Padma Palash Halder

‘পদ্মপলাশের জয় আসলে বাংলা ভাষার জয়’, বিতর্কের মাঝে মুখ খুললেন প্রশিক্ষক দেব

সারেগামাপা-এর বিজয়ী পদ্মপলাশকে নিয়ে নানা কাটাছেঁড়া, চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। এ বার এই রিয়েলিটি শোয়ের অন্দরের গল্প শোনালেন প্রশিক্ষক দেব চৌধুরী।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২১:২১
Picture of Sa Re Ga Ma Pa Winner padma palash and his mentor

সারেগামাপা-এর বিজয়ী পদ্মপলাশকে নিয়ে হাজার বিতর্ক, এ বার মুখ খুললেন প্রশিক্ষক দেব চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত।

এ বছরের সারেগামাপা শেষ হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। এ বারের বিজয়ী লক্ষ্মীকান্তপুরের ছেলে পদ্মপলাশ হালদার। কিন্তু এর মাঝেই শুরু হয়ে গিয়েছে বিতর্ক, চলছে বিস্তর কাটাছেঁড়া। তবে এই প্রথম নয়, ২০২১ সালের সারেগামাপা বিজয়ী অর্কদীপ মিশ্রও এই এক অভিজ্ঞতার সাক্ষী। পদ্মপলাশ ও অর্কদীপ দুজনেই সারেগামাপা-এর বিজয়ী, এ ছাড়াও তাঁদের মিল রয়েছে। তাঁরা দুজনেই লোকসঙ্গীতের প্রতিনিধি। পর পর দু’বছর লোকসঙ্গীতের ঘরানা থেকেই বিজয়ী পেয়েছে সারেগামাপা-র মঞ্চ। লোকগানকে টিভির দর্শকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। আঞ্চলিক স্তরে নয়, লোকগানকে পৌঁছে দিয়েছেন জাতীয় স্তরে। সারেগামাপা-র মঞ্চে লোকগানের প্রশিক্ষক ছিলেন কালিকাপ্রসাদ। ২০১৭ সালে পথ দুর্ঘটনায় কালিকাপ্রসাদের মৃত্যু। সৃষ্টি হয়েছিল এক শূন্যতার। দর্শক থেকে শো-নির্মাতা সকলেই সংশয়ে ছিলেন, এই শূন্যস্থান কি পূরণ হবে! সকলের প্রিয় কালিকাদার প্রয়াণের পর সারেগামাপা-র লোকগানের হাল ধরলেন প্রশিক্ষক ও গবেষক দেব চৌধুরী। বার বার লোকগানের ঘরানার প্রতিযোগীদের নিয়ে বিতর্ক, বিচারকদের নিয়ে কুমন্তব্য, অন্দরের যাবতীয় গল্প শোনালেন অর্কদীপ-পদ্মপলাশদের প্রশিক্ষক।

Advertisement
Picture Of Sa re Ga ma pa Mentor Deb Chowdhury

কালিকাপ্রসাদের প্রয়াণের পর সারেগামাপা-র লোকগানের হাল ধরেন প্রশিক্ষক ও গবেষক দেব চৌধুরী। ফাইল চিত্র।

বিচারকদের বিচারে খুশি নন দর্শক। পদ্মপলাশ অজয় চক্রবর্তীর ছাত্র। সে কারণেই নাকি পক্ষপাত হয়েছে তাঁকে নিয়ে। এ প্রসঙ্গে দেব চৌধুরী বলেন, ‘‘আমি লোকসঙ্গীতের মেন্টর থাকাকালীন পর পর দু'বার লোকসঙ্গীত থেকেই বিজয়ী হয়। গত বার অর্কদীপ যখন বিজয়ী হন, তখনও অনেক বিতর্ক হয়েছে, এ বারে পদ্মপলাশের ক্ষেত্রেও অন্যথা কিছু হল না। আসলে আমরা মুখেই বাঙালিয়ানা ফলাই। কিন্তু বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে আসলে আমরা বড়ই উদাসীন এবং আত্মবিস্মৃত! গত বারেও অর্কদীপ লোকগানের পাশাপাশি অন্য গান গেয়েছেন। এ বারেও কিন্তু পদ্মপলাশ কীর্তনের বাইরে বেশ কিছু অন্য গান দারুণ গেয়েছেন। আরও একটা বিষয়, এ বারের যুগ্ম বিজয়ী অস্মিতা একটা ‘ফেস অফ’ রাউন্ডে কিন্তু লোকসঙ্গীত গেয়েই প্রতিযোগিতায় ফিরে আসে।’’

