ার চল। আপনি কোনটি খাবেন?

স্বাস্থ্য ভাল রাখতে নানা ধরনের বীজ খাওয়ার চল। আপনি কোনটি খাবেন? ছবি: ফ্রিপিক।

দিন কয়েক আগেও পাড়ার দোকানে গিয়ে চিয়া, তিসি বীজের নাম করলে দোকানদার ভ্রূ কুঁচকাতেন। এখন অবশ্য এ সবের নাম শুনে মুদির দোকানি আকাশ থেকে পড়েন না। বরং ক্রমবর্ধমান চাহিদা দেখে পাড়ার দোকানের বিক্রেতাও এখন সে সব রাখতে শুরু করেছেন।

Advertisement

শরীর ভাল রাখতে, মেদ ঝরাতে এখন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষজন সকালে উঠে খাবারের সঙ্গে তিসি, সূর্যমুখী, চিয়া, কুমড়ো ইত্যাদি নানা ধরনের বীজ মিশিয়ে নেন। প্রতিটি বীজেরই রয়েছে নিজস্ব পুষ্টিগুণ। কিন্তু রকমারি বীজের মধ্যে থেকে কোনটি খেলে শরীর ভাল হবে, কী করে বুঝবেন?

বীজের গুণাগুণ

বিভিন্ন ধরনের বীজে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ। ভিটামিন, খনিজ, স্বাস্থ্যকর ফ্যাটে পরিপূর্ণ বীজগুলি। প্রথমত, বীজ খেলে চট করে পেট ভরে যায়। কম ক্যালোরি শরীরে গেলেও প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব হয় না। আমেরিকার ‘ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন’ –এ প্রকাশিত গবেষণা বলছে বিভিন্ন বীজ হজমে সহায়তা করে, পেট দীর্ঘক্ষণ ভরিয়ে রাখতেও সহায়ক।

ওজন ঝরাতে কী ভাবে সাহায্য করে বীজ? আর কী গুণ আছে?

চিয়া, কুমড়ো-সহ বিভিন্ন বীজে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফাইবার। পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ফাইবারে সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। ওজন ঝরাতে, বিপাকহার বৃদ্ধিতেও ফাইবারের ভূমিকা থাকে। তা ছাড়া বীজ দীর্ঘ ক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে উল্টোপাল্টা খাবার ইচ্ছা কমে যায়। যা ওজন কমাতে পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করে।

ত্বক, চুলের জেল্লা বজায় রাখতে খাবারের তালিকায় স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রাখতে বলেন পুষ্টিবিদেরা। বিভিন্ন বীজে মেলে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। যাঁরা প্রাণিজ প্রোটিন খান না তাঁদের কাছে প্রোটিনের উৎস হতে পারে এই ধরনের বীজগুলি। বীজে রয়েছে শরীরের পক্ষে অত্যাবশ্যক মাইক্রেনিউট্রিয়েন্টস।

চিয়া বীজ: চিয়া বীজে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, জলে দ্রবনীয় ফাইবার। চিয়া জল শোষণ করে জেল বা জেলির মতো হয়ে যায়। ফলে জল পেয়ে ফুলে গিয়ে পেট ভরিয়ে রাখে। ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত ফুড কেমিস্ট্রি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা বলছে চিয়া, সূর্যমুখী, হেম্পের বীজে থাকা পুষ্টিকর উপাদান দৈনন্দিন বহু রোগ থেকেই শরীরকে রক্ষা করতে পারে।

তিসির বীজ: ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার সমৃদ্ধ তিসির বীজও ওজন কমাতে সহায়ক। তিসির বীজে আলফা লিনোলেনিক অ্যাসিড আর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এই বীজ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, হৃদ্‌যন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। ফাইবার থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক।

কুমড়োর বীজ: ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, জ়িঙ্ক রয়েছে কুমড়োয় যা হাড়ের ক্ষয়ে যাওয়া রোধে সাহায্য করে। এতে থাকা ফাইবারের দরুন খাবার হজমেও সহায়ক। এতে রয়েছে, ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামাইনো অ্যাসিড। যা অক্সিটোসিন হরমোন ক্ষরণে সহায়তা করে। একই সঙ্গে মেলাটোনিন আর সেরোটোনিন নিঃসৃত হতে সহায়তা করে। যা অবসাদ কাটিয়ে শরীর, মন তরতাজা করে তুলতে সাহায্য করে।

সূর্যমুখীর বীজ: ভিটামিন ই, ফাইবার, স্বাস্থ্যকর ফ্যাটে সমৃদ্ধ সূর্যমুখীর বীজ। ওজন ঝরাতে সাহায্য করে সূর্যমুখীর বীজ। ‘পলি আনস্যাচুরেটেড’ ও ‘মনো আনস্যাচুরেটেড’ ফ্যাটের অন্যতম উৎস এই বীজ। এই ধরনের ফ্যাট শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর কোলেস্টরেলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে সূর্যমুখীর বীজ খেলে হার্ট ভাল থাকে।

সমস্ত বীজেরই নিজস্ব পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা রয়েছে। তবে পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘বীজ আলাদা ভাবে খাওয়াই উচিত। চিয়া আর সূর্যমুখীর বীজ একসঙ্গে না খেলেই ভাল। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষ এক দিনে ২০-৩০ গ্রাম বীজ খেতে পারেন। তার চেয়ে বেশি নয়।’’ পাশাপাশি পুষ্টিবিদ সতর্ক করছেন, কারও কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে বীজ খাওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। হজমের সমস্যা থাকলে বীজের পরিমাণ বুঝে খেতে হবে। তবে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যায়, ওজন ঝরাতে বীজ বিশেষ কাজে আসে।

প্রতি দিন ডায়েটে বীজ রাখতে হয় তা হলে পুষ্টিবিদ অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

এই সমস্ত বীজ জলে ভিজিয়ে, ওট্‌সের সঙ্গে মিশিয়ে অথবা স্মুদিতে দিয়ে খাওয়া হয়। বীজ গুঁড়িয়ে রুটির জন্য আটা মাখার সময়েও মিশিয়ে দেন অনেকে।

Advertisement
আরও পড়ুন