Glowy Skin

উজ্জ্বল ত্বক পেতে সৌন্দর্য চিকিৎসা

শুষ্ক, অকালে বুড়িয়ে যাওয়া, নিষ্প্রাণ ত্বকে ফের নবজীবনের হিল্লোল তুলে দিতে পারে এস্থেটিক ট্রিটমেন্ট।

Advertisement
শ্রেয়া ঠাকুর
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৩ ১০:০০
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বাড়ছে তাপ, সূর্যালোক, বাড়ছে দূষণ। ফলস্বরূপ দেখা দিচ্ছে ত্বকের নানা সমস্যা। বলিরেখা থেকে ব্রণ, অকালে বুড়িয়ে যাওয়া, কুঁচকে যাওয়া ত্বক, দাগ-ছোপ নানা সমস্যায় জেরবার হচ্ছেন অনেকেই। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এস্থেটিক ট্রিটমেন্টের সাহায্যে।

Advertisement

কাকে বলে এস্থেটিক ট্রিটমেন্ট?

শুষ্ক, অকালে বুড়িয়ে যাওয়া, নিষ্প্রাণ ত্বকে ফের নবজীবনের হিল্লোল তুলে দিতে পারে এস্থেটিক ট্রিটমেন্ট। আরও সহজ করে বলতে গেলে, যে পদ্ধতিতে কেউ নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে সেই পদ্ধতির আর এক নাম এস্থেটিক ট্রিটমেন্ট। কোনও রকম সার্জারি ছাড়া ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া ভাব আটকায় এই চিকিৎসা পদ্ধতি। এর পাশাপাশি, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, ব্রণ-অ্যাকনের দাগ, অতিরিক্ত পিগমেন্টেশন হ্রাস করা, বলিরেখা, কুঁচকে যাওয়া ত্বক প্রভৃতি নানা সমস্যার সমাধান করা যায় এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে।

এই বিষয়ে কথা বলা গেল ত্বক বিশেষজ্ঞ ও কসমেটিক সার্জন মনোজ খন্নার সঙ্গে। তিনি জানালেন, যে কোনও চিকিৎসা করানোর আগে প্রাথমিক পদক্ষেপ হল নিজের ত্বকের যত্ন নেওয়া। অর্থাৎ নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার রাখা, টোনিং করা, ময়শ্চারাইজ়ার লাগানো। এর সঙ্গে যেটা ভীষণ ভাবে প্রয়োজন সেটা হল নিয়মিত সানস্ক্রিন লাগানো। ডক্টর খন্নার মতে, বাইরে বেরোলে তো বটেই, ঘরের মধ্যেও সানস্ক্রিন লাগিয়ে রাখা উচিত। বিশেষ করে এখন যে ভাবে সূর্যের তাপ ক্রমবর্ধমান।

মোটামুটি সাতটি পদ্ধতিতে ত্বককে নবযৌবন দেওয়া যায়। এগুলি হল:

  • কেমিক্যাল পিলিং: অত্যন্ত পরিচিত এই পদ্ধতিতে ত্বকের উপর গ্লাইকোলিক অ্যাসিড বা রেটিনয়িক অ্যাসিড বা এই ধরনের উপাদানের একটি প্রলেপ দেওয়া হয়। এর ফলে ত্বকের উপরের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি ধীরে ধীরে উঠে যায়। এর ফলে যে নতুন ত্বক তৈরি হয় তা আরও ঝকঝকে, মসৃণ ও দাগবিহীন হয়। বলিরেখা, পিগমেন্টেশন, ব্রণর দাগ-ক্ষত দূর করতে এই পদ্ধতি ব্যবহার হয়।
  • প্লেটলেট রিচ প্লাজ়মা: রক্তের সহায়তায় নবযৌবন! এই পদ্ধতিকে এই নামেই ডাকা যায়। ডা. মনোজ খন্না জানালেন, যাঁর চিকিৎসা হবে তাঁর শরীর থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত নিয়ে সেন্ট্রিফিউগেশন পদ্ধতিতে প্লাজ়মা ও অনুচক্রিকা আলাদা করে ফের ত্বকে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়। এর ফলে কোলাজেন তৈরির পদ্ধতি দ্রুত হয়। কুঁচকে যাওয়া বা ঝুলে যাওয়া ত্বক ফের নতুন হয়ে ওঠে। হাইপারপিগমেন্টেশন রোধ করা যায়। চোখের তলার পাতলা ত্বককেও এই পদ্ধতিতে পুনর্যৌবন দেওয়া যায়। ৬ থেকে ৯ মাস তা বজায় থাকে।
  • হাইড্রাফেশিয়াল: এই পদ্ধতি একেবারে যন্ত্রণাবিহীন। একটি বিশেষ ভ্যাকুয়াম যন্ত্রের সাহায্যে রোমকূপের ভিতর থেকে মৃত কোষগুলিকে নিষ্কাশন করা হয়। তার পরে ত্বকে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সেরাম লাগানো হয়। তার পরে, ময়শ্চারাইজ়ার লাগানো হয়। সচরাচর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, পেপটাইড-এর একটি মিশ্রণও লাগানো হয় ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধির জন্য।
  • স্কিন বুস্টিং: মাইক্রোইঞ্জেকশনের সাহায্যে ত্বকে উপকারী উপাদান প্রবেশ করিয়ে ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনার পদ্ধতিকে স্কিন বুস্টিং বলা চলে। সচরাচর হায়ালুরনিক অ্যাসিড প্রবেশ করিয়ে এই চিকিৎসা করা হয়। মোটামুটি দুই সপ্তাহের মধ্যে ফল দেখতে পাওয়া যায়। ত্বক হয়ে ওঠে উজ্জ্বল, কোমল ও মসৃণ। এ ছাড়াও ত্বকের প্রয়োজন অনুসারে অন্য উপাদানও দেওয়া হয়। চার থেকে ছয় সপ্তাহ বজায় থাকে। এই প্রসঙ্গে ডা. খন্না একটি কথা জানালেন। অনেক সময়েই অনেক ক্লিনিক গ্লুটাথায়োনের সাহায্যে এই চিকিৎসা করে। এই উপাদানটি ত্বকের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। প্রচুর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকায় গ্লুটাথায়োন আদতে নিষিদ্ধ এই ধরনের চিকিৎসায়। সুতরাং, ভাল করে কথা বলে ও জেনে নিয়ে এই চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
  • হাই ইনটেনসিটি ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড ফেশিয়াল: ডা. খন্নার কথায়, এটি তুলনামূলক ভাবে নতুন পদ্ধতি। এতে ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন অত্যন্ত দ্রুত হয়। ফলে, ত্বক হয়ে ওঠে মসৃণ ও দৃঢ়। জানা গেল, ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড এনার্জি ত্বকের উপরিভাগের ঠিক নীচের স্তরে প্রবেশ করানো হয়। এতে সেখানে কোলাজেন উৎপাদন বেড়ে যায় ও ত্বকের দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়। ন’মাস থেকে এক বছর বজায় থাকে।
  • মেসোথেরাপি: ফরাসি ডাক্তার মাইকেল পিস্তর ১৯৫২ সালে এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এতে মাইক্রোইঞ্জেকশনের সাহায্যে ভিটামিন, এনজ়াইম, হরমোন প্রভৃতি ত্বকের ঠিক মাঝের স্তরে প্রবেশ করানো হয়।
  • পিকোলেজ়ার: ডা. খন্না জানালেন, এই পদ্ধতিতে বলিরেখা, দাগ, পিগমেন্টেশন সবই দূর করা যায়।

তার পরে তিনি জানালেন ক্রিম স্কিনকেয়ারের কথা। খুব সহজে বাড়িতেই এটি করে ফেলা যায়। হালকা একটি ক্লেনজ়ার দিয়ে মুখ প্রথমে পরিষ্কার করতে হবে। তার পরে একটি টোনার লাগাতে হবে, এতে ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য বজায় থাকে। তার পরে একটি হোয়াইটনার-ব্রাইটনার ক্রিম ব্যবহার করতে হবে ত্বকের জন্য। এর পর গ্লাইকোলিক অ্যাসিড বা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড সেরাম ব্যবহার করতে হবে। এর পরে একটি টাইটনার লোশন লাগিয়ে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিতে হবে। কোন ত্বকে কোন ধরনের ক্রিম বা সেরাম ব্যবহার করতে হবে, তা অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে। ত্বকের বিশেষ কোনও চিকিৎসার পরে বা এমনিই ত্বক ভাল রাখতে নিয়মিত এই পদ্ধতি চালিয়ে যেতে হবে।সব শেষে ডা. খন্না স্পষ্ট জানালেন, অনেকের মধ্যেই ত্বক ফরসা করার একটা প্রবণতা থাকে, এটা ঠিক নয়। ত্বকের বিভিন্ন চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ ত্বক পাওয়াটাই লক্ষ্য হওয়া প্রয়োজন। ভারতীয়দের ত্বক আদতে খুব সুন্দর। সৌন্দর্যের সংজ্ঞা স্রেফ গাত্রবর্ণের উপরে নির্ভরশীল না হওয়াই ভাল।


মডেল: পারিজাত চৌধুরী; মেকআপ: অভিজিৎ কয়াল; ছবি: জয়দীপ মণ্ডল

আরও পড়ুন
Advertisement