প্যাকেটজাত মাংস থেকে ছড়াচ্ছে ব্যাক্টেরিয়া। ছবি: সংগৃহীত।
ঠান্ডাঘরে জমিয়ে রাখা প্যাকেটজাত মাংস থেকে ছড়াচ্ছে লিস্টেরিয়া ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ। আমেরিকার ১২টি রাজ্যে এই ধরনের মাংস খেয়ে অসুস্থ বহু মানুষ। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাও আছেন বলে খবর। দু’জনের মৃত্যুর খবরও পাওয়া গিয়েছে।
আমেরিকার ‘সেন্টার ফর ডিজিজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ জানাচ্ছে, প্যাকেটবন্দি মাংস থেকে লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজিনস নামে এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এই ব্যাক্টেরিয়া প্রাণঘাতী। কাটা মাংস প্যাকেটবন্দি করে বহুদিন হিমঘরে রেখে দিলে, তার থেকে এমন ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ ছড়াতে পারে। লিস্টেরিয়া ব্যাক্টেরিয়া বাসি মাংসেই জন্মায়। পেটে গেলে মারাত্মক সংক্রমণ হতে পারে। পেট খারাপ, বমি, জ্বর, পেশিতে ব্যথা তো হবেই, বয়স্ক ও শিশু হলে প্রাণ সংশয়ের ঝুঁকিও থাকবে। এই রোগে অসুস্থ হয়ে আমেরিকায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা নাকি বেড়ে চলেছে।
ভেড়া, গরু, শুয়োরের মাংস, এমনকি হাঁস, মুরগি, টার্কির মাংসেও লিস্টেরিয়া পাওয়া গিয়েছে। মার্কিন সিডিসি জানাচ্ছে, যে রোগীরা সংক্রমণ নিয়ে আসছেন, তাঁদের বেশির ভাগই জ্বর, পেট খারাপ, বমি ও পেশির ব্যথায় ভুগছেন। এমনকি অনেকের শরীরে অসাড়তা, খিঁচুনির লক্ষণও দেখা গিয়েছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয় এই ব্যাক্টেরিয়া।
এই প্রসঙ্গে সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, বাইরের দেশে কাঁচা মাংস প্যাকেটবন্দি করে দীর্ঘদিন ঠান্ডা ঘরে রেখে দেওয়া হয়। মাংস সংরক্ষণের জন্য রাসায়নিকও মেশানো হয়। তা থেকেই ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। যে কোনও মাংসেই এমন ব্যাক্টেরিয়া জন্মাতে পারে। চিকিৎসকের কথায়, হ্যামবার্গার, হট ডগ অথবা স্যান্ডউইচে দেওয়ার জন্য হালকা রান্না করা অথবা কাঁচা মাংস প্যাকেটে ভরে বিক্রি করা হয়। রান্নার সময় কমানোর জন্য ছোট ছোট টুকরো বা ‘স্লাইস’ করেই মাংস কেটে প্যাকেটবন্দি করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে এমন প্যাকেটজাত মাংস হিমঘরে থাকে।
এখন কথা হচ্ছে, সব প্যাকেটজাত মাংস খেলেই যে জীবাণু সংক্রমণ হবে তা নয়। কী ভাবে সেই মাংস সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। কাটা মাংস কবে প্যাকেটবন্দি করা হচ্ছে, সেই তারিখ ও সময় লেখা থাকে প্যাকেটের উপর। তাই এমন মাংস কেনার সময় সেই তারিখ দেখে নিতে হয়। যদি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরেও সেই মাংস বিক্রি হয় এবং লোকজনও কিনে খান, তা হলে অসুখ হতে বাধ্য। আমাদের দেশেও মাংস কেটে দীর্ঘ সময় রেখে দেওয়া হয়। তবে চিকিৎসক জানাচ্ছেন, টাটকা মাংস থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি কম। যদি সেই মাংসই প্যাকেটে ভরে সাত থেকে আট দিন রেখে দেওয়া হয়, তখন তাতে জীবাণু জন্মাতে পারে। কারণ ঠান্ডা ঘরে রাখলেও ভিতরে ভিতরে মাংসের পচন শুরু হয়। আর সেই পচে যাওয়া মাংসের কোষগুলিতেই ব্যাক্টেরিয়া জন্মায়। বাইরে থেকে দেখে তা বোঝা যায় না। কিন্তু সেই মাংস খেলে তখন বিষক্রিয়া হতে পারে শরীরে।