এই ছবির সব থেকে বড় চমক কপিল। অভিনেতা হিসেবে তাঁর কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। ছবি: সংগৃহীত।
কলিং বেল বাজল। ডেলিভারি বয় হাজির। দরজা খুলে পার্সেল নিয়ে আবার দরজা বন্ধ। পলকে মিলিয়ে গেলেন পছন্দের জিনিসটি চকিতে পৌঁছে দেওয়া দরজার ওপারের মানুষটি। সেই সঙ্গে হারিয়ে গেল বহু নেপথ্য লড়াই। যে লড়াইয়ের মধ্যে রয়েছে রেটিং এবং ইনসেন্টিভের জাঁতাকলে আটকে থাকা মানুষটির ব্যক্তিজীবন। মোবাইল অ্যাপের যুগে নিত্যদিন বাড়িতে আসা এই ‘ডেলিভারি বয়’দের গল্পই তুলে ধরেছে নন্দিতা দাস পরিচালিত ছবি ‘জ়িগাটো’।
নন্দিতা নিজে শক্তিশালী অভিনেত্রী। পরিচালকের আসনে বসে এই ছবিতে তাঁর তুরুপের দুই তাস— কপিল শর্মা এবং সাহানা গোস্বামী! কমেডিয়ান হিসেবে কপিলের বিপুল জনপ্রিয়তাকে নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়া নিষ্প্রয়োজন। অন্য দিকে সাহানার পরিচিতি, তাঁর শক্তিশালী অভিনয়। সব মিলিয়ে, খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিদিনের অজানা লড়াইকে সম্মান জানিয়েছেন পরিচালক।
সহজ-সরল গল্প। প্রেক্ষাপট ভুবনেশ্বর। মানস (কপিল শর্মা) ‘জ়িগাটো’ নামক এক অ্যাপে খাবার ডেলিভারি করে। অভাবের সংসারে দুই সন্তান এবং মায়ের দায়িত্ব তার কাঁধে। একটু উপরি উপার্জনের জন্য চলতে থাকে ক্রেতাদের থেকে মানসের পাঁচতারা আদায়ের লড়াই। একটু সচ্ছলতার চাহিদায় দিনে দশটা ডেলিভারির লক্ষ্য তাড়া করে বেড়ায় তাকে। মানসের সঙ্গে ঝাড়খণ্ড থেকে ভুবনেশ্বরে এসে আস্তানা গেড়েছে স্ত্রী প্রতিমা। স্বামীর পরিশ্রমের ভাগিদার হতে সে-ও উচ্চবিত্ত পরিবারে ‘মালিশওয়ালি’র কাজ নেয়। কখনও আবার সাংসারিক রীতি ভেঙে ‘পুরুষদের পোশাক’ পরে শপিং মলের নাইট শিফ্টে কাজ করে। দম্পতির জীবনে ভাগ্যের চাকা কোন দিকে ঘোরে, তা নিয়েই গল্প এগিয়েছে।
এই ছবির সব থেকে বড় চমক কপিল। টিআরপি তালিকায় উপরের দিকে থাকা নিজের কমেডি শোয়ে দর্শক হাসানো এবং মায়ানগরীর প্রথম সারির তারকাদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া কপিল কিন্তু এখানে অনুপস্থিত। এটাই ছিল অভিনেতা হিসেবে তাঁর কাছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই পরীক্ষায় কপিল পাশ করেছেন। সংসার সামলাতে এক পিতার লড়াইকে ফুটিয়ে তুলেছেন বাস্তবসম্মত দিক থেকে। উল্লেখ্য, এর আগেও কপিল বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন। কিন্তু এই ‘নতুন’ কপিল দর্শককে হাসানোর পরিবর্তে বিষাদে ভরিয়েছেন বেশি। আগামী দিনে কপিল কী ধরনের ছবিতে হাত পাকাবেন, এই ছবি তার স্পষ্ট আন্দাজ দেয়। ছবিতে কপিলকে যোগ্য সঙ্গত করেছেন সাহানা। স্বানন্দ কিরকিরে, সায়নী গুপ্ত এবং গুল পনাগের ক্যামিয়ো মন্দ নয়।
নন্দিতার আগের ছবির বিষয় ছিল একটু সিরিয়াস। উর্দু সাহিত্যিক সাদাত হাসান মান্টোর জীবনী (ছবি: ‘মান্টো’) থেকে এ বারে তিনি আমজনতার কথা বলেছেন। ছবির গতি বেশ ধীর। ফলে তা কারও ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতেও পারে। অন্য দিকে গল্পে শ্রমজীবীদের অধিকারের পক্ষে সভা বা বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতি পুলিশের আচরণ একটু আরোপিত মনে হয়। তবে নন্দিতা এবং সমীর পাটিলের চিত্রনাট্য কিন্তু শুধুই ডেলিভারি বয়দের লড়াইতেই থেমে থাকেনি। বরং তাঁদের চোখে সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণির ভিন্নতাকেও তুলে ধরেছে। রঞ্জন পালিতের ক্যামেরা ভুবনেশ্বরের অলিগলিকে সুন্দর ভাবে আবিষ্কার করেছে।
জীবনের সহজ-সরল গল্প বলার পাশাপাশি ‘জ়িগাটো’ প্রশ্ন তোলে। সেই সঙ্গে চিনিয়ে দেয় দৈনন্দিন জীবনে কয়েক মুহূর্তের জন্য আমাদের সংস্পর্শে আসা শ্রমজীবী মানুষদের লড়াইকে। দেখিয়ে দেয়, ওঁদের জীবন থেমে থাকে না।