Tota Roy Chowdhury

Rabindranath Tagore: শেক্‌সপিয়রের বাগানে হঠাৎ দেখি রবীন্দ্রনাথ, ইংল্যান্ড থেকে লিখলেন ‘ফেলুদা’

চারপাশ দেখতে দেখতেই নজর আটকাল এক জায়গায়। দেখি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাথরের তৈরি আবক্ষ মূর্তি। শুনলাম, ২৫ বছর ধরে একভাবে সাজিয়ে রাখা।

Advertisement
টোটা রায়চৌধুরী
টোটা রায়চৌধুরী
লন্ডন শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২২ ১৪:৪২
শেক্‌সপিয়রের বাড়ির বাগানে স্বয়ং রবি ঠাকুর! ইংল্যান্ড থেকে লিখলেন টোটা রায়চৌধুরী।

শেক্‌সপিয়রের বাড়ির বাগানে স্বয়ং রবি ঠাকুর! ইংল্যান্ড থেকে লিখলেন টোটা রায়চৌধুরী।

ছোট থেকেই বই পড়ার নেশা। ছেলেবেলায় সত্যজিৎ রায়। বড়বেলায় শেক্‌সপিয়র। বেড়াতে বেড়াতে সপরিবারে আমি এখন তাঁর দেশ লন্ডনে। ২২ শ্রাবণের আগে নাট্যকারের বাড়ি দেখতে গিয়েছি। সেখানেই চমৎকৃত, নাট্যকারের বাগানে রবীন্দ্রনাথ!

ব্যাপারটা খুলেই বলি। লন্ডনে বেড়াতে যাব, ঠিক হতেই পরিকল্পনা, আমার প্রিয় নাট্যকারের বাড়ি দেখব। কিন্তু যেখানে শেক্‌সপিয়র থাকতেন সেটি আর নেই। কেন নেই? সেই গল্প আর একদিন। কিন্তু তাঁর জন্মভিটা ‘স্ট্র্যাটফোর্ড অন এভন’, তাঁর স্ত্রী অ্যান হ্যাথওয়ের বাড়ি, শেক্‌সপিয়রের স্কুল ‘দ্য কিংস নিউ স্কুল’ দেখছিলাম। নাট্যকার যে ঘরে জন্মেছিলেন, ৪০০ বছর ধরে সেই ঘর এক ভাবে রাখা!

Advertisement

ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎই বাগানে পা রেখেছি। সেখানে নানা ফুলের বাহার। যত্ন করে সব সাজানো। পর্যটকদের বসার জন্য ডেক চেয়ার। চারপাশ দেখতে দেখতেই নজর আটকাল এক জায়গায়। দেখি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাথরের তৈরি আবক্ষ মূর্তি। শুনলাম, ২৫ বছর ধরে একভাবে সাজিয়ে রাখা। মূর্তির গায়ে তাঁর সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত বিবরণ। শেলি, কিটস, বায়রন—কেউ নন! শেক্‌সপিয়রের বাড়ির বাগানে স্বয়ং রবি ঠাকুর!

আমার দাদু স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। তাই হয়তো ছোট বেলা থেকেই ইংরেজদের পছন্দ করি না। ওদের দেশে গিয়ে আমাদের দেশের কবির প্রতি এই শ্রদ্ধা দেখে সত্যিই আমি বাক্যহারা! আমাদের বাংলায় কোনও কবির বাড়িতে কিন্তু বিদেশি লেখকের মূর্তি চোখে পড়েনি।

আমার দেখাদেখি বাকি বাঙালি পরিবারেরাও কৌতূহলী। তাঁরাও দেখছেন। ছবি তুলছেন। তাঁদেরই একজন সুদূর স্কটল্যান্ড থেকে এসেছেন। তিনি আমায় দেখে চিনতে পেরে উচ্ছ্বসিত, ‘‘কী কাণ্ড! ’চোখের বালি’র ‘বিহারী’ খোদ সৃষ্টিকর্তার পাশে!’’, বক্তব্য তাঁর। অর্থাৎ, ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘চোখের বালি’ ছবিটি তিনি দেখেছেন। ‘বিহারী’ চরিত্রটি করার পর থেকেই রবীন্দ্রনাথের জন্ম বা মৃত্যুদিনে অনেকেই জানতে চেয়েছেন, আমি কী ভাবে দেখি তাঁকে? আনন্দবাজার অনলাইনের মাধ্যমে সবাইকে উত্তর, আমার দিন শুরু হয় রবীন্দ্রনাথকে প্রণাম করে। অনেকেই জানেন না, সৌন্দর্যের পূজারী কবি নিজেকে যত্ন করে সাজাতেন। কেউ, কোনও দিন তাঁর ভারী চেহারা দেখেননি। ছোট থেকে লাঠি খেলা, কুস্তি শিখেছেন। কলকাতায় জুডো শেখার প্রচলনেও তাঁর অবদান আছে।

আমিও তাই রোজ ভোরে নতুন করে নিজেকে নিয়ে চর্চায় মাতি। নিজের বাড়িতে থাকলে যোগাসন করি। এখন যেমন লন্ডনে টেমস নদীর পাড় ধরে দৌড়ব। ভারী চমৎকার জায়গাটা। তার পর পরিপাটি হয়ে এক কাপ কফি আর ভাল কিছু বই নিয়ে বসব। নিজেকে মুক্তমনা করতে। এ ভাবেই প্রতি দিন রবীন্দ্রনাথ আমার সঙ্গে থাকেন। ওঁকে উপলব্ধি করার অবিরাম চেষ্টা আমার সত্যিই ফুরোবে না।

আরও পড়ুন
Advertisement