Tollywood

Review: অন্তঃসারশূন্য ছবি

‘চিনি’র মিষ্টির চেয়ে অন্য ধাঁচের নিচু তারে বাঁধা চরিত্রটি সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন অপরাজিতা।

Advertisement
মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২১ ০৯:৫৮
একান্নবর্তী ছবির দৃশ্য।

একান্নবর্তী ছবির দৃশ্য।

একান্নবর্তী

পরিচালনা: মৈনাক ভৌমিক

Advertisement

অভিনয়: অপরাজিতা, অলকানন্দা, সৌরসেনী, অনন্যা, কৌশিক

৫/১০

রোম্যান্টিক কমেডি জ়ঁরের জনপ্রিয় পরিচালক মৈনাক ভৌমিক তাঁর শেষ কয়েকটি ছবিতে (থ্রিলার ছাড়া) বাঙালি আবেগের গল্প বলছেন। নতুন ছবি ‘একান্নবর্তী’কে মৈনাকের ‘জেনারেশন আমি’ এবং ‘চিনি’র জগতের অন্তর্ভুক্ত করে দেখা উচিত। কিন্তু হিটের হ্যাটট্রিকের বদলে ছবির সংলাপ ধার করে বলতে হয়, ‘এ বার পরিচালক ঘেঁটে ফেলেছেন।’

সিনেমার শেষে ডিসক্লেমার, ঋতুপর্ণ ঘোষকে উৎসর্গ করে এই ছবি। সেটাই যদি ছবি বানানোর মুখ্য উদ্দেশ্য হয়, তবে পরিচালকের একটু বেশি পরিশ্রম করা উচিত ছিল নাকি? দুর্গাপুজোর আবহে কয়েক প্রজন্মের একত্রিত হওয়া, পুরনো বাড়ির ভবিষ্যৎ নিয়ে টানাপড়েন, পুজোর দিনে প্রবীণ এক দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত সন্তানদের জানানো... পুজোময় বাঙালি অনেক কিছুই তো দেখে ফেলেছেন! এমনকি ঋতুপর্ণ ঘোষকে ট্রিবিউট জানিয়ে গত বছর ওটিটি প্ল্যাটফর্মে এসেছিল অভিনন্দন দত্তের ‘উৎসবের পরে’ সিরিজ়টি। এর পরেও মৈনাক যখন এমন বিষয়কে ছবির উপজীব্য বানিয়েছেন, তখন তা থেকে প্রত্যাশা থাকে খানিক বেশি। মৈনাকের গল্প এবং অরিত্র সেনগুপ্তের সংলাপে নতুনত্ব তো নেই। ছবিটি নিয়ে যে বিশেষ ভাবনাচিন্তা করা হয়েছে, তেমন ছাপও নেই।

গৃহবধূ মালিনী (অপরাজিতা আঢ্য) পুজোর দিনকয়েক আগেই জানতে পারে, তার স্বামী সুজন (সুদীপ মুখোপাধ্যায়) দুর্ঘটনায় আক্রান্ত। অফিস ট্রিপের বদলে বান্ধবীর সঙ্গে ঘুরে ফেরার পথে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে এই বিপত্তি। মালিনীর বড় মেয়ে শিলা (সৌরসেনী মৈত্র) চাকুরিরতা, বুঝদার। ছোট মেয়ে পিঙ্কি (অনন্যা সেন) নিজের চেহারা নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগে। মালিনীর মায়ের চরিত্রে অলকানন্দা রায়। পুজোর দিনে মালিনীর বাপের বাড়িতে (অলকানন্দার বাড়ি) একটি সিরিজ়ের শুট করতে আসে অভ্রজিৎ দত্ত (কৌশিক সেন)।

ছবির অন্তর্নিহিত ছবির শুট এবং সেই সূত্র ধরে সিনেমা এবং চরিত্রদের জীবনকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলার ট্রোপেও নতুন কিছু করেননি পরিচালক। একই বিষয় বারবার দেখানো যায় না, সেটা বলা উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু এই ছবি এতটাই দিশাহীন যে, কোনও ভাবেই গল্পটি গন্তব্যে পৌঁছয় না। আর পুজো বাদ দিয়ে একটু অন্য ধাঁচে এ গল্প ছোট পর্দার দর্শকের কাছে খুব চেনা ঠেকে!

ছবির পাঞ্চলাইন, ‘একান্ন নয়, এক অন্ন’। নামের তাৎপর্য ছবি জুড়ে স্পষ্ট নয়। একেবারে শেষে যে বিষয়টি দেখানো হয়, সেটাই যদি একমাত্র যোগসূত্র হয়, তবুও হোঁচট থেকে যায়। মৈনাকের ছবির চরিত্রে জেনারেশন আমি-সুলভ ব্যাপার থাকে। এই ছবিরও ইউএসপি সেটা। পিঙ্কির চরিত্র এবং তার সমস্যা বাস্তবসম্মত। সে চরিত্রে তুখোড় অনন্যা।

‘চিনি’র মিষ্টির চেয়ে অন্য ধাঁচের নিচু তারে বাঁধা চরিত্রটি সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন অপরাজিতা। অভিনেত্রী হিসেবে সৌরসেনী পরিণত হচ্ছেন। পার্শ্বচরিত্রে গৌরব রায়চৌধুরীকে ভাল লাগে। অলকানন্দা রায়কে সে ভাবে ব্যবহার করা হয়নি। কৌশিক সেন সুন্দর। প্রসেনের সঙ্গীত এবং লগ্নজিতা চক্রবর্তীর কণ্ঠে ‘বেহায়া’ ছবিশেষে মিষ্টিমুখের মতো!

ছবি বানানোয় প্রচেষ্টার চিহ্ন যেমন দর্শককে চিনিয়ে দিতে হয় না, তেমনই তার অভাবও দেখিয়ে দিতে হয় না। মালিনী ও শিলা নিজেদের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে একই সংলাপ বলে ‘ঘেঁটে ফেলেছি’। এ দিকে তাদের মধ্যে কত প্রজন্মের ব্যবধান! পরকীয়া সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য সুজন যে যুক্তি দেয়, তা কি ছোট পর্দা থেকেই ধার করা? ‘বাংলা সিনেমা কে দেখে?’র মতো সংলাপ বললেও, এখন আর ‘বং’ লাগে না। পরিচালকের ভাবনার ‘একান্নবর্তী’ বৃত্তের এ বার আপডেট প্রয়োজন!

Advertisement
আরও পড়ুন