— প্রতীকী চিত্র।
নিজস্ব দলিত ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে সংসদে বি আর অম্বেডকর নিয়ে অমিত শাহের মন্তব্যের দায় নিতে রাজি নন শরিক দলের নেতারা। ফলে দলিত-বিতর্কে কার্যত একঘরে হয়ে পড়ার দশা বিজেপির। তাই আগামী দিনে ওই বিতর্ক কোন পথে সামলানো যায়, তা শরিকদের সঙ্গে বসে ঠিক করতে আগামিকাল বড়দিনে বৈঠক ডাকল বিজেপি। দিল্লিতে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার বাড়িতে ওই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
বিজেপি সূত্রে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বিষয় ও নতুন বছরে সরকারের গতিপথ ঠিক করতে ওই বৈঠক হওয়ার কথা। আলোচনা হবে এক দেশ এক ভোট, ওয়াকফ বিল-সহ বাজেট অধিবেশন নিয়েও। যদিও সূত্রের মতে, মূল আলোচনার বিষয়বস্তু হল অম্বেডকর বিতর্ক। অমিত শাহের বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে যে অস্বস্তিজনক পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে এনডিএ-র রণকৌশল ঠিক হবে কালকের বৈঠকে। তারই অঙ্গ হিসাবে আজ বিজেপিশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা সাংবাদিক সম্মেলন করে কংগ্রেসের দলিত-বিরোধী চেহারা তুলে ধরার চেষ্টা করেন। প্রধান বিরোধী দলকে আক্রমণ শানান যোগী আদিত্যনাথ থেকে দেবেন্দ্র ফডণবীসেরা।
কিন্তু যে ভাবে অম্বেডকর নিয়ে বিরোধীরা পথে নেমেছেন, তাতে বেশ অস্বস্তিতে এনডিএ-র দলগুলি। শরিক দলগুলির সমস্যা হল, জোটসঙ্গী হওয়ায় অমিত শাহের বিতর্কিত মন্তব্যের দায় তাঁরাও এড়িয়ে যেতে পারছেন না। বিরোধীরা উল্টে শরিক দলগুলির নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। যার ফলে দলের ভোটব্যাঙ্কের কাছে কোনও জবাব দিতে পারছে না শরিকরা। উত্তরপ্রদেশে বিজেপির অন্যতম শরিক আরএলডি। ওই রাজ্যে দলিত ভোটই নির্ণায়ক শক্তি। অমিত শাহের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে দলের একাধিক মুখপাত্র কার্যত বিজেপির সমালোচনায় মুখ খোলায় অস্বস্তিতে পড়ে যান আরএলডি নেতা জয়ন্ত চৌধরী। অস্বস্তি প্রকাশ করে বিজেপিও। বিতর্ক এড়াতে গত কাল দলের সব মুখপাত্রকে পাল্টে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন জয়ন্ত।
বিহারে আগামী বছরেই ভোট। ওই রাজ্যে ১৬ শতাংশ দলিত ভোট রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে ওই দলিত ভোটের বড় অংশকে পাশে পেয়ে এসেছেন নীতীশ কুমার। কিন্তু অমিত শাহের মন্তব্যের পরে যে ভাবে কংগ্রেস ও আরজেডি ওই রাজ্যে দলিত ভোটকে কাছে টানতে প্রচারে নেমেছে, তাতে বেশ উদ্বিগ্ন জেডিইউ। আর এক শরিক চিরাগ পাসোয়ান নিজে দলিত শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করেন। অমিত শাহের মন্তব্য অস্বস্তিতে ফেলেছে তাঁকেও। একই সমস্যায় ভুগছেন বিহারের আর এক দলিত নেতা তথা এনডিএ শরিক জিতন রাম মাঁঝির দল। চিরাগ বা মাঁঝি কেন অমিতের মন্তব্যে চুপ, সেই প্রশ্ন তুলে অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন বিরোধীরা।
পাল্টা রণকৌশল ঠিক করতে তাই বড়দিনকেই বৈঠকের জন্য বেছে নিয়েছে বিজেপি। আজ বিজেপি সূত্রে বলা হয়েছে, সামনেই বাজেট অধিবেশন। বাজেট ছাড়াও ওয়াকফ বিল, যৌথ সংসদীয় কমিটিতে এক দেশ এক ভোট বিলের রণকৌশল ঠিক করার লক্ষ্যে বৈঠক হওয়ার কথা। যদিও সূত্রের মতে, কালকের বৈঠকের অন্যতম আলোচ্য হল অম্বেডকর বিতর্কের মোকাবিলা কী ভাবে করা যায় তা স্থির করা। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, বিজেপি এ নিয়ে রাজ্যে-রাজ্যে কোন অস্ত্রে আক্রমণ শানাবে সেই রূপরেখা তৈরি হবে কালকের বৈঠকে। শরিক দলগুলি যাতে সেই লড়াইয়ে পাশে থাকে, তা কালকের বৈঠকে নিশ্চিত করতে চাইছে বিজেপি। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘আগামী দিনে কংগ্রেস ও অম্বেডকরের মধ্যে বৈরিতার সম্পর্ক নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে দেশ জুড়ে প্রচারে নামতে চলেছে বিজেপি। আক্রমণের নিশানায় থাকবেন রাহুল গান্ধীও। সেই প্রচারের অঙ্গ হিসাবে আজ বিজেপিশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের দিয়ে কংগ্রেস তথা রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ শানাতে মাঠে নামিয়েছিল দল।’’