Subhashree Ganguly

International Women's Day 2022: রাজের থেকেই ইউভান শিখবে নারীকে কী ভাবে সম্মান করতে হয়, নারী দিবস প্রসঙ্গে শুভশ্রী

আমি নিজে খুব প্রগতিশীল পরিবারে বড় হয়েছি। আমার মা কোনও দিন বলেননি বিয়ে করতে হবে। বলতেন  নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।

Advertisement
শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়
শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২২ ১৩:১৯
স্বামী রাজ এবং ছেলে ইউভানের সঙ্গে শুভশ্রী।

স্বামী রাজ এবং ছেলে ইউভানের সঙ্গে শুভশ্রী।

চারদিকে নারী দিবসের তোড়জোড়। ভাবতে ভালই লাগে। কিন্তু সব দিক কি সমান ভাবে দেখা গেল?

আজও নয়।

যে দিন রাজকে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি এলাম, সে দিন থেকেই আমার শাশুড়ি বলে দিয়েছিলেন, ‘আমার ছেলে রাজ যখন রান্না ঘরে ঢোকে না, তুমিও কোনও দিন ঢুকবে না’।

উনি পরিবারে সমতা আনলেন।

Advertisement

অন্য দিকে ২০২২-এ দেখছি বাল্য বিবাহের সংখ্যা কমছে না। শুনতে তো পাই মেয়েদের পড়াশোনা নয়, কোথায় বিয়ে হল? সেটাই আসল কথা। খবরে সারা ক্ষণ গার্হস্থ্য হিংসের ছবি। একটা টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান দেখেছিলাম। সেখানে বলা হয়েছিল, ৯৬ শতাংশ অপরাধ ছেলেরা করে। এই পরিসংখ্যান নিয়ে এক জন মহিলা চমৎকার লেখা লিখেছিলেন। তিনি দেখিয়েছিলেন পিতৃতন্ত্র কী ভাবে পুরুষদেও ওপর নানা চাপ তৈরি করে। ছেলেকে যেমন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সংসারের দায়িত্ব নিতেই হবে। ছেলে হচ্ছে পরিবারে সবচেয়ে শক্তিশালী মুখ। সে রোজগার করে সংসার চালায়। এই শক্তি কোথায় দেখাবে তারা? বাড়িতে মেয়েদের ওপরেই তখন সেই শক্তির প্রকাশ হয়।

আসলে এটা মানসিক অসুস্থতা বলেই আমি মনে করি। তবে এ ক্ষেত্রে কিন্তু মেয়েদের এগিয়ে আসতেই হবে। মেয়েদের নিজেদের লড়াই নিজেদেরই লড়তে হবে। স্বামী অন্যায় করলে চুপ করে থাকলে আর চলবে না।

অন্যায় সহ্য করাও অপরাধ। নিজের জন্য কথা বলা, নিজের জন্য ভাবা বেশির ভাগ মেয়েরাই এই মানসিকতার বাইরে। বদলাতে হবে। এখনও মেয়েরা নিজেদের জন্য আলাদা করে ভাবতে পারে না।

রাজের মা তাঁর বন্ধু হয়ে উঠেছেন।

রাজের মা তাঁর বন্ধু হয়ে উঠেছেন।

প্রথমেই আমার পরিবারের কথা দিয়ে আমার লেখা শুরু করেছিলাম। কেন? তা খোলসা করে বলি।

রাজ মেয়েদের অসম্ভব সম্মান করে। আমি জানি ওর থেকেই ইউভান মেয়েদের সম্মান করার জায়গাটা বুঝবে। আমি নিজে খুব প্রগতিশীল পরিবারে বড় হয়েছি। আমার মা কোনও দিন বলেননি বিয়ে করতে হবে। বলতেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। ভাল কাজ করতে হবে। যৌথ পরিবার থেকে বিয়ের জন্য যখন বলা হত, মা সে সব কানে তুলতেন না। সৌভাগ্যক্রমে আমার শাশুড়িও ঠিক এই মানসিকতার। আমি তো ওর জন্য রান্না করাই ভুলে গিয়েছি। উনি রাজের ওপরে আমায় রাখেন। রাজ পরিচালনা শুরু করল, তো উনি আমায় বলতে থাকবেন, “তুমি কবে কাজ শুরু করছ?” উনি যে আমার কাজকে কী ভালবাসেন তা বলে বোঝাতে পারব না। আমি অনলাইনে জিম করলেও উনি সেটা বসে দেখেন। তার পর রাজ বাড়ি ফিরলে বলেন, “আজ ও যা যা করেছে না! ভাবতে পারবি না।”

ইউভানকে বলেন, “তুই কিন্তু বড় হয়ে মায়ের মতো হবি। আমার এটাই পাওয়া!”

গল্পকথা নয়। আমার শাশুড়ি আর মা আমাকে, আমার কাজকে এত সম্মান করে যে ওদের জন্য কাজ করতে বেশি ইচ্ছে করে। খুব শান্তি পাই এই পরিবেশে।

আগাগোড়াই শুভশ্রীর মা-বাবা তাঁকে এগিয়ে যেতে।

আগাগোড়াই শুভশ্রীর মা-বাবা তাঁকে এগিয়ে যেতে।

কাজের জায়গার কথা যখন উঠল তখন এটা লিখতে আর দ্বিধা নেই যে সেখানে নারী-পুরুষের সাম্য আজও আসেনি। নারীকেন্দ্রিক ছবিতে এখনও একজন বড় মাপের অভিনেতাকে অভিনয়ের জন্য পাওয়া যায় না। অথচ নায়ককেন্দ্রিক ছবিতে তো আমরা দিনের পর দিন অভিনয় করেছি। এটা শুধু কলকাতা নয়, মুম্বইতেও আছে। আর পারিশ্রমিকের দিকেও কোনও সমতা আসেনি। ছেলেরা বেশি টাকা পাবে, মেয়েরা কম টাকা। এ তো সব জায়গায় চলছে।

তবে এই বিষয় নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। তাই আমি আশাবাদী। বিরাট কোহলীকে যখন মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে লিখতে দেখি ভাল লাগে।

নিজের মতো করেও চেষ্টাও করছি। রবিবার যেমন সমাজের লড়াই চালিয়ে যাওয়া কিছু মুখকে সম্মান জানালাম আমরা। কেউ গার্হস্থ্য হিংসার মুখোমুখি হয়ে জীবনকে বেছে নিয়েছে, কেউ আবার নিজের মা-কে আগুনে পুড়তে দেখার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে জীবন কাটাচ্ছে। এমন মানুষদের সামনে নিয়ে এলাম আমরা। সম্মান জানালাম।

তবে অনেকটা পথ বাকি। রাস্তা লম্বা। সবাই তো ভাবতে পারি না?

এ পৃথিবীতে আমরা মানুষ। শুধুই মানুষ! নারী বা পুরুষ নই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement