rupa bhattacharya

Dilip-Rupa: অলবিদা রাজনীতি, রূপার ঘোষণা! রাহুল-শ্রীলেখার প্রতিবাদের ফল?

তিন বছর বিজেপি-র অন্দরে ‘ব্রাত্য’ রূপার সিদ্ধান্ত, আর কোনও দলেই নেই।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২১ ২৩:৩৩
রুপা ভট্টাচার্য।

রুপা ভট্টাচার্য।

বামেদের শ্রমজীবী ক্যান্টিনের ৫০০ দিন পূর্তির মিছিলে পা মিলিয়েছিলেন সোমবার। দলের একাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে ছবিও তুলেছিলেন। অনেকে মনে করেছিলেন, একদা বাম সমর্থক রূপা ভট্টাচার্যের ৩ বছর গেরুয়া শিবিরে অবস্থানের পর ‘ঘর ওয়াপসি’ ঘটছে হয়তো। বুধবার দল ছাড়ার কথা জানিয়ে নিজের নেটমাধ্যমের পাতায় বিজেপি রাজ্য সভাপতিকে দীর্ঘ চিঠিও লেখেন। তার পরেই মোচড়! বাম দল কেন, কোনও রাজনৈতিক দলেই আর ফিরছেন না রূপা। তাঁর সাম্প্রতিকতম পোস্ট অনুযায়ী, রূপা রাজনীতি ছাড়লেন। স্পষ্ট ভাষায় সে কথা জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘অন্য কোনও রাজনৈতিক দলেই যোগ দিচ্ছি না। মানুষের ভালর জন্য ন্যায্য কথা বলব। ভাল কাজকে সমর্থন করব। খারাপের প্রতিবাদ করব।’

বামদের আমন্ত্রণে সে দলের বিশেষ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন বলে অনেকে ধরে নিয়েছিলেন তিনি ওই দলেই যাবেন হয়তো। রূপা ভট্টাচার্যের সঙ্গে সে দিনের কর্মসূচিতে এসেছিলেন অনিন্দ্যপুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের উপস্থিতি নিয়ে নেটমাধ্যমে তীব্র প্রতিবাদ জানান শ্রীলেখা মিত্র, রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়। অনিন্দ্য-রূপা থাকলে তাঁরা দলত্যাগ করবেন, এ কথাও জানান। সে কারণেই কি রূপা রাজনীতি ছাড়লেন?

জবাব আপাতত মেলেনি। তবে বুধবারের পোস্টে রূপা সরাসরি রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। অভিনেত্রী সাফ জানিয়েছেন, যাঁরা যোগ দিয়েছেন তাঁরা জানেন, বিজেপি-র অন্দরের ‘লবিবাজি’। সেখানে মুকুল রায়-ঘনিষ্ঠদের দিলীপ ঘোষ চেনেন না! তাই তিন বছর ধরে দলের হয়ে কাজ করার পরেও বিজেপি-র অন্দরে রূপা এবং তাঁর সতীর্থরা ব্রাত্য! সেই অভিমান নিয়েই দলত্যাগ করেন তিনি।

Advertisement

রূপার অনুযোগের এখানেই শেষ নয়। দীর্ঘ পোস্টে তাঁর আরও দাবি, এক সময় বিজেপি প্রচার করেছিল, তৃণমূল চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল দল। সেখানে নীতি-শৃঙ্খলার বালাই নেই। রূপা নিজে বিজেপি-তে যোগ দিয়ে দেখেছেন বিশৃঙ্খলা সেখানেও কম নেই! উদাহরণ হিসেবে তিনি পোস্টে জানিয়েছেন, ‘‘দু’বছর এই লবির জন্য ভয়ঙ্কর নাকানিচোবানি খেলাম সবাই। এর সঙ্গে গেলে ও রাগ করে। এ ডাকলে ও বলে, রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষ করে দেব।’’ রূপার মতে, এই ‘রগড়ানি’ খেয়েই নাকি দল ছেড়েছেন অর্ধেক শিল্পী। রূপারা তখনও মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন!

গেরুয়া শিবির ত্যাগের পর স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, কী কারণে বাম সমর্থক অভিনেত্রী হঠাৎ বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন? তার উত্তরও তিনি দিয়েছেন। বলেছেন, সেই সময় তাঁকে ‘ধান্দাবাজ’ তকমা দিয়েছিলেন চেনাজানারা। যুক্তি, ‘২০১৯-এর ১৮ জুলাই আমরা যাঁরা একসঙ্গে যোগ দিয়েছিলাম তাঁদের দুটো ধান্দা ছিল। এক, বাংলায় নৈরাজ্যের অবসান হবে। কেন্দ্র ও রাজ্যে যদি এক সরকার হয় তা হলে রাজ্যে কর্মসংস্থান বাড়বে। আমাদের রাজ্য থেকে দলে দলে পরিযায়ী শ্রমিক, পরিযায়ী ইঞ্জিনিয়ার, পরিযায়ী কর্পোরেট, পরিযায়ী শিক্ষক এমনকি পরিযায়ী শিল্পীরা দলে দলে বাঁচার জন্য ঘর ছাড়বেন না। এটা একটা ধান্দা ছিল।’ ‘দ্বিতীয় ধান্দা’ ছিল নিজেদের ঘর বাঁচানো। রূপার মতে, ‘আমাদের বড় আর ছোট পর্দার দুনিয়ায় বহু শিল্পীর দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল, সেটা সবাই জানেন। সেই অবস্থা থেকে উদ্ধার পেতে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য চাইছিলাম, যাতে রাজনৈতিক রং না দেখে শুধু যোগ্যতার নিরিখে এখানে শিল্পী-কলাকুশলী-প্রযোজক সবাই শান্তিপূর্ণ ভাবে কাজ করতে পারেন। এটাই আসল ধান্দা ছিল আমাদের।’

অভিনেত্রীর দাবি, ২০১৯-এ দিল্লিতে যে দিলীপ তাঁদের গলায় উত্তরীয় পরিয়েছিলেন তার সঙ্গে বর্তমান বিজেপি রাজ্য সভাপতির আকাশ-পাতাল পার্থক্য। সেই দিলীপ এখনকার মতো ‘ভণ্ড’ ছিলেন না। শিল্পীদের ‘রগড়ে’ দেওয়ার হুমকিও দিতেন না। একই সঙ্গে রূপার দাবি, তিনি ভুলতে পারেননি, তিন বছর ধরে দলে থাকার পরেও তাঁকে এবং বাকি কর্মীদের নির্বাচনে টিকিট না দেওয়ার খেদ। নির্বাচনের পরে তাঁদের শুনতে হয়েছে, তাঁরা দলের কেউ নন! পাশাপাশি, রূপা বিরোধিতা করেছেন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পর্যুদস্ত বাংলায় সিবিআই হানার।

রূকাপ দাবি, এর পরেই তাঁর সিদ্ধান্ত, যাঁরা তাঁকে ‘শিল্পী’ বানিয়েছেন সেই জনগণের পাশেই থাকতে চান তিনি।

Advertisement
আরও পড়ুন