Picture of Deb Chowdhury  and asmita kar

এ বছরের যুগ্ম বিজয়ী অস্মিতার সঙ্গে প্রশিক্ষক দেব। ফাইল চিত্র।

কালিকাপ্রসাদ, যিনি লোকগানকে টিভির দর্শকের কাছে জনপ্রিয় করে তোলেন, তাঁর জায়গায় এই গুরুদায়িত্ব তুলে নেওয়ার সময় চ্যালেঞ্জ কি আসেনি? দেবের কথায়, ‘‘যে কোনও সৃজনশীল মানুষের কাছে একটাই মুখ্য চ্যালেঞ্জ থাকে। অতীতের চেয়ে বর্তমানে আরও একটু ভাল কাজ করতে হবে। আসলে প্রকৃত শিল্পীর প্রতিদিন পুনর্জন্ম হয়। বাউল সম্রাট পূর্ণচন্দ্র দাস, পবনদাস বাউল, গৌরখ্যাপা সারা পৃথিবীকে বাউল সঙ্গীতের ধারাকে চিনিয়েছেন। এর পাশাপাশি কালিকাপ্রসাদ তার গবেষণালব্ধ মাটির ছোঁয়া রেখে সমকালীন পরিবেশনায়, সারেগামাপা-র মঞ্চে আপামর বাঙালির কাছে লোকগানকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। যার ফলও হাতেনাতে পেয়েছেন। দর্শকের বিপুল সাড়া।’’

এখন যাঁরা অন্য ধারার গান গাইছেন তাঁরা লোকগানের সঙ্গে ফিউশন করছেন, দেবের কথায়, ‘‘জি বাংলার সারেগামাপা-র জন্যেই তা সম্ভব হয়েছে।’’ বাংলার সব থেকে বড় রিয়েলিটি শো-এর অন্যতম মেন্টর, এত বড় দায়িত্বের চাপ ঠিক কতটা? দেবের কথায়, ‘‘লোকসঙ্গীতের মেন্টর হিসেবে আমার কাছে জি বাংলা সারেগামাপা-র মঞ্চ একটা খোলা ক্যানভাস, যেখানে আমি আমার মতো করে নিজের রঙে সাজাতে চেষ্টা করেছি। তাঁর জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাব এই শো-র পরিচালক অভিজিৎ সেন এবং রথীজিৎ ভট্টাচার্যকে।’’

বাংলা এক নম্বর গানের রিয়েলিটি শো, সেখানেই বিচারকরা নাকি পক্ষপাতদুষ্ট, স্বজনপোষণ হয় এই মঞ্চে, অভিযোগ দর্শকের । দেব জানান, সারেগামাপা একটা বিরাট প্ল্যাটফর্ম, একটা বৃহৎ কর্মযজ্ঞ। অনেক মানুষের কঠোর পরিশ্রমে ও ভালবাসায় এই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। এখানে পক্ষপাতের কোনও জায়গা নেই। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে যারা বিচারক বা মহাগুরু বা গুরুরা আসেন, তাঁরা খুবই বড় মাপের মানুষ। এক একজন মায়েস্ট্রো, কোনও রকম বিচ্যুতির প্রশ্নই আসে না। তাঁদের ক্ষেত্রে এই ধরনের প্রশ্ন ওঠা সামগ্রিক ভাবে সংস্কৃতির অসম্মান, অপমান।’’

Picture Of Sa re ga ma pa mahaguru  Pandit Ajay Chakraborty and mentors

সারেগামাপা-এর মহাগুরু পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর সঙ্গে মেন্টররা ফ্রেমবন্দি। ছবি: ফেসবুক।

পদ্মপলাশের সারেগামাপা-র মঞ্চে আসা ও বিজয়ী হওয়ায় সত্যি কি স্বজনপোষণের হাত রয়েছে? গল্পটা শোনালেন দেব। সারেগামাপা-র লোকসঙ্গীতের প্রশিক্ষকের কথায়, ২০১৯ সালের শেষের দিকে উত্তর চব্বিশ পরগনার কোনও একটি স্টেশনে লাস্ট ট্রেন ধরতে যাওয়ার পথে একটি কীর্তনের আসর থেকে একটা অন্য রকম গান আমায় টানে। গিয়ে দেখি রাধামাধবের মন্দিরে একটি ছেলে কী অবলীলায় পদাবলী কীর্তনের মাঝেমাঝে নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, শ্যামাসঙ্গীত, মান্না দের গান সব মিশিয়ে পরিবেশন করছে, কী অপূর্ব তার প্রকাশভঙ্গি! সে দিনের সেই ছেলেটা এখনকার সারেগামাপা বিজয়ী পদ্মপলাশ।”

শিল্পীকে প্রথম সুযোগ দেন দেব চৌধুরী ‘গুড মর্নিং আকাশ’ নামক একটি অনুষ্ঠানে। তার পর সারেগামাপা-র অডিশন দেন, পদ্ম নির্বাচিত হন। শেষে দেবের সংযোজন, ‘‘একজন গ্রামীণ শিল্পীর এই উত্থান, একজন লোকসাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে আমার খুব ভাল লেগেছে। পদ্মপলাশের জয় আসলে বাংলার লোকসংস্কৃতির জয়, বাংলা ভাষার জয়।’’

আরও পড়ুন
Advertisement