সাম্প্রতিক অতীতে দক্ষিণী ছবির হিন্দি রিমেক থেকে দর্শক মুখ ফিরিয়েছেন। — ফাইল চিত্র।
গত সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছে ‘শেহজ়াদা’। কার্তিক আরিয়ান অভিনীত ছবিটি বক্স অফিসে যতটা ঝড় তুলবে মনে করা হচ্ছিল, প্রথম দু’দিনের ব্যবসা কিন্তু বিপরীত কথা বলছে। শুক্রবার ছবির ব্যবসা মাত্র ৬ কোটি টাকা। রবিবার পর্যন্ত ছবির ভাগ্যে জুটেছে সর্বসাকুল্যে ২০ কোটি টাকা। তার উপর ছবিটি অল্লু অর্জুন অভিনীত দক্ষিণী ‘আলা বৈকুণ্ঠপুরামুলো’ ছবির রিমেক। তা হলে, হিন্দি ছবির দর্শক কি এখন আর রিমেক দেখতে চাইছেন না? সাম্প্রতিক অতীতে দক্ষিণী ছবির হিন্দি রিমেকের ভাগ্য দেখেই অনেকেই কিন্তু সিঁদুরে মেঘ দেখছেন।
রিমেকের ক্ষেত্রে ছবিটির নির্মাণের পাশাপাশি আরও একাধিক বিষয় কাজ করে। কাস্টিং থেকে শুরু করে গল্পের প্রেক্ষাপট তো রয়েইছে। তার সঙ্গেই মাথায় রাখতে হবে মূল ছবিগুলি এখন বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এবং টিভির দৌলতে দর্শক ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছেন। এর মধ্যে কিছু ছবি আবার হিন্দিতে ডাব করেও মুক্তি পেয়েছে। আবার ছবিগুলো নেট দুনিয়াতেও অত্যন্ত সহজলভ্য। তাই রিমেকের মধ্যেও দর্শক এখন চাইছেন নতুন চমক। শুধুমাত্র ‘কপি পেস্ট’ নীতিতে এগোলে ভরাডুবি নিশ্চিত।
২০২২ সালের কয়েকটি ‘বড়’ বাজেটের হিন্দি রিমেকের দিকে তাকানো যাক। গত বছর এপ্রিল মাসে মুক্তি পেয়েছিল শাহিদ কপূর অভিনীত ‘জার্সি’। তেলুগু থেকে তৈরি এই রিমেক বক্স অফিসে কোনও ছাপ ফেলতে পারেনি। প্রতিটি দৃশ্য মূল ছবির নকল। সেখানে পরিচালক কোনও নতুনত্বের ছাপ রাখতে পারেননি। ফলস্বরূপ দর্শক সিনেমা থেকে মুখ ফিরিয়েছিলেন। অথচ কয়েক বছর আগে এই শাহিদের হাতেই রিমেক ছবি ‘অর্জুন রেড্ডি’ বক্স অফিসে ঝড় তুলেছিল।
সেপ্টেম্বরে মুক্তি পায় ‘বিক্রম বেদা’। একই নামের তামিল ছবি থেকে অনুকরণ। মূল ছবিতে ছিলেন বিজয় সেতুপতি এবং মাধবন। হিন্দিতে হৃতিক রোশন এবং সইফ আলি খান। ছবিতে হৃতিকের অভিনয় প্রশংসিত হয়। কিন্তু দু’জন বড় তারকার উপস্থিতি থাকলে ছবির যা ব্যবসা হওয়া উচিত তা কিন্তু হয়নি। বক্স অফিসে ছবির মোট ব্যবসার পরিমাণ দাঁড়িয়ে ছিল ১৩৬ কোটি টাকা।
এ ছাড়াও বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে। গত বছর জাহ্নবী কপূর অভিনীত ‘গুডলাক জেরি’ এবং ‘মিলি’র মধ্যে মিল কোথায়? দুটো ছবিই দক্ষিণী ছবির রিমেক। রাজকুমার রাও অভিনীত ‘হিট: দ্য ফার্স্ট কেস’ ছবিটিও তেলুগু ছবির রিমেক। মজার বিষয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মূল ছবিটির পরিচালকের হাতেই তৈরি হয়েছে হিন্দি ছবিটি। কিন্তু তার পরেও দর্শক মনে কাঙ্ক্ষিত ‘ম্যাজিক’ কিন্তু তৈরি হয়নি। এমনকি, আমির খানের ‘লাল সিংহ চড্ডা’র মতো ছবিও সেই অর্থে চলেনি, জনপ্রিয় এবং বহুল চর্চিত ‘ফরেস্ট গাম্প’-এর রিমেক বলেই।
অতিমারির পর দর্শক বুঝে পা ফেলছেন। মৌলিক বিষয় কিংবা নতুন ভাবনা থাকলে, তা হলেই একমাত্র গ্যাঁটের টাকা খরচ করে বিনোদনের স্রোতে গা ভাসাতে রাজি তাঁরা। ফিল্ম ব্যবসা বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, বিনামূল্যে বাড়ি বসে দেখে নেওয়া কনটেন্টকে শুধুমাত্র বলিউডের অভিনেতা দিয়ে বদলে দিলেই যে দর্শক হলমুখী হবেন এই ধারণা এখন অতীত। চাই নতুন কিছু। কথাটা ঠিকই। কারণ সেই মন্ত্রেই গত বছর ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ এবং হালে ‘পাঠান’ দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছে।
তবে এই প্রবণতার ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন ‘দৃশ্যম’ ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি। মালয়লাম থেকে রিমেক। মূল ছবিতে মুখ্য চরিত্রে মোহনলাল, হিন্দিতে অজয় দেবগন। কিন্তু একটা বড় সংখ্যক দর্শকের কাছে হিন্দি ছবিটি এখনও অজয় দেবগনের ছবি হিসেবেই পরিচিত। কারণ জিতু জোসেফ পরিচালিত মূল ছবিটি হিন্দি ডাব করে রিলিজ করা হয়নি। তার থেকেও বড় কথা, ছবিতে বিজয় সালগাঁওকরের সফরের সঙ্গে দর্শক একাত্ম হতে পেরেছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই বক্স অফিসেও তার প্রভাব পড়েছে।
আগামী সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে ‘সেল্ফি’। মালয়ালম ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স’ ছবির রিমেক। কিন্তু অক্ষয় কুমার এবং ইমরান হাশমির ভাগ্যে কী লেখা রয়েছে তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে। আগামী মাসে মু্ক্তি পাবে অজয় দেবগন অভিনীত এবং পরিচালিত ছবি ‘ভোলা’। তামিল ‘কাইথি’ ছবির রিমেক হলেও শোনা যাচ্ছে, অজয় ছবিতে নতুন কিছু চমক রেখেছেন। আবার ইদে মুক্তি পাবে সলমন খান অভিনীত ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’ । ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তামিল ছবি ‘ভীরম’-এর রিমেক। এই ছবিতেও নির্মাতারা চিত্রনাট্যে ছোট ছোট পরিবর্তন করেছেন। তাই দর্শক রিমেকে মজবেন কি না, এখন সেটাই দেখার।