প্রযেজক তাঁকে কী ভাবে হেনস্থা করেছেন, আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন স্বস্তিকা। ছবি: সংগৃহীত।
‘শিবপুর’ ছবির প্রযোজকদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। দীর্ঘ এক মাস ধরে ইমেলে অভিনেত্রীকে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন স্বস্তিকা। তাঁর সঙ্গে ঠিক কী কী ঘটেছে? আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন স্বস্তিকা।
ছবির দুই প্রযোজক সন্দীপ সরকার এবং অজন্তা সিংহ রায়। সন্দীপ আমেরিকাবাসী। স্বস্তিকা বললেন, ‘‘চুক্তিপত্রে অজন্তা সিংহের স্বাক্ষর ছিল। সন্দীপ সরকার যে আরও এক জন প্রযোজক, সেটা তো এখন জানতে পারলাম! বিগত এক মাস ধরে সন্দীপ সরকার আমাকে ইমেলে হুমকি দিচ্ছেন। প্রথমে কিছু বলিনি। কিন্তু শেষে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে আমি পুলিশে অভিযোগ জানাতে বাধ্য হলাম।’’
গত ২১ মার্চ গল্ফ গ্রিন থানায় বিষয়টা জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন স্বস্তিকা। অভিনেত্রীকে ঠিক কী ধরনের হুমকি দেওয়া হয়েছে? স্বস্তিকার অকপট জবাব, ‘‘বলে শেষ করতে পারব না! আমি সহযোগিতা না করলে আমাকে পুলিশে দেওয়া হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দপ্তরে আমার নামে অভিযোগ করা হবে। আমেরিকান দূতাবাসে অভিযোগ জানিয়ে আমার ভিসা বন্ধ করা হবে। আমেরিকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না— এ রকম চলতেই থেকেছে।’’ কিন্তু হুমকি কেন? কী করেছেন স্বস্তিকা? অভিনেত্রী বললেন, ‘‘আমি জানি না। আমি নাকি ওদের থেকে টাকা চেয়েছি! কিন্তু চুক্তির বাইরে একটা টাকাও আমি নিইনি। আমাকে নাকি যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। আরে, তা হলে আমার ম্যানেজার রয়েছেন কেন? মুম্বইতে দিনের পর দিন কাজ করছি। ওখানে তো অভিনেতার ম্যানেজারই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন।’’
তবে এখানেই অভিযোগের পালা শেষ নয়। স্বস্তিকা জানালেন, অভিনেত্রীর ছবি বিকৃত করে পর্ন ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ওই প্রযোজক। স্বস্তিকার কথায়, ‘‘আমার ছবি মর্ফ করা সেই ন্যুড ছবির স্যাম্পল ইমেলে পাঠিয়েছিলেন সন্দীপ সরকারের এক পরিচিত।’’ এই ব্যক্তি ইমেলে নিজেকে এক জন ‘হ্যাকার’ বলেই অভিনেত্রীর কাছে দাবি করেছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে স্বস্তিকা বললেন, ‘‘ওই ব্যক্তি সরাসরি লিখেছেন, সন্দীপ তাঁর পরিচিত এবং আমি নাকি ওকে হেনস্থা করছি। আমি সহযোগিতা না করলে সেই ছবি পর্ন সাইটে আপলোড করে দেওয়ার কথা বলেছেন।’’ এত কিছুর পরেও সন্দীপ নাকি স্বস্তিকার কাছে দাবি করেছেন যে, তিনি যা করেছেন ঠিক করেছেন।
শুধু স্বস্তিকা নন, হেনস্তার হাত থেকে রেহাই পাননি অভিনেত্রীর ম্যানেজারও। স্বস্তিকার কথায়, ‘‘আমার ম্যানেজার স্কুটি চালান। ওঁকে ইমেলে বলা হয়েছে যে রাস্তায় কোনও দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে!’’ এই প্রসঙ্গেই স্বস্তিকা জানালেন, ছবির পরিচালক অরিন্দম ভট্টাচার্যর সঙ্গেও নাকি দিনের পর দিন খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। স্বস্তিকার কথায়, ‘‘ছবির প্রচার নিয়ে কোনও কৌশলের কথা কিন্তু ইমেলে আসে না। মাঝরাতে এবং ভোরের দিকে শুধুই আসে প্রাণনাশের হুমকি। নিজেদের প্রথম প্রযোজনাতেই এরা যদি এই করে, তা হলে আমি জানি না এর পর কী করে কাজ করবে!’’
স্বস্তিকা জনালেন, অজন্তা সিংহ রায়কে বিষয়টা জানাতেই তিনি নাকি নিজেকে অসুস্থ বলে দাবি করেছেন। সঙ্গে বলেন যে, তিনি কিছুই জানেন না। স্বস্তিকার কথায়, ‘‘একই প্রযোজনা সংস্থার এক জন অংশীদার অভিনেত্রীকে দিনের পর দিন হেনস্থা করছেন, আর অন্য জন নাকি জানেন না! তাঁর উলঙ্গ ছবি পাঠানো হলে অজন্তা কি চুপ থাকতেন?’’ এরই সঙ্গে অভিনেত্রী বললেন, ‘‘আমি ছবির বিরুদ্ধে নই। আমার প্রশ্ন, এক জন প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রীর সঙ্গে যদি এই ঘটনা ঘটে, তা হলে আমার ভয় করছে, নবাগত অভিনেতাদের তো এই ধরনের প্রযোজকরা রাস্তায় দাঁড় করিয়ে উলঙ্গ করে দেবেন!’’
‘‘একটা ইমেল আসার পরেই যে আমি ইম্পাতে অভিযোগ জানিয়েছি তা কিন্তু নয়। কারণ আমি ছবির পক্ষে। ছবির পোস্টারও আমি সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছি। এক জন অভিনেত্রী হিসেবে আমিও চাই যাতে ছবিটা মুক্তি পায়।’’
পুলিশ ঘটনাটির তদন্তে নেমেছে। আপাতত এই ছবির প্রচারপর্বের সঙ্গেও নিজেকে জড়িয়ে রাখতে চাইছেন না স্বস্তিকা। বললেন, ‘‘আমার মনের অবস্থা ভাল নেই। প্রতি দিন সকাল সকাল ডেথ থ্রেট পেলে আর কাজের মানসিকতা থাকে না!’’