স্মৃতিভ্রংশের চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছবি: সংগৃহীত
ভুলো মনের মানুষদের নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপের শেষ নেই। আপাত ভাবে এই সমস্যা তুচ্ছ মনে হলেও, ভুলে যাওয়ার ব্যামো সব সময়ে মজার বিষয় নাও হতে পারে। কখনও কখনও স্মৃতি ভ্রংশের সমস্যার সূচনা হয় এ ভাবেই। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘ডিমেনশিয়া’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগটি কার্যত গুপ্ত ঘাতকের মতো আসে। বর্তমানে গোটা বিশ্বে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে পাঁচ কোটিরও বেশি। এই পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাল ব্রিটেনের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, লিথিয়াম নামক একটি মৌল অনেকটাই কমাতে পারে এই রোগের আশঙ্কা। ২০০৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে পঞ্চাশ বছরের বেশি বয়সি প্রায় ৩০ হাজার মানুষের উপর এই গবেষণা চালানো হয়েছে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে। সেই গবেষণার ফলাফলই সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে একটি বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকায়। গবেষকদের দাবি, যাঁরা জীবনে কোনও না কোনও সময় লিথিয়াম গ্রহণ করেছেন, তাঁদের মধ্যে এই রোগের আশঙ্কা অনেকটাই কম। বিশেষজ্ঞদের মতে, এত দিন মানসিক অবসাদ ও ‘বাইপোলার সিনড্রোমের’ মতো সমস্যার চিকিৎসায় লিথিয়ামযুক্ত ওষুধ ব্যবহারের চল ছিল। পাশাপাশি, আগে অল্প সংখ্যক মানুষের উপর করা কিছু গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছিল যে, লিথিয়াম ডিমেনশিয়ার উপশম হিসাবে কাজে আসতে পারে। তবে অল্প সংখ্যক মানুষের উপর করার ফলে সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে পারেননি গবেষকরা।
কেমব্রিজের গবেষণাটি বলছে, সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করা ২৯৬১৮ জন মানুষের মধ্যে লিথিয়াম যুক্ত ওষুধ ব্যবহার করেছেন এমন মানুষের সংখ্যা ছিল ৫৪৮ জন। যাঁরা লিথিয়ামযুক্ত ওষুধ খেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে পরবর্তীকালে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯.৭ শতাংশ মানুষ। অপর দিকে, যাঁরা কখনও এই ধরনের ওষুধ ব্যবহার করেননি, তাঁদের ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা শতকরা ১১.২ ভাগ।
প্রথাগত চিকিৎসা পদ্ধতিতে এখনও ডিমেনশিয়া নিরাময় করা দুঃসাধ্য। তাই কেমব্রিজের সাইকিয়াট্রি বিভাগের গবেষক ডক্টর শানকোয়ান চেনের নেতৃত্বে এই চলা এই গবেষণা ভবিষ্যতে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে নতুন পথ দেখাতে পারে বলেই আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।