লাভলি মৈত্রকে ফোনে খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ বিজেপি-র এক কর্মীর বিরুদ্ধে।
জয়ের পর থেকেই ক্রমাগত হুমকির ফোন পাচ্ছিলাম বর্ধমানের গলসির সৌমেন ঘোষালের থেকে। সঙ্গে আপত্তিকর মুঠোফোন বার্তা। শুরুতে বিষয়টিকে ধর্তব্যের মধ্যে আনিনি। কিন্তু যত সময় যায়, ততই হুমকি বাড়তে থাকে। শেষে প্রাণনাশের হুমকি পেতেই সজাগ হলাম। ব্লক করে দিয়েছিলাম ওই বিশেষ নম্বর। তখন শুরু হয় হোয়াটসঅ্যাপ কল, নোংরা বার্তা।
বার্তাগুলো এক জন নারীর পক্ষে কতখানি অপমানজনক, সেটা স্ক্রিনশট দেখলেই সবাই বুঝতে পারবেন। বলা হয়েছে, ‘আমার দল চোর। আমি নিম্নশ্রেণীর মেয়ে, জাকজমক সর্বস্ব’। দলের নেতা-মন্ত্রীদের যখন অতিমারির মধ্যে লকডাউনের সময় হেনস্থা করা হচ্ছে, আমি আদালতে গিয়েছিলাম। তার জন্যও আমাকে ‘চোর’ অপবাদ দেওয়া হয়েছে। তাই চোরের দলকে সমর্থন জানাতে আদালতে যাচ্ছি! প্রত্যেক বার্তার শেষে ‘বিজেপি জিন্দাবাদ’ লেখা। ফোন করলেই ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি। বুঝলাম, শাসকদলের জয় বিরোধী পক্ষ মেনে নিতে পারছে না। তারই ভয়ঙ্কর প্রকাশ, দলের প্রথম সারির নেতা-মন্ত্রী থেকে সদ্য জয়ী বিধায়ককে হেনস্থা। কাউকে ছেড়ে কথা বলার পাত্র নন ওঁরা।
একই সঙ্গে প্রশ্নও জাগল, আমার মতো বিধায়ক যদি ওঁদের লাঞ্ছনার শিকার হয় তা হলে সাধারণ মহিলারা কত অসহায়! যে কোনও সময় বাংলার মেয়েরা লাঞ্ছিত, ধর্ষিত হতে পারেন‘ এর আগে আনন্দবাজার ডিজিটালকে আমি বলেছিলাম, জিতে ফিরলে আমার প্রথম কাজ হবে বাংলার মেয়েদের সুরক্ষা দেওয়া। সেই কথা রাখতেই প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। মনে হয়েছে, এমন এক ঘৃণ্যকে শাস্তি না দিলে আগামী দিনে এই লোকটিই অন্য মেয়েকে উত্যক্ত করবেন। তখনই সোনারপুর থানায় নালিশ দায়ের করি। প্রশাসন আমার পাশে থেকেছে। প্রচণ্ড সাহায্য করেছে।
তবে এই ধরনের হুমকিতে ভয় পাইনি আমি। অবাকও হইনি। যেমন গুরু, তাঁর তেমনি শিষ্য! নির্বাচনী প্রচারে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ প্রকাশ্যে অভিনেতাদের বলেছিলেন, ‘রগড়ে দেব’। মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছিলেন ‘বারমুডা’ পরতে। তথাগত রায় নিজের দলের মহিলা প্রার্থীদেরই অসম্মান করেছেন ‘নগরের নটী’ বলে। এঁদের উপযুক্ত শিষ্য সৌমেন। শাসকদলের মহিলা বিধায়ককে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। নোংরা বার্তা পাঠাচ্ছেন। এ বার বুঝলাম, কেন বিজেপি এমন গো-হারা হারল। বাংলার মানুষ এই সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত নন। তাই তাঁরা ব্যালট বক্সে অপসংস্কৃতি রুখে দিয়েছেন।
একই সঙ্গে জনতার কাছে জলের মতো আরও একটি বিষয় পরিষ্কার। এত দিন বিরোধী শিবির চেঁচাচ্ছিল এই বলে যে, ‘জিতে ফিরে শাসকদল রাজ্যে হিংসা ছড়াচ্ছে’। আমাকে হেনস্থা করে সাধারণের কাছে তারাই প্রমাণ করে দিল, হিংসার রাজনীতি আসলে কোন দল করে! আমরা কিন্তু আইন নিজেদের হাতে তুলে নিইনি।