Infectious diseases

বর্ষায় কী কী সংক্রামক অসুখ মাথাচাড়া দিয়েছে? সুস্থ থাকার উপায় বলছেন চিকিৎসকেরা

ভাইরাল জ্বর, শ্বাসকষ্ট তো বটেই, পেটের গোলমালও ভোগাচ্ছে। বৃষ্টির দিনে জলবাহিত বিভিন্ন রোগ থেকেও সাবধান থাকতে বলছেন চিকিৎসকেরা।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:১৫
Common Monsoon diseases and tips for Prevention

সংক্রামক রোগ থেকে বাঁচার উপায় কী? প্রতীকী ছবি।

বর্ষার মরসুম মানেই বিভিন্ন সংক্রামক অসুখবিসুখ মাথাচাড়া দেবে। আজ ভাইরাল জ্বর, তো কাল অ্যালার্জি জনিত নানা অসুখ। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক আর দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা যাঁদের, তাঁদের সমস্যাই বেশি। দিন কয়েক ওষুধ খেয়ে জ্বর কমলেও সপ্তাহখানেক ধরে হাত-পায়ের যন্ত্রণা, চোখের ভিতরে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা হচ্ছে অনেকের। শরীরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। তার উপর ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ তো রয়েছেই। বৃষ্টির দিনে জলবাহিত বিভিন্ন রোগ থেকেও সাবধান থাকতে হয়। সংক্রামক ভাইরাস বা ব্যাক্টিরিয়া জল বা খাবারের মাধ্যমেও শরীরে ঢুকে রোগ ছড়ায়।

Advertisement

এই বিষয়ে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলছেন, “ভাইরাল জ্বর ও পেটের রোগ এই সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এর কারণ হল ব্যাক্টেরিয়ার প্রকোপ। ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়া মলের মধ্যে থাকে। কোনও কারণে মল জলের সঙ্গে মিশে গেলে সংক্রমণ হয়। তা ছাড়া, টাইফয়েড, ক্লসটিডিয়াম, সিরেলা, সালমোনেলা থেকেও সংক্রমণ হয়। তাই বাইরের খাবার, জল এই সময়ে না খাওয়াই ভাল।” চিকিৎসকের কথায়, কখনও রোদ উঠছে, আবার কখনও একটানা বৃষ্টি চলছে। এই সময়ে তাপমাত্রা এমন ওঠানামা করে যে কিছু প্রকার সংক্রামক জীবাণুর বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে। ইনফ্লুয়েঞ্জার পাশাপাশি অ্যাডিনোভাইরাস, রেসপিরেটারি সিনসেশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি)-এর দাপট বাড়ছে। যে কারণেই ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাশি হচ্ছে। জ্বর ১০০-র আশপাশেই ঘোরাফেরা করছে। কারও ঘুরেফিরে জ্বর আসছে। সেই সঙ্গে নাক, চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়া, শুকনো কাশিও ভোগাচ্ছে। জ্বরের সঙ্গে পেটের গোলমালও হচ্ছে অনেকের। আবার হালকা কোভিডের মতো উপসর্গও দেখা দিচ্ছে, তবে তা অত মারাত্মক নয়।

বর্ষার যে দুটি রোগ সবচেয়ে বেশি দেখা দিচ্ছে তা হল ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া। বর্ষার জমা জল থেকে মশাবাহিত রোগ ম্যালেরিয়া শিশু থেকে বড় সকলেরই হতে পারে। এই ম্যালেরিয়ায় যদি ম্যালিগন্যান্ট হয়ে যায় তা থেকে মৃত্যুও হতে পারে। আর ডেঙ্গির প্রকোপ তো আছেই। অতিরিক্ত জ্বর, গায়ে ব্যথা, দুর্বলতা, র‌্যাশ বড় সমস্যা ডেকে আনতে পারে। যদি ‘ডেঙ্গি হেমারেজিক ফিভার’ হয়, তা হলে রোগীর অবস্থায় আরও খারাপের দিকে যাবে। কারণ শরীরের ভিতর রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। তাই মশাবাহিত রোগ থেকে সাবধান থাকতেই হবে। বাড়ির আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, জল জমতে দেওয়া যাবে না। রাতে মশারি ব্যবহার করা খুবই জরুরি। মশার জন্য কেবল নয়, এই সময়ে পোকামাকড়ের উপদ্রবও বাড়ে। স্ক্রাব টাইফাসের মতো পোকা কাটলে তার থেকেও মারাত্মক সংক্রমণ ছড়ায়।

সর্দিকাশির অ্যাডিনোভাইরাস, রাইনো ভাইরাস কিন্তু করোনার চেয়েও বেশি ছোঁয়াচে হয়ে উঠেছে, এমনটাই মত কলকাতার এক সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের। তিনি বলছেন, “দ্রুত শ্বাস নেওয়া, শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় বুক ধড়ফড় করা, নিউমোনিয়ার উপসর্গ দেখা দিচ্ছে অনেকের। তেমন হলে ফেলে রাখা ঠিক হবে না। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। গুরুতর ভাবে অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হলে গলা ও ঘাড়ের চারদিকের গ্ল্যান্ড ফুলে যেতে পারে। সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হবে।” রাইনোভাইরাস নাক দিয়ে ঢোকে। এর সংক্রমণ হলে গলা ব্যথা, ঢোঁক গিলতে না পারা, শুকনো কাশি ভোগাতে পারে।

থুতু-লালার মাধ্যমে ছড়াতে পারে এই সব ভাইরাস। অনির্বাণ জানাচ্ছেন, জ্বর হলে মাস্ক পরা খুব জরুরি। বাসে-ট্রেনে যে কোনও গণপরিবহণে গেলে ভিড় বাঁচিয়ে চলতে হবে। বারে বারে হাত ধুতে হবে। বিশেষ করে বাইরে থেকে এলে হাত ভাল করে ধুয়ে, স্যানিটাইজ় করে তবেই ঘরে ঢুকুন। জ্বর হলে প্যারাসিটামল আর বেশি করে জল খাওয়ারই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক। তবে জ্বর তিন দিনের বেশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে টেস্ট করিয়ে নিতে হবে। নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া ঠিক হবে না বলেই পরামর্শ চিকিৎসকেদের।

Advertisement
আরও পড়ুন