নিয়ম মেনে শরীরচর্চা করেন অমিতাভ বচ্চন, কী বললেন তাঁর প্রশিক্ষকেরা? ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
বয়স ৮২ ছুঁয়েছে। এই বয়সেও দিন-রাত জেগে কাজ করছেন অভিনেতা। একটা বয়সের পর অতিরিক্ত ধকল নিতে পারে না শরীর। কিন্তু বিগ বি-কে দেখে তা বোঝার উপায় নেই। চেহারায় এতটুকু ক্লান্তির ছাপ নেই। সব সময়েই যেন তরতাজা মনে হয় তাঁকে। সম্প্রতি দীপিকা পাড়ুকোন এবং দক্ষিণী অভিনেতা প্রভাসের সঙ্গে হিন্দি ছবি ‘কল্কি ২৮৯৮’তে দেখা গিয়েছে বিগ বি-কে। সেখানে এই বয়সেও যেমন ফিট লেগেছে তাঁকে, তা নিয়ে রীতিমতো চর্চাও হয়েছে। কোন মন্ত্রবলে ৮০ পেরিয়েও এমন টান টান সুঠাম শরীর ধরে রাখতে পেরেছেন অমিতাভ, তা জানিয়েছেন তাঁরই ফিটনেস প্রশিক্ষকেরা।
গত ২৪-২৫ বছর ধরে অমিতাভের শরীর-স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখছেন বৃন্দা ভট্ট এবং শিবোহম। তাঁরা জানিয়েছেন, নিয়ামানুবর্তিতা ও জীবনযাপনে সংযমই অমিতাভের ফিট থাকার রহস্য। নিয়মের একচুল এ দিক ও দিক করেন না তিনি। তাঁর কথায়, “অনেকে বলেন, ‘সময় নেই বলে শরীরচর্চা করতে পারি না’। কিন্তু হাজার কাজ থাকলেও অমিতাভ ঠিক সময় বার করে নেন। ভোরে নির্দিষ্ট সময়েই শরীরচর্চা করেন। এক মিনিটও দেরি হয় না।”
বৃন্দা জানাচ্ছেন, ভোর ৬টা থেকে শরীরচর্চা শুরু করেন অমিতাভ। শুরুতে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম ও প্রাণায়াম করেন। এর পরে কয়েকটি যোগাসন অভ্যাস করেন। মেডিটেশন বা ধ্যানও করেন ঘড়ি ধরে। এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয় না কখনও। বরং কোনও কারণে কোনও দিন প্রশিক্ষণে আসতে না পারলে আগে থেকে জানিয়ে দেন তিনি। সকালে না হলেও, সারা দিনে সময় বার করে প্রাণায়াম ও আসন অভ্যাস করে নেন।
খাওয়াদাওয়া নিয়ম মেনে করতেই ভালবাসেন বিগ বি। তাঁর ফিটনেস প্রশিক্ষকদের কথায়, স্বল্পাহারই করেন অভিনেতা। সব খাবারই খান পরিমাণ বুঝে। সকালে ব্যায়াম শুরু করার আগে গোটা তুলসীপাতা চিবিয়ে খান। এর পরে প্রাতরাশে প্রোটিন শেক, কাঠবাদাম বা নারকেলের জল খান। মাঝেমধ্যে পরিজ়ও থাকে তাঁর সকালের জলখাবারে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়ম করে খান আমলকির রস ও খেজুর। মিড-মর্নিংয়ে, অর্থাৎ দুপুরে খাওয়ার আগে খিদে পেলে অল্প পরিমাণে বাদাম ও প্রোটিন পাউডার খেয়ে নেন।
অমিতাভের কথায়, “কম বয়সে সবই খেতাম। কিন্তু এখন বুঝেশুনে খাই। আমিষ খাওয়া ছেড়েছি। ভাত, মিষ্টি জাতীয় কোনও খাবারই খাই না।” কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার তালিকা থেকে প্রায় বাদই দিয়েছেন বিগ বি। বদলে ফাইবার জাতীয় খাবারই বেশি খান।
এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীর মত, বয়সকালে শর্করা ও প্রোটিন খেতে হবে মেপেঝুপেই। ফাইবারও খেতে হবে পরিমাণ মতো। যদি কোনও জটিল রোগ না থাকে, তা হলেও বয়স ষাটের গণ্ডি পেরিয়ে সত্তরের দিকে এগোতে না এগোতেই শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যা দেখা দেয়। এই বয়সে সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় ‘ইটিং ডিজ়অর্ডার’। অনেকের যেমন খাবারে অনীহা তৈরি হয়, তেমনই অনেকের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে নেওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়। ঘন ঘন বদহজম, পেটখারাপ, কোষ্ঠকাঠিন্য, গাঁটে গাঁটে ব্যথা— এগুলি বয়সকালের স্বাভাবিক সমস্যা। তাই এই সময় বয়স্কদের সুষম খাদ্যাভ্যাস খুব জরুরি